মেঘ জমে থাকা পাহাড়চূড়া আর ঝিরি ঝরনার প্রশান্ত সৌন্দর্যের মধ্যে সমাহিত হতে চাইলে বান্দরবান আসতেই হবে। ঈদের টানা ছুটিতে দুর্গম পাহাড়ি পথে ট্র্যাকিংয়ের জন্য অনেক অ্যাডভেঞ্চার–প্রিয় তরুণ এখনই এক পা বাড়িয়ে রেখেছেন। বান্দরবান নিশ্চিতই তাঁদের পছন্দের তালিকায় এক নম্বরে থাকবে।
জেলার নীলাচল থেকে নীলগিরি, মেঘলা থেকে মিরিঞ্জা পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। রুমা উপজেলার বগা লেক, কেওক্রাডং, তাজিংডং পাহাড় কিংবা থানচির নাফাকুম, তিন্দু ও রেমাক্রিতে নিসর্গের মাঝে হারিয়ে যাওয়া যাবে। জেলার আকর্ষণীয় আরও একটি দিক জাতিগত বৈচিত্র্য। পার্বত্য এলাকার ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সব কটিরই অবস্থান রয়েছে এই জেলায়। তবে ঠিকঠাক পরিকল্পনা না থাকলে বান্দরবানে বেড়ানো মাটিও হতে পারে।
ঈদে যাঁরা বান্দরবানে আসবেন, তাঁরা কত দিন থাকবেন এবং কোথায় কোথায় যাবেন, তা আগে থেকে ঠিক করে রাখলে ভালো। এক দিনের জন্য এলে শহরের দর্শনীয় স্থান এবং শহরের বাইরের কিছু এলাকায় বেড়ানো যেতে পারে। শহরের কাছাকাছি এবং শহরের মধ্যে অবস্থিত নীলাচল ও মেঘলা পর্যটনকেন্দ্র এবং শৈল প্রপাত ঘুরে দেখতেই সারা দিন কেটে যাবে। যাঁরা বেশ কয়েক দিনের জন্য আসবেন, তাঁদের গন্তব্য হতে পারে রুমা হয়ে বগা লেক ও কেওক্রাডং অথবা থানচির নাফাকুম এবং এর আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো। এসব গন্তব্যে যাওয়ার পথে পড়বে চিম্বুক ও নীলগিরি পর্যটনকেন্দ্র। এই দুই স্থানের মেঘে ঢাকা পাহাড়চূড়া আর ছিমছাম বাংলোবাড়ির আকর্ষণে দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকেরা ছুটে আসেন।
বান্দরবান শহরের কেচিংঘাটা থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগও আছে। নদীপথে ঘণ্টা খানেকের ভ্রমণে চোখে পড়বে দুপাশের খাড়া পাহাড়সারি, খেতখামার ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পল্লি।
যাঁরা রুমা বা থানচি এরই মধ্যে বেড়িয়ে এসেছেন, তাঁরা যেতে পারেন লামা, আলীকদম বা রোয়াংছড়ি উপজেলায়। লামা উপজেলায় ফাঁসিয়াখালী-লামা- আলীকদম সড়কের ১৬ কিলোমিটার এলাকায় মিরিঞ্জা পর্যটনকেন্দ্রের অবস্থান। পর্যটন করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দেড় হাজার ফুট ওপরে এখানে গড়ে উঠেছে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। তবে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে যাঁরা পাহাড়ি এলাকায় ভ্রমণের স্বাদ নিতে চান, তাঁরা মিরিঞ্জায় যেতে পারেন। কারণ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে মিরিঞ্জায় যাওয়া সহজ। এ ছাড়া রোয়াংছড়ির সিপ্পি পাহাড়ও এখন অ্যাডভেঞ্চার–প্রিয় তরুণদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
ঈদের ছুটিতে হাজারো পর্যটককে বরণ করে নিতে প্রস্তুত বান্দরবান প্রশাসনও। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত ডিপুটি কালেক্টর (এনডিসি) হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ বলেন, ‘আমরা পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা ও নিরাপত্তা দিতে প্রশাসন ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট সবাই প্রস্তুত। এ ব্যাপারে সবাইকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে।’
এবার ঈদের পরপর বান্দরবানের হোটেল-মোটেলগুলো পর্যটকে পরিপূর্ণ থাকবে। অধিকাংশ হোটেল-মোটেলে আগাম বুকিং হয়ে গেছে। সরকারি ছুটির একটা অংশ রোজার মধ্যে পড়ায় সেসব দিেন অবশ্য পর্যটকের তেমন চাপ থাকবে না।
কীভাবে যাবেন: চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বাসে সরাসরি বান্দরবানে আসা যায়। অথবা কক্সবাজার হয়ে আসতে পারেন পর্যটকেরা। কক্সবাজার-বান্দরবান বাস সার্ভিস রয়েছে। রাঙামাটি হয়েও আসা যায় বান্দরবানে। রাঙামাটি-বান্দরবান রুটে সরাসরি বাস সার্ভিস চলাচল করে।
কোথায় থাকবেন: জেলা শহরে ও শহরতলিতে অনেক ভালো মানের আবাসিক হোটেল ও অবকাশ যাপন কেন্দ্র রয়েছে। ফোনে এসব হোটেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। মেঘলা পর্যটন মোটেল: ফোন ০৩৬১-৬২৭৪১-৪২, হলিডে ইন: ০৩৬১-৬২৮৯৬, হোটেল প্লাজা: ০৩৬১-৬৩২৫২, হোটেল পূরবী: ০৩৬১-৬২৫৩১, ০১৫৫৬৭৪২৪৩৪, হোটেল ফোর স্টার: ০৩৬১-৬২৪৬৬, হোটেল হিলবার্ড: ০৩৬১-৬২৪৪১, ০১৮২৩৩৪৬৩৮২, হোটেল গ্রিন হাউস: ০১৫৫৮৪৪৯৫৬২, প্রু আবাসিকা: ০৩৬১-৬২২৫৭। শহরের বাইরে একেবারে প্রকৃতির মাঝে থাকতে চাইলে হিলসাইড রিসোর্ট ০১৫৫৬৫৩৯০২২, ০১৭৩০০৪৫০৮৩, ০১৭১৩১৮৯৬৯৫ বা সেনাবাহিনী পরিচালিত নীলগিরি রিসোর্ট ০১৭৬৯২৯৯৯৯৯–এ ফোন করে বেছে নেওয়া যেতে পারে।
[প্রথম আলো]