খালেদ শহীদ:
কক্সবাজার জেলার সব্যসাচী লেখক কবি আশীষ কুমারের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী আজ ২২ মে। গত বছরের এ দিনে (২২ মে) কক্সবাজার জেলার বরণ্যে কবি আশীষ কুমার পরলোক গমন করেন। পরদিন ২০১৫ ইংরেজির ২৩ মে বিকাল সাড়ে ৫টায় রামুর জাদি পাহাড়ের পাদদেশে স্বজন ও ভক্ত-অনুরাগীরা দাহকক্রিয়ার মাধ্যমে প্রিয়জন বরেণ্য কবি আশীষ কুমারের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন।
কবি আশীষ কুমারের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সকালে রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের পশ্চিম মেরংলোয়া বড়ুয়া পাড়ায় প্রয়াতের বাড়ি কবিকুঞ্জে সংঘদান, অষ্ট পরিষ্কার দান ও ধর্মালোচনা সভা আয়োজন করা হয়।
ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও কবি স্মরণ অনুষ্ঠানে ধর্মালোচনা করেন, ক্ষ্যান্তিপাঞা ভিক্ষু।
আমি কবি, আমাতে জন্মলব্ধ কবি সত্তার অধিকারী আমি নই, তোমরা। আমি তাই দ্বিধাহীন কন্ঠে উচ্চারণ করি আমি তোমাদের, আমি তোমাদের কবি। তোমরাই আমার সত্তার প্রজন্মের ঔরষ, আমার সমস্ত কৃতিত্ব যশের পিতা। আমি আমার নিবেদিত কবি সত্তা দিয়ে পিতৃসেবা করি, সমস্ত পিতার দুঃখ অপনোদনের চেষ্টা করি, শৃংখল মুক্তির কথা বলি; তোমাদের জাগতিক কল্যাণে উৎসর্গীত আমার কবিতা এবং আমি। আমি কবি আমি কবিতার কথা বলি, আমি তোমাদের কথা বলি। আমার অন্তিম মুহুর্তেও আমি য্যান নিজের কথা না বলি। কবিতার কথা বলতে বলতে আমার মৃত্যু হোক, তোমাদের কথা বলতে বলতে আমার মৃত্যু হোক।
‘কবিকন্ঠ’ কবিতার কথার মতোই এ ভাবে কবিতার কথা বলতে বলতে, মানুষের কথা বলতে বলতে এক বছর আগে না ফেরার দেশে চলে গেছেন, কক্সবাজারের সব্যসাচী লেখক কবি আশীষ কুমার।
কক্সবাজার জেলার শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে কবি আশীষ কুমার সব্যসাচী লেখক হিসেবে পরিচিত এক নাম। তাঁর পরিচয়ের জন্য অন্য কোন বিশেষণের দরকার হয়না। তিনি একাধারে কবি, ছড়াকার, গল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার, উপনাসিক, চিত্রশিল্পী ও অভিনয় শিল্পী।
কৃতি ফুটবলার হিসেবেও তাঁর অনেক খ্যাতি ছিল। নব্বই এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তাঁর লেখা নাটক ছিল দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম হাতিয়ার।
তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্বাসী নির্ভীক এক শব্দ সৈনিক। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নিজ হাতে পোষ্টার লিখে, দেয়াল লিখন লিখে স্বাধীনতাকামী মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি।
কক্সবাজার জেলার নাট্যাঙ্গনের কিংবদন্তী অভিনয় শিল্পী প্রয়াত দীনেশ বড়ুয়া ও প্রয়াত বীণাপানি বড়ুয়ার দ্বিতীয় ছেলে আশীষ কুমার বড়ুয়া।
তাঁর চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘মাথা নত করবো কেনো’ ও ‘সূর্য সত্য শেখ মুজিব’ নামকরণে দু’টো কাব্যগ্রন্থ, ‘চেনা তবু অচেনা’ নামকরণে একটি উপন্যাস প্রকাশ করে চিন্তন প্রকাশন কক্সবাজার এবং গল্পের বই ‘এক পলকের দেখা’ প্রকাশিত হয় করে চট্টগ্রামের বলাকা প্রকাশন থেকে।
‘মর শালা পাবলিক’ ও ‘এ লাশ ঢাকা আসবেই’ নামে তাঁর কালজয়ী নাটক মতো প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত প্রায় পাঁচ হাজার ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক, গল্প, উপন্যাস এখনো বই আকারে প্রকাশ পায়নি।
কবি আশীষ কুমার নাটক লিখেছেন চল্লিশটি। তার মধ্যে একত্রিশটি মঞ্চস্থ হয়েছে। তাঁর লেখা গানের সংখ্যাও প্রায় তিন হাজার। পাঁচ শতাধিক গান বাংলাদেশ বেতার, কক্সবাজার কেন্দ্রে রেকডিং ও প্রচার হয়েছে।
তাঁর চৌদ্দটি উপন্যাস, দশটি গল্প ও একটি প্রবন্ধের পান্ডুলিপি এখনো প্রকাশিত হয়নি। লিখেছেন অসংখ্য মানপত্র।
কবি আশীষ কুমার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রালয়ের গণ গ্রন্থাগার অধিদপ্তর কর্তৃক ১৯৮৮ ইংরেজিতে গল্পের জন্যে, ১৯৮৯ ও ১৯৯০ ইংরেজিতে নাটকের জন্যে এবং ১৯৯০ ইংরেজিতে কবিতার জন্যে ‘একুশে সাহিত্য’ পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন।
আর্থিক দৈনতার মধ্যেও কবি আশীষ কুমার কখনো সৃজনশীল কর্মকান্ডে নিরব থাকেননি। তাঁর সৃষ্টিশীল কর্মকান্ডে সবসময় সরব থাকতেন রামু-কক্সবাজারের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন।
আজকের প্রজন্মের কাছে কবি আশীষ কুমার অনুকরণীয় হয়ে আছেন। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে কক্সবাজারের বিপ্লবী নাট্যকার, সব্যসাচী লেখক কবি আশীষ কুমারের মৃত্যু কক্সবাজার সাহিত্যাঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে জানান জেলার সাহিত্যিকরা।