শহিদুল ইসলাম, উখিয়া।
কক্সবাজারের উখিয়া ও রামুতে যৌথ মানব পাচারকারী একটি সিন্ডিকেটের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় হতবাক করেছে প্রতিবেশী লোকজনকেও।
মালয়েশিয়া ভিত্তিক ওই মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটে সক্রিয় দায়িত্ব পালন করে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করার ঘটনার কথা বেরিয়ে আসায় ভুক্তভোগী প্রতারিত লোকদের রোষানল থেকে রেহাই পেতে গাঁ ঢাকা দিয়েছে জড়িতরা।
প্রতারণার এ ঘটনায় জড়িত রয়েছে খোঁদ স্বামী-স্ত্রী ও শ্যালকদের সিন্ডিকেট। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার জন্ম দিয়েছে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের উখিয়ার ঘাট তেলীপাড়ার দরিদ্র নবী হোছন, তার স্ত্রী রোজিনা আকতার ও তাদের এজেন্ট শ্যালক আবদুল খালেক গং।
শুধু মানবপাচারে সীমাবদ্ধ নয় ইয়াবা পাচার সহ বহুমুখী অপকর্মেরও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে সামী-স্ত্রী ও শ্যালক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।
মানবপাচারের মুল এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে নবী হোছনের শ্যালক ও স্ত্রী রোজিনা আকতারের আপন সহোদর রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের কেচুবনিয়ার মৃত আলী আহাম্মদের পুত্র আবদুল খালেক সহ ৩ ভাই। তারাও মালয়েশিয়া গিয়ে শক্তিশালী পাচারকারী সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে দেশে ফিরে মানবপাচারে জড়িয়ে এলাকার হত দরিদ্র অনেকের লাখ-লাখ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে।
আবদুল খালেকের মালয়েশিয়া ফেরত আরো দুই সহোদর ভাই আবদুল মালেক ও আবদুর রশিদ নিজ এলাকায় অবস্থান করে পাচার যজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে লোকচক্ষুঁর আড়ালে।
৩ ভাই-ই মানব পাচার মামলার আসামী হয়ে আবদুল মালেক জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে বীরদর্পে পাচার যজ্ঞ ফের চালিয়ে যাচ্ছে । অপর ২ ভাই আবদুল খালেক ও আবদুর রশিদ মানববপাচার মামলার ফেরারী আসামী।
পরিবারের দারিদ্রতার কষাঘাত দুর করে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে আবদুল খালেক, আবদুল মালেক ও আবদুর রশিদ মালয়েশিয়া পাড়ি জমান। পরবর্তীতে তারা মানবপাচারের সকল কলাকৌশল শিখে দেশে ফিরে পাচারের জড়িয়ে পড়ে।
নিজ এলাকা ছাড়িয়ে অন্য এলাকা থেকেও লোক যোগাড়ে শাখা লোক ভিড়ান। মালয়েশিয়া পাঠানোর লোক যোগাড়ে দায়িত্ব দেন খোঁদ আপন বোন রোজিনা আকতার ও ভগ্নিপতি উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ১নংওয়ার্ডের উখিয়ার ঘাট তেলীপাড়ার মৃত ওলা মিয়ার পুত্র নবী হোছনকে।
নবী হোছন ও রোজিনা আকতার কৌশলে প্রলুদ্ধ করেন নবী হোছনের আপন সহোদর ভাই নুরুল আলম পুতিঁয়াকে। তাকে নিরাপদে মালয়েশিয়া নিয়ে বেশি বেতনের কাজ দেবে এমন সরল বিশ্বাসে ফাদেঁ ফেলে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নেন রোজিনা আকতার ও নবী হোছন। হাতিয়ে নেওয়া ওই টাকার সিংহভাগ তুলে দেন রামুস্থ মুল এজেন্ট রোজিনার ভাই আবদুল খালেকের হাতে।
টাকা গ্রহণের মাসের মধ্যকার সময়ে নুরুল আলম পুতিঁয়াকে নিরাপদে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা থাকলেও দুই মাস গতেও পাঠাতে না পারায় টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে বেরিয়ে আসে রোজিনা আকতার,নবী হোছন ও আবদুল খালেক মানবপাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য।
দরিদ্রবেশে নবী হোছন গাড়ীর শ্রমিক, কৃষিকাজ, দিনমজুর কামলা আবার কখনো ক্ষুদ্র ব্যবসা করেন। কোন সময় কি কাজ করে তার কোন সঠিক অবস্থান না থাকলেও শাশুড় বাড়ীর খুনিয়া পালংয়ের কেচুবনিয়ায় জায়গা-জমি ক্রয়, গরু-ছাগল, ক্ষেত খামার আর সুদের মুলে টাকা লাগিয়ত ও সরকারি সামাজিক বনায়ন সৃজিত বন বিভাগের জায়গা জবর দখল আর নামে বেনামে অনেক সম্পদ গড়েছেন।
