দিনটি ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট। পরের দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে যাবার কথা ছিল। তিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। তাঁকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য ছাত্রছাত্রীরা কয়েকদিন ধরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। জাতির পিতাকে বরণের সকল আয়োজন প্রায় সমাপ্তির পথে। পরের দিন ১৫ আগস্ট ভোর হয়েছে টিকই কিন্তু এটা ছিল বঙ্গবন্ধুহীন ভোর। যে ভোর ঘাতক আর য়ড়যন্ত্রকারীরা ছাড়া আর কেউ চাননি। ১৫ আগস্ট ভোর রাতেই ঘটে গেছে ইতিহাসের জঘন্যতম এবং ঘৃন্য এক হত্যাযজ্ঞ।
কিছু উশৃংখল এবং বিপদগামী সৈনিক বঙ্গবন্ধুর ৩২নং ধানমন্ডির বাড়িতে ঢুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বেগম মুজিব, তাঁদের দুই পুত্র-শেখ কামাল, শেখ জামাল, দুই পুত্রবধূ, শিশুপুত্র রাসেল, বঙ্গবন্ধুর ভাই নাসেরসহ পরিবারের আরো কয়েকজনকে হত্যা করেন। একই সময়ে সৈনিকদের আরেকটি দল শেখ ফজলুল হক মনি এবং মন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দর রব সেরনিয়াবাতকে হত্যা করেন। হত্যা করা হয় তাঁদের পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে। তৎকালীন সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক কর্নেল জামিল বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়ে রাতের পোশাক পরেই রওনা হয়েছিলেন। পথে তাঁকেও গুলি করে হত্যা করা হয়।
বাংলার কলংকিত এবং ঘৃণিত ক্ষমতালিপ্সু খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে মেজর ডালিমরা বাঙ্গালী এবং বাংলার বুক খালী করে সেদিন যে গুরুপাপ করেছিলেন এর শাপমোছন হত্যাকান্ডের ৪৭ বছরেও হয়নি। রাষ্ট্র এখনো জাতির পিতা হত্যাকান্ডের পূর্ণাঙ্গ বিচারকার্য সম্পন্ন করতে পারেনি।
বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এবং দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পরও যখন বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিদেশে পালিয়ে থাকা খুনীদের দেশে ফেরত এনে বিচারকার্য সম্পন্ন করা গেল না। ভবিষতে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটলে অসমাপ্ত এই কাজ গতি পাবে কিনা এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যায়।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বহু ধারার এবং আদর্শের রাজনৈতিক দল রাজনীতির মাঠে থাকতেই পারে। থাকাটা স্বাভাবিক। বাংলাদেশে প্রায় অর্ধশত রাজনৈতিক দলের বিচরণ আছে। রাজনীতির অঙ্গনে বহুত্ববাদ না থাকলে রাজনীতির আসল সৌন্দর্য থাকে না। কিন্তু যে রাজনীতি বাংলার স্থপতি এবং জাতির জনকের সর্বোচ্চ ত্যাগকে সম্মান দিতে পারে না সেই রাজনীতি বাংলাদেশের সাথে যায় না। দেশের কোন সাধারণ নাগরিক হত্যাকান্ডের শিকার হলে পরে আমরা দলমত নির্বিশেষে তার বিচার চাইতে পারি, রাস্তায় নামি অথচ জাতির পিতা যিনি না হলে আজকে রাজনীতিকদের রাজনীতি করার কোন জায়গা থাকত না তাঁর এবং তাঁর পরিবারের উপর হওয়া অন্যায় এবং হত্যাকান্ডের বিচার সব রাজনৈতিক দলগুলো চাইতে পারে না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক। নিজেরা দ্বিধাবিভক্ত হতে হতে আজকে বঙ্গবন্ধুকেও ভাগ করে ফেলা হয়েছে। একদল ভাবছে বঙ্গবন্ধু কেবল তাদের (আওয়ামী লীগের) নেতা। আরেক দল ভাবছে তাদের নেতা বঙ্গবন্ধু নন। জাতির পিতার আসন সকল দলমত এবং বিতর্কের ঊর্ধ্বে হওয়া উচিত এই সত্য থেকে সরে যাচ্ছেন তারা।
আমরা বলতে চাই, অন্তত রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে জাতির পিতা হত্যাকান্ড, তাঁর পরিবারের সদস্যদের উপর চলা হত্যাকান্ড এবং সেদিন জাতির পিতার সাথে আরো যাঁদের হত্যা করা হয়েছে তাঁদের পরিবার সমূহ ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার রাখেন। এই অধিকার সংরক্ষণ করার গুরুদায়িত্ব রাষ্ট্রের।
মহান জাতীয় শোক দিবসে জাতির পিতাসহ সকল শহীদদের পারলৌকিক সদগতি কামনা করছি। সকল শহীদদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
সম্পাদক
আমাদের রামু