আঃ রামু ডেস্কঃ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিরিক্ত ভর্তি, সেশন, টিউশন ফি ও এসএসসির ফরম পূরণে নেওয়া বাড়তি ফি ৭ দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
সচিবালয়ে বুধবার নিজ দফতরে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী।
অতিরিক্ত ফি নেওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে যারা অতিরিক্ত ফি নিয়েছেন, যারা ভর্তি নীতিমালা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত অর্থ নিয়েছেন তারা আগামী সাত দিনের মধ্যে সেই টাকা ফেরত দিয়ে বোর্ড এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) অবহিত করবেন। যাতে আমরা জানতে পারি এ সব প্রতিষ্ঠান আর অভিযুক্তের তালিকায় থাকবে না।’
সাত কর্মদিবস বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হবে বলেও জানান নুরুল ইসলাম নাহিদ।
তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের সম্মান ও মর্যাদা আছে। তারা যদি সাত দিনের মধ্যে টাকা দিয়ে দেন তবে বোঝা যাবে তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে আর তারা অসম্মানিত হবেন না।’
গত ৬ জানুয়ারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে শিক্ষা বোর্ড নির্ধারিত ফির বাইরে নেওয়া অতিরিক্ত অর্থ ২০ জানুয়ারির মধ্যে ফেরত দিতে বলেছেন হাইকোর্ট। অন্যথায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি বাতিল হবে। কমিটির এ সদস্যরা তিন বছরের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে (বাড়তি ফি ফেরত) হাইকোর্টের নির্দেশনা দেওয়া আছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ আছে। যদি তারা এটা (টাকা ফেরত দেওয়া) না করেন আমরা ব্যবস্থা নেব। কারা বর্ধিত ফি ফেরত দেয়নি তা বোর্ডগুলো আমাদের জানাবে।’ ‘কারো ব্যাপারে আর নমনীয়তা দেখানো সম্ভব নয়। কঠোর অবস্থান নিয়েই আমরা এটা মোকাবেলা করব। এটা নিয়ে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন, অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। এ ধরনের বিষয় চলতে দেওয়া যাবে না। আমরা সকলের তালিকা চাই, সকলের টাকা ফেরত দিতে চাই’ ।
বর্ধিত বেতন ও ফি আদায় না করার নির্দেশনা দিয়ে গত ১৭ জানুয়ারি একটি আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ওই আদেশে বলা হয়, ২০০৯ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি) প্রবিধানমালা অনুযায়ী সরকারের নির্দেশনা সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্যদকে বেতন ও ফি’র হার নির্ধারণ করবে। এ প্রেক্ষাপটে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বর্ধিত বেতন ও অন্যান্য ফি আদায় অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয় আদেশে।
শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘চাপ প্রয়োগের সঙ্গে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হবে। এছাড়া এমপিও বাতিল করতে পারি, স্কুলের অনুমোদন কেটে দিতে পারি।’
বিগত বছরগুলোতে বর্ধিত টাকা ফেরত নিতে গিয়ে অভিভাবকরা অপমানিত ও হয়রানির শিকার হয়েছেন- এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কই কেউ তো আমার কাছে অভিযোগ করেনি। একটা অভিযোগও আমরা পাইনি। অতিরিক্ত ফি নেওয়া হচ্ছে, কোন অভিভাবক এটা আমাদের জানান না। জানালে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে যেতে পারি।’
অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়মের বেশি অর্থ দাবি করলে সবাই মিলিত হয়ে সেই অর্থ দিবেন না। আমাদের কাছে অভিযোগ করবেন। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যা যা করার আমরা করব।’
বেসরকারি স্কুল কলেজে ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সর্বসাকুল্যে মফস্বল এলাকায় ৫০০ টাকা, পৌর (উপজেলা) এলাকায় এক হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দুই হাজার গ্রহণ করা যাবে। ঢাকাসহ অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকার বেশি হবে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ভর্তির ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকার বেশি অর্থ আদায় করা যাবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং এমপিও বহির্ভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য শিক্ষার্থীর ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশনচার্জ ও উন্নয়ন ফিসহ বাংলা মাধ্যমে আট হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে ১০ হাজার টাকার বেশি গ্রহণ কর যাবে না বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু ঢাকার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নীতিমালার তোয়াক্কা করছে না, ভর্তিতে কয়েকগুণ বেশি অর্থ আদায় করছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।