আজ শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধানতম উৎসব এটি। করোনা মহামারির দুই বছর বিধিনিষেধ শেষে মানুষ আবারও স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে এসেছে। সেই সঙ্গে ফিরেছে ধর্মীয় উৎসবগুলোকে ঘিরে উদ্দীপনাও। বুদ্ধপূর্ণিমা ঘিরে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে তেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি। বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের জীবনকেন্দ্রিক এ দিবস বিশ্বের বৌদ্ধধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর কাছে পবিত্র দিন হিসেবেও বিবেচিত।
খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৩ অব্দের এই তিথিতে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছয় বছর কঠোর তপস্যার পর এই দিনেই তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধর্ম প্রচারের পর তিনি আবার একই তিথিতে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন।
গৌতম বুদ্ধের অন্যতম মূল বাণী হচ্ছে অহিংসা ও শান্তি এবং মৈত্রী ও প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সহাবস্থান করা। বুদ্ধের দর্শন তাই শুধু বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বজুড়ে মানবজাতির নানা সংকটে বুদ্ধের এ বাণী অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
বৌদ্ধধর্মের পঞ্চনীতি আত্মিক, পারিবারিক ও সামাজিক উন্নয়নে অনন্য এক দিকনির্দেশনা। এ পঞ্চনীতিতে কোনো প্রাণী বধ না করা, চৌর্যবৃত্তি না করা, কোনো অবস্থাতেই মিথ্যা না বলা, অবৈধ কামাচার না করা ও নেশাদ্রব্য গ্রহণ না করার কথা বলা হয়েছে। এই পঞ্চনীতি যদি সত্যিকারভাবে অনুসরণ করা যায়, তাহলে এ পৃথিবীতে কোনো দুঃখ, অশান্তি থাকার কথা নয়। এসব নীতি চর্চা মানবজাতির মুক্তির পথে সহায়ক হতে পারে।
একদিকে আধুনিক থেকে আধুনিকতর সভ্যতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিশ্ব। সেই সঙ্গে বাড়ছে যুদ্ধ ও হানাহানি। সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের আজ বড়ই অভাব। মানুষ আজ পরস্পরের ক্ষতি করছে; লাঞ্ছনা করছে, অন্যের জীবননাশ ও সর্বনাশ করার জন্য সদা তৎপর। এমন বাস্তবতায় বুদ্ধের সেই মহান বাণী বরাবরই স্মরণযোগ্য। অহিংসবাদের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন, বৈরিতা দিয়ে বৈরিতা, হিংসা দিয়ে হিংসা কখনো প্রশমিত হয় না। অহিংসা দিয়ে হিংসাকে, অবৈরিতা দিয়ে বৈরিতাকে প্রশমিত করতে হবে। বুদ্ধের এই বাণীকে বিবেচনায় নিলে হিংসা ও হানাহানি থেকে বিশ্বকে মুক্ত করা সম্ভব।
একটি বৈশ্বিক মহামারি পেরিয়ে এসেও জাতিতে জাতিতে ধ্বংসাত্মক প্রতিযোগিতা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে পালিত হচ্ছে এবারের বুদ্ধপূর্ণিমা। এই দিনে বিশ্ববাসীর মনে অহিংসা ও প্রীতিবোধের উন্মেষ ঘটবে, তারা মৈত্রী ও প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হবে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে গৌতম বুদ্ধের অনুসারী বিশ্বের সব জনগোষ্ঠীর প্রতি আমাদের শুভেচ্ছা।