প্রশাসনের চোখঁ ফাঁকি আর লোকচক্ষুর আড়ালে ইয়াবা ও মানবপাচার ছাড়াও স্বামী-স্ত্রী দুজনই প্রত্যেক্ষ আর পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন বহুমুখী অপকর্মে।
নবী হোছনদের আসল চরিত্রের মুখোশ উম্মোচন হয় ভাই পুতিঁয়া থেকে মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে টাকা আত্মসাৎ করার পর। পুতিঁয়াকে মালয়েশিয়া পাঠাতে ব্যর্থ এবং প্রদত্ত টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি ও সময় ক্ষেপন করায় ঘটনার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে পুতিঁয়ার টাকা চাওয়া আর স্থানীয়ভাবে নালিশ দায়েরের ফলে।
পুতিঁয়ার নিকট থেকে রোজিনা আকতার ও নবী হোছন নিজেদের জিম্মায় এককালীন নগদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন মালয়েশিয়া পাঠানোর অঙ্গীকার করে। বেধে দেওয়া সময়ে পুতিঁয়াকে মালয়েশিয়া পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ায় দীর্ঘ ২/৩মাস গত হওয়াতে পুতিঁয়ার পীড়াপিড়িতে একসময় রোজিনা আকতার আত্মগোপনে চলে যান। অন্তত মাস দেড়েক পর দেবর নুরুল আলম পুতিঁয়াকে টাকা ফেরত দিতে সম্মত হয়ে এলাকায় ফিরে আসেন।
গত ১৩ জানুয়ারি নিজেদের মধ্যে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তিকে নিয়ে রোজিনা সপ্রনোদিত বৈঠকে বসে দেড় লাখ টাকার মধ্যে পুতিঁয়ার নিকট থেকে ৩০ হাজার টাকা মওকুপ চেয়ে অবশিষ্ট ১লাখ ২০হাজার টাকা ফেরত প্রদানে সম্মত হয়ে এক মাসের সময় নিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করে ৩ শত টাকা মুল্যমানের নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অংঙ্গীকারনামা সম্পাদনে শিরোভাগে স্বাক্ষর করেন।
পুতিঁয়ার নিকট টাকা প্রদানের ১৫ ফেব্রুয়ারি গত হওয়ায় ২১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় পালংখালী ইউপির ১নং ওয়ার্ড মেম্বার বরাবর নালিশ দায়ের করেন ভুক্তভোগী নুরুল আলম পুতিয়াঁ।এর প্রেক্ষিতে মেম্বার আবদুর রহিম রাজা গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ১ম বৈঠক এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি ২য় শালিশ বৈঠক আহবান করলে অভিযুক্ত রোজিনা আকতার, নবী হোছন ও আবদুল খালেক অনুপস্থিত থাকলেও নালিশকারী পুতিঁয়া সাক্ষ্য প্রমাণাদি নিয়ে হাজির থাকেন। পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ শালিস বৈঠকে পুতিঁয়া ও অভিযুক্তদের মধ্যে একমাত্র রোজিনা আকতার উপস্থিত থেকে পুতিঁয়ার নিকট থেকে নেয়া টাকা ফেরত প্রদানে সম্মত হয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি নগদ ২০ হাজার এবং অবশিষ্ট ১ লাখ টাকা পরবর্তী ১৫ দিন সময়ের ভেতর ২ কিস্তিতে পরিশোধ করার মৌখিক অংঙ্গীকার করে উল্টো টাকা না দিয়ে সহায় সম্পদ গোপনে সরিয়ে এলাকা থেকে গাঁ ঢাকা দিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনই আত্মগোপন করে আছেন।
মেম্বার আবদুর রহিম রাজা জানান, হাওলাতি টাকার লিখিত স্ট্যাম্প দেখেছি। তবে টাকা দিয়েছিল মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি হাবিবুর রহমান আমাদের রামুকে জানান, ইয়াবা ও মাদক এবং মানবপাচারের বিরুদ্ধে পুলিশ সদা সতর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এদিকে ধারদেনা করে পরিবারের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফেরাতে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে সরল বিশ্বাসে আপন ভাই-ভাবীর হাতে তুলে দেওয়া ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার কর্জের বোঝা নিয়ে চরম অর্থকষ্ট আর খেয়ে না খেয়ে দু:র্বিহ দিনরাত পার করছেন পুতিঁয়া। দেনাদারের পীড়াপিড়িতে অনেকটা লুকিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে পুতিঁয়াকে।
লভ্যাংশমুলে গ্রহণ করা টাকার পরিমাণ দিনদিন বাড়তে থাকায় আরো বেশি দুশ্চিন্তা আর হতাশায় ভেঙ্গে পড়েছেন মালয়েশিয়া দালালদের খপ্পরে পড়া ভুক্তভোগী যুবক নুরুল আলম পুতিঁয়া। তাই তিনি এসব দালালদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।