গত প্রায় দেড় বছরে জঙ্গিদের পরিকল্পিত হামলায় নিহত ব্যক্তিদের প্রায় অর্ধেকই সংখ্যালঘু। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা প্রথম আলোর মুখোমুখি হয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিশেষ প্রতিনিধি শরিফুজ্জামান
১৪ দলের প্রধান সমন্বয়কারী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, সংখ্যালঘুদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে দলের মাঠপর্যায়ের নেতা ও স্থানীয় সাংসদদের বলা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ধর্মীয় উপাসনালয় ও সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা দিচ্ছে। ১৪ দলের পক্ষ থেকে আজ যে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে, সেখানেও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদ করা হবে। তবে তিনি বলেন, সংসদ অধিবেশন চলায় সাংসদেরা ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ জন্য তাঁরা এলাকায় সশরীরে থাকতে পারছেন না।
আওয়ামী লীগের ওই নেতার মতে, সরকারকে বিব্রত করতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। সরকার এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কোনো হামলাকারী রেহাই পাবে না। ৫ মের সরকার উৎখাত, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করা, ৯০ দিন ধরে মানুষ পুড়িয়ে মারাসহ সব পরিস্থিতি সরকার দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছে। এখনকার এই গুপ্তহত্যাও সরকার প্রতিরোধ করবে।
সংখ্যালঘু ইস্যুতে সরকারকে দায়ী করার কোনো সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের অবস্থানও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ কেবল বাংলাদেশেরই নয়, এটা এখন বৈশ্বিক সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে এসব ঘটনা ঘটছে। সব দেশের মতো বাংলাদেশও এটা প্রতিরোধের চেষ্টা করছে।
এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত, জানতে চাইলে সরকারি দলের শীর্ষস্থানীয় ওই নেতা বলেন, গুপ্তহত্যায় জামায়াত-শিবিরের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। একটি বড় দল তাদের পেছনে থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা সময় লাগছে। তবে পুলিশ ও প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর।
জঙ্গিবাদ বিষয়ে বিএনপির আলোচনার প্রস্তাব প্রসঙ্গে নাসিম বলেন, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে জঙ্গিবাদ নিয়ে বিএনপির আলোচনার প্রস্তাব হাস্যকর। তবে তারা জামায়াতের সঙ্গ ছেড়ে এলে আলোচনার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ার কারণ সম্পর্কে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দেশে বড় ধরনের একটি বিচার চলছে। বিএনপি-জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়নি। কারণ, এই বিচারে তারাই সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই তারা চুপ করে বসে থাকবে, এটা আশা করা যায় না।
তিনি মনে করেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, এখনকার পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে তাদের হাত আছে। তারাই নানাভাবে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এর অংশ হিসেবে তারা কাপুরুষোচিত গুপ্তহত্যা শুরু করেছে। এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে যাতে হইচই বেশি হয়, সে জন্য সংখ্যালঘুদের হত্যা করা হচ্ছে।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দেশে অশুভ শক্তি আছে—এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। চাইলেই এই শক্তিকে রাতারাতি নির্মূল করা যাবে না। তবে সহসাই তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।
[প্রথম আলো]