প্রথমেই বলে রাখি লেখাটি আমার নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে একান্ত নিজস্ব মতামত।
থানার দালাল চক্রের মধ্যে আছেন –
১) স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় ব্যক্তি – যাদেরকে সমাজের অনেকেই সম্মান করে, মান্য করে।
২) স্থানীয় বিশেষ করে উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড পর্যায়ের ক্ষমতাশীল দলের কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি।
৩) কমিউনিটি পুলিশের কতিপয় নেতা ও সদস্য।
৪) স্থানীয় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কতিপয় সাংবাদিক।
৫) কতিপয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার এমনকি চৌকিদার-দফাদার।
মূলত ৩ টি কারণে এই শ্রেনীর কিছু লোক থানায় দালালী করার সুযোগ পায়-
থানার অফিসারদের সাথে তাদের মাত্রাতিরিক্ত সখ্যতা
এই মানুষগুলোর অনেকেরই একমাত্র পেশা থানায় দালালী করা। থানার কতিপয় অফিসাররা নিজেদের স্বার্থেই এসব দালাল পোষেন। কারণ পাবলিকের চেয়ে দালালদের মাধ্যমে অর্থনৈতিক লেনদেন অনেকটা নিরাপদ।
বৃটিশ আমল থেকে পুলিশের প্রতি সাধারণ জনগণের ভীতি
পুলিশের চেয়ে উপরোক্ত শ্রেনীর মানুষদের প্রতি জনগণের অধিক নির্ভরতা ও আস্থা। বৃটিশদের পুলিশ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যই ছিল জনগণকে নির্যাতন করে খাজনা আদায় করা। ফলে জন্মলগ্ন থেকেই পুলিশ এক ভীতিকর রূপ নিয়ে জনগণের সামনে আবির্ভূত হয়। স্বাধীনতার আগ পর্যন্তও পুলিশ ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর রূপে জনগণের সামনে আসে। যার রেশ আজও কাটে নাই। ফলে সেই আদিকাল থেকেই জনগণের ভিতর বদ্ধমূল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে দালাল ছাড়া থানায় গেলে পুলিশ পাত্তা দেয় না, কোনো কাজ করে না, উল্টো হিতে বিপরীত হতে পারে। যার রেশ আজও পুরোপুরি কাটে নাই।
দালালচক্রের অবাধে থানায় যাতায়াত
দালালচক্র অবাধে থানায় যাতায়াত করতে পারেন। যে কোনো অফিসারের সামনের এমনকি ওসির সামনেও চেয়ারে বসে থাকেন। যখন তখন যে কোনো পুলিশের সাথে কথা বলতে পারেন। কিছু পুলিশ দালালদের সাথে হাটে, বাজারে, দোকানে চা পান করে। অনেক পুলিশ তো দালালদের বাড়ীতে দাওয়াতও খায়। দালালচক্র থানায় কোনো তদবীর করে সফল হলে পাবলিকের আস্থা অর্জনের জন্য সেটা আবার এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচার করে। ফলে জনগণ দালালদের বিরাট ক্ষমতাশালী মনে করে পুলিশের চেয়েও দালাল চক্রের উপর বেশি আস্থাশীল ও নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। আর দালাল চক্র পুলিশ ও জনগণের এসব দূর্বলতার সুযোগ নিয়েই নিরীহ জনগণকে ইচ্ছামত শোষণ করে আসছে। ফলে জনগণ পুলিশের চেয়ে দালালচক্র দ্বারা বেশি হয়রানি ও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
লিয়াকত আলী, কক্সবাজারের রামু থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ।