‘নির্যাতন,হত্যার হুমকি আর সহ্য করতে পারছি না, তাই ছেলেমেয়ে নিয়ে পাড়া ছেড়ে বান্দরবান শহরে চলে এসেছি, কখন নিজ পাড়ায় ফিরতে পারবো জানি না।’ বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার বেতছড়া থেকে জেলা শহরে পালিয়ে আসা পাড়াবাসী এসব কথা বলেছেন।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নে তালুকদার পাড়ায় চাঁদাবাজির অর্থের ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পাহাড়ের দুই সশস্ত্র গ্রুপ। এসময় উগ্য চাকমা ও বিমল চাকমা নামের দুই সন্ত্রাসী আহত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিমল চাকমাকে অস্ত্রসহ আটক করে। সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতির কারণে স্থানীয় আদিবাসীদের দায়ী করে ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকজন পাড়াবাসীকে মারধর করে। পরে দফায় দফায় হত্যার হুমকির কারণে তারা বান্দরবান শহরে আশ্রয় নেয়।
বেতছাড়ার তালুকদার পাড়ার বাসিন্দা অং থোয়াই প্রু মার্মা বলেন, পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি, কখন এলাকায় ফিরতে পারবো জানি না।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, বান্দরবানের ‘হোটেল অতিথি’ নামে হোটেলটির একটি রুমে দুই জনের থাকার জন্য ২টি সিট থাকলেও প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা আদিবাসীরা। এক একটি রুমে গাদাগাদি করে আছে আট থেকে দশ জন। হোটেলের অন্তত ১০টি রুমে শিশুসন্তান নিয়ে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে মানবেতর দিন কাটছে তাদের। তাদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ।
‘কী ঘটেছিল সেদিন’ এমন এক প্রশ্নে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। তাদের সবার একটাই কথা ‘কিছু বললে ওরা আমাদের মেরে ফেলবে।’
একপর্যায়ে তারা ভীত কণ্ঠে বলেন, বছরের পর বছর ধরে আমরা পাড়ায় থাকি। তারা (সশস্ত্র সন্ত্রাসী) আসলে ভয়ে আমরা নিজের টাকায় রান্না করে তাদের খাওয়াই, তবুও যেন একটু শান্তিতে থাকতে পারি। কিন্তু এখন তারা প্রতিনিয়ত মারধর করে, হত্যার হুমকি দেয়। আর সহ্য করতে না পেরে চলে আসি।
বেতছড়ার কারবারী মং পু মার্মা ও উমে প্রু মার্মা বলেন, কীভাবে দিন পার করছি তা বলে বোঝাতে পারবো না, এলাকায় ফিরে যেতে প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।
স্থানীয়রা জানায়, শহরের অতিথি হোটেলসহ বিভিন্ন হোটেলে ৭০ জন অবস্থান করলেও আরও অন্তত ১৩০ জন জেলা শহরের বিভিন্ন পরিচিত জনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। মঙ্গলবার তারা এক কাপড়েই শিশু-সন্তানদের নিয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসেন। শহরে আসার পর তারা সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে ফোনে একের পর এক হত্যার হুমকি পেয়ে বলেন, এখন আমরা কোথায় যাবো।
বেতছড়ার বাসিন্দা উচিং মং মার্মা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা এলাকা ছেড়ে চলে আসার পর তারা (সন্ত্রাসীরা) মোবাইলে অন্তত ১৫ পাড়াবাসীকে হত্যা করার হুমকি দিয়েছে।
আরও জানা গেছে, রোয়াংছড়ি উপজেলার বেতছড়ায় একটি পুলিশ ক্যাম্প আছে। তবে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তুলনায় পুলিশের জনবল কম। সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা একে-৪৭ রাইফেলসহ দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে খুন, অপহরণ ও চাঁদাবাজি করে আসছে। প্রশাসনের কার্যকর কোনও পদক্ষেপ না থাকায় স্থানীয়রা চরম আতঙ্কে দিন পার করছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, বেতছড়া পুলিশ ক্যাম্পের পাশাপাশি বেতছড়ার তালুকদার পাড়া প্রাথমিক স্কুলে যৌথবাহিনীর আরও একটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে আদিবাসী পরিবারগুলোর নিরাপত্তা দেওয়ার কথা চিন্তা করছে প্রশাসন।
রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অপরাধীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে গত ১৩ জুন একই উপজেলার জামছড়ি এলাকা থেকে সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মং পু মার্মাকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অপহরণ করলেও তার কোনও খোঁজ মেলেনি। এই ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করে প্রতিবাদে বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগ অবরোধ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।