আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী বাংলাদেশে সক্রিয় বলে প্রমাণ করার চক্রান্তের বিষয়ে দেশবাসীকে সজাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
“অনেকে চাইবে, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস আছে দেখিয়ে দেশটাকে নিয়ে খেলতে। আমি বেঁচে থাকতে এই দেশকে নিয়ে কাউকে খেলতে দেব না,” সংসদে বলেছেন তিনি।
বাংলাদেশের জঙ্গিরা বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বলার প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার দশম সংসদের দশম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
গত এক বছর ধরে লেখক, প্রকাশক, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট, বিদেশি, যাজক, পুরোহিত হত্যাকাণ্ডের বেশ কয়েকটি ঘটনায় আইএস ও আল কায়দার নামে দায় স্বীকারের বার্তা আসে।
আইএস ও আল কায়দার পাশাপাশি তালেবান যেসব দেশে অস্তিত্বশীল, সেসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের নজির রয়েছে।
বাংলাদেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইন্টারনেটে আসা এসব দায় স্বীকারের বার্তাকে ভুয়া বলে উড়িয়ে দিয়ে সরকার বলছে, দেশি জঙ্গিরাই খুন করে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর নামে বার্তা ছড়াচ্ছে।
সন্দেহভাজন জঙ্গিদের হামলায় ইউএসএআইডির কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান হত্যাকাণ্ডের পর পরিস্থিতি দেখতে ঢাকায় আসা যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী মন্ত্রী বিসওয়াল বৃহস্পতিবার বলেন, বাংলাদেশি জঙ্গিরা বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলছে বলে তারা মনে করছেন।
গত ২৫ এপ্রিল ঢাকার কলাবাগানে বাড়িতে জুলহাজ ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কে কুপিয়ে হত্যার পর আল কায়দার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার নামে বার্তা এসেছিল।
তবে পুলিশ বলছে, নিষিদ্ধ বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিম এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে তারা ধারণা করছে।
সন্ত্রাস দমনে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, “আমাদের এই মাটিতে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের স্থান নেই … সন্ত্রাস দমনে যথেষ্ট কঠোর পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি।”
ধর্মের নামে হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, “একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে হত্যা করে বেহেশতে যেতে পারবে না, দোজখে যেতে হবে। কারণ, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম হত্যার লাইসেন্স দেয় না।”
অপরাধ রোধে ভাড়াটিয়ার তথ্য সংরক্ষণে বাড়িওয়ালের সজাগ করেন সরকার প্রধান।
সব নাগরিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও শহরে সকলে যেন সজাগ থাকেন। কারও ছেলে-মেয়ে যেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত না হয়।”
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে দায়ী করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন দেশটা ছিল হত্যা-খুন, দুর্নীতি আর সন্ত্রাসের দেশ।”
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সহিংসতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তারা অনেক মানুষকে গৃহহারা করেছে। কত মেয়ে গ্যাং রেইপ হয়েছে।”
বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে দেখিয়ে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, “এখানে উপস্থিত মাননীয় বিরোধীদলীয় নেতাও তাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদেরকে সে সময় জেলে পুরে রাখা হয়েছিল।”
প্রধানমন্ত্রী সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও সাংসদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
নিজের উপর ২০০৪ সালের ২১ অগাস্টের হামলার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি বেঁচে গেলেও আমাদের নারীনেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন মারা গেছেন।”
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“২০১৩ সালে সরকার উৎখাতের নামে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছিল। ২০১৪ ও ১৫ সালে প্রায় পাঁচশর কাছাকাছি মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। প্রায় দুই হাজার মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। প্রায় আড়াই হাজার বাস-ট্রাক ও রেল পুড়িয়েছে।”
[বিডিনিউজ]