শহিদুল ইসলাম, উখিয়া।
কক্সবাজারের উখিয়ায় দুই প্রভাবশালী মহলের প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিথ্যা, হয়রানিমূলক হত্যা মামলায় আসামী হয়ে অনেক নিরহ লোকজন আতংকে পালিয়ে বেড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
একই মামলায় আসামী হয়ে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দুই মেধাবী শিক্ষার্থীর।
এ ঘটনা পুলিশ তদন্ত করে মাসাধিকাল পার করলেও কোন রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় স্থানীয় পরিবেশ পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি হয়ে দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, ছুরিকাঘাতের মতো ঘটনায় বালুখালী গ্রামে বিরাজ করছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা।
পাশাপাশি পুলিশী গ্রেফতার আতংকে জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
উখিয়া থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী জুমের ছড়ার গহীন অরণ্য থেকে একটি গলিত লাশের কংকাল পুলিশ উদ্ধার করে। অজ্ঞাতনামা এ কংকালের কোন পরিচয় উদঘাটন করতে না পেরে পুলিশ ময়না তদন্ত শেষে কক্সবাজারে বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে দাফন করে।
এ ঘটনাকে পুঁজি করে বালুখালীর একটি প্রভাবশালী ইয়াবা সিন্ডিকেট উদ্ধারকৃত কংকালটি বালুখালী শিয়াইল্যাপাড়া গ্রামের মৃত অছিয়র রহমানের ছেলে আলমগীর প্রকাশ- ভুলুর দাবি করে ভুলুর স্ত্রী গার্মেন্টস্ কর্মী ও ইয়াবা পাচারকারী রুজিনা আকতারকে ব্যবহার করে উখিয়া থানায় মামলা করার চেষ্টা করে, সেখানে ব্যর্থ হয়ে কক্সবাজার আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় ২ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী আকবর আহমদ সহ ২১ জন নিরহ লোকজনকে আসামী করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে ঘটনাস্থল বালুখালী শিয়াইল্যাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তালাবদ্ধ আলমগীর ভুলুর বাড়িটি হাহাকার করছে।
এ সময় উপস্থিত স্থানীয় পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফজলুল কাদের ভুট্টো, কথিত নিহত আলমগীর ভুলুর মামা আব্দুল হক (৬০), বড় চাচা বদিউর রহমান সিকদার (৫৫), বড় খালা চেমন বাহার (৫২) সহ অসংখ্য লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে আমাদের রামুকে বলেন, প্রতিপক্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী এলাকায় তার কর্তৃত্ব ও প্রভাব প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আলমগীর ভুলুর কোন আত্মীয় পরিজন না হওয়া স্বত্ত্বেও গার্মেন্টস্ কর্মী ও ইয়াবা পাচারকারী রুজিনা আক্তাকে বাদি সাজিয়ে উখিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী বালুখালী গ্রামের বদিউর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান ও গোলাম কাদেরের ছেলে জয়নাল আবেদীন, আলমগীর ভুলুর আপন ছোট ভাই জিয়াবুল হক, স্থানীয় ব্যবসায়ী আকবর আহমদ সহ ২১ জনকে হত্যা মামলায় জড়িত করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
হত্যা মামলার আসামী হয়ে অন্যান্য আসামীদের মত উক্ত দুই এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে আত্মগোপন করতে হয়েছে। ফলে তাদের আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা চরমভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
গ্রামবাসী ও উল্লেখিত নিকটাত্মীয়দের মতে, ১ জানুয়ারি গহীন জঙ্গল থেকে অজ্ঞাত কংকাল উদ্ধার ঘটনার ৫ দিন পূর্বে কথিত আলমগীর ভুলু স্বপরিবারে তার ঘরের আসবাবপত্র ও অন্যান্য মালামাল নিকটাত্মীয়দের নিকট বিক্রি করে প্রতিপক্ষ ইন্দনদাতা ইয়াবা ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন অটোরিক্সা যোগে এলাকা ত্যাগ করেছেন।
স্থানীয় সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী বদিউর রহমান জানান, আলমগীর ভুলুর কোন রকম নিকটাত্মীয় না হওয়া স্বত্ত্বেও মামার চেয়ে মাসির দরদ দেখিয়ে প্রতিপক্ষ তাদের মামলায় ফাসানোর জন্য প্রতিনিয়ত লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে প্রশাসনে দেন দরবার চালাচ্ছে কথিত মামলায় অভিযুক্ত আসামীদের গ্রেফতার করার জন্য। তিনি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করার জন্য পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হাবিবুর রহমানিআমাদের রামুকে জানান, মামলাটি স্পর্শকাতর হওয়ার কারণে দীর্ঘ তদন্তেও তেমন কোন অগ্রগতি না হওয়ায় অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি পুলিশের পিবিআই শাখায় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
পাল্টাপাল্টি মামলায় নিরহ লোকজনের পাশাপাশি দুই মেধাবী ছাত্রকে আসামী করার ঘটনা নিয়ে এলাকায় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের মাঝে প্রচন্ড ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।