অনলাইন ডেস্ক :
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় মসজিদের জন্য এক হিন্দু অধ্যাপক আর শ্মশানের জন্য এক মুসলমান রাজনীতিবিদ জমি দান করে প্রশংসিত হয়েছেন।
জমিদাতা দুজন হলেন ফকিরহাট আজাহার আলী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রণব কুমার ঘোষ এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মিজানুর রহমান।
সম্প্রতি জেলায় আয়োজিত এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলনমেলায় বিষয়টি আলোচনায় এলে ব্যাপকভাবে প্রচার হয়।
ফকিরহাটের উপর দিয়ে কয়েক বছর আগে খুলনা-মাওয়া মহাসড়ক চালু হলে ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের আট্টাকি গ্রামের মোড়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এর নাম হয় বিশ্বরোডের মোড়।
এ উপজেলার ওপর দিয়ে এখন ১৮ জেলার মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করে। বিশ্বরোডের মোড়ে গড়ে উঠেছে বাসস্ট্যান্ড ও বহু দোকানপাট।
সেখানে কোনো মসজিদ না থাকায় স্থানীয়রা বিশ্বরোডের মোড়ের এক জমির মালিক প্রণব কুমার ঘোষের কাছে জমি চেয়েছিলেন। প্রণব ঘোষ রাজি হয়ে যান এবং মসজিদের জন্য জমি দান করেন।
শুরুতে সেখানে গড়ে ওঠে ছোট নামাজ ঘর। পরে ৪০ শতক জমির ওপর দ্বিতল মসজিদ ভবন নির্মিত হয়।
অন্যদিকে, ফকিরহাট উপজেলা সদরের ভৈরব নদের তীরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানটি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। ওই শ্মানের পাশের জমির মালিক শেখ মিজানুর রহমান হিন্দুদের জমি দেন নতুন শ্মশান করার জন্য।
মসজিদে জমিদাতা কলেজ শিক্ষক প্রণব কুমার ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্বরোড হওয়ায় এখানে অনেক দোকানপাট খুলেছে। আমার জমিতেও ৪০/৫০টি দোকান ঘর হয়েছে। এখানকার দোকানদাররা নামাজ পড়তে সমস্যায় পড়ছিলেন। তখন তারা আমার কাছে জায়গা চাইলে আমি মার্কেটের পেছনে জায়গা দিই।
“একে অপরের সাথে সম্প্রীতি রেখেই আমরা চলছি। এখানে মসজিদ গড়ে ওঠার আগে যেমন সম্প্রীতি ছিল এখনও তেমনই আছে। কখনও নষ্ট হবে না।”
মসজিদের মুয়াজ্জিন গাউস শেখ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রণব ঘোষের বাল্যবন্ধু মনিরুজ্জামান বাবলু স্থানীয়দের নামাজ পড়ার সমস্যার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলেন। তার কথাতেই রাজি হয়েছিলেন প্রণব ঘোষ।
“প্রণব স্যার শুধু জমি দেননি, এই মসজিদটির কথা ভাবেন, মসজিদের সুবিধা-অসুবিধার খোঁজ নেন। মসজিদের অনুষ্ঠানে তাকে দাওয়াত দিলে তিনি চলে আসেন, আমরা একসাথে খাওয়াদাওয়া করি। মসজিদে ঈদগাহ, মহিলাদের নামাজের আলাদা জায়গা করতে যতটুকু জমির প্রয়োজন তা তিনি দিয়েছেন।”
আর শ্মশানের জমিদাতা শেখ মিজানুর রহমান বলেন, “এখানে আমরা হিন্দু মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে আসছি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানটি নদী ভাঙনে বিলীন হলে তাদের শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতায় সমস্যা হচ্ছিল। মহাশশ্মানটির পাশেই আমার জমি ছিল। স্থানীয় হিন্দুরা জমি চাইলে আমি দিয়ে দিই।
সাবেক এই জনপ্রতিনিধি জানান, জমির জন্য একটি সম্প্রদায়ের মানুষ শেষকৃত্য করতে পারবে না- এই চিন্তা তাকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছিল।
তিনি বলেন, “আমরা এখন যেমন সম্প্রীতির মধ্যে এখানে বসবাস করছি, আগামী দিনেও এভাবেই বসবাস করতে চাই।”
সম্প্রতি বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা সদরের আট্টাকি গ্রামে আন্তর্জাতিক সংগঠন দি হাঙ্গার প্রজেক্ট সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলনমেলার আয়োজন করে। সেই আয়োজনে এই দুজনের জমিদানের বিষয়টি উঠে আসে।
হাঙ্গার প্রজেক্টের সমন্বয়কারী খান মাহমুদ আরিফুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সম্প্রীতি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। এ এলাকার দুই ধর্মের দুইজন মানুষ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জন্য জমিদান করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তারা এ কাজটি করে সম্প্রীতির যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, তা আগামী প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাশ বলেন, তাদের এই দুটি কাজ এলাকার মানুষ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এ ধরনের উদ্যোগে উদ্বুদ্ধ করবে বলেই তার বিশ্বাস।
সূত্র : বিডিনিউজ