পার্বত্য বান্দরবান আলীকদমে ৪২টি বাংলা গরুসহ ১১৬টি গরু-মহিষ নিলাম হয়েছে ৮৭ লাখ আশি হাজার টাকায়। অবৈধভাবে আসা গরু মহিষ এর সাথে আটক হচ্ছে দেশি গরু। ২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে এই নিলাম হয়।
বাংলাদেশ মায়ানমার সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ি-আলীকদম দিয়ে গরু-মহিষ পাচার চক্রে স্থানীয়রা কীভাবে ও কতটা জড়িত রয়েছেন, তা নিয়ে সরকারের উচ্চপদস্থ তদন্ত টিম কাজ করা দরকার। ওই পাচার চক্রে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক নেতাসহ কাস্টমস ও পুলিশের একাংশের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ করছেন সচেতন সমাজ। দেশীয় মুদ্রা পাচার করে দিয়ে গোটা চক্রটি কর্তৃক এই কর্মকান্ড চালানো হলেও পার্বত্য আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজার চকরিয়া ও চট্টগ্রাম শহরে বসে কয়েকজন প্রাক্তন কর্তাও ব্যক্তিও জড়িত রয়েছেন বলে নানা গুঞ্জন থেকে এমন ইঙ্গিত মিলছে।
সর্বশেষ ২০ সেপ্টেম্বর সীমান্তের পাহাড় জঙ্গল পথ পাড়ি দিয়ে আসা শতাধিক গরু আলীকদমের সাপ্তাহিক হাটে বিক্রি হয়। পরে এইসব গরু পরিবহন কালে সেদিন সেনাবাহিনীর গেইটে আটক হয়। তার সাথে আটক হয় এমন কিছু গরু যা, স্থানীয় কৃষকদের গৃহে পালিত। এক ক্ষুদ্র গরু ব্যবসায়ী জানান, “আমি স্থানীয় মুরুংদের থেকে দেশি ১২টি গরু কিনেছি। প্রশাসন সেগুলোও নিয়ে যায়”। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা ভাল করে যাচাই করে দেশীয় গরুগুলো ছেড়ে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, আলীকদমে গরু পাচার চক্রের মাথা বলে পরিচিত একজন মাঝারি মানের নেতার ঈঙ্গিতে নাকি সব কিছু হচ্ছে। অন্যদিকে কুরুখপাতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানও এ সবের সাথে জড়িত বলে গুঞ্জন রয়েছে। এদিকে কুরুখপাতা চেয়ারম্যান দাবি করেন, সে এ সব গরু বেছাবিক্রির সাথে জড়িত নয়। তবে তার এলাকায় ঝোপজঙ্গলে গরু আছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
অপর দিকে স্থানীয়রাও জানায়, এখনো ওই ইউনিয়নের ঝোপজঙ্গলে প্রচুর বিদেশী গরু দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ আটকের পর চারজনকে আসামী করে মামলা হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর আগে গত জুলাই মাসে প্রথম আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ২৫টি গরুসহ একজনকে গ্রেফতার করেছিলেন। যদিও এখন সে জামিনে আছে।
একই সময় থেকে ৫৭ বিজিবি আলীকদম ব্যাটালিয়ন কয়েক দফায় অভিযান করে বেশ কিছু গরু-মহিষ আটক করে নিলামে দিয়েছেন। অবৈধ প্রক্রিয়ায় এত গরু আসার পেছনে কি ইতিপূর্বে ধৃত সেই ব্যক্তিটি আর সদ্য মামলার চার আসামীরাই শুধু জড়িত ছিল(?)। এ ক্ষেত্রে কি সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা দায় এড়াতে পারেন(?)। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলছেন নেতা খেতা, এরা চুনোপুটি। এই গরু পাচার চক্রের পিছনে শক্তিশালী আরও কেউ জড়িত রয়েছেন। শুধু সীমান্ত রক্ষীদের নয়, পাচার চক্রে কাস্টমস, পুলিশ এবং রাজনৈতিক নেতারাও জড়িত বলে ধারণা করছেন সচেতন সমাজ। এ দিকে বিদেশী নাপা বা ব্রাহমা জাতের গরু ধরতে গিয়ে প্রশাসন স্থানীয়, বাংলা গরুও আটক করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি আটক হয়ে নিলামে বিক্রি গরুর মধ্যে শুধু একজনের ক্রয়কৃত ১২টি স্থানীয় গরু রয়েছে বলে জানাযায়।
২২ সেপ্টেম্বর আলীকদম ৫৭ বিজিবি সদরে ৩৫টি মহিষ ২৬ লাখ টাকা, ৪২টি বাংলা গরু ২৬ লাখ টাকা ও ৩৯ টি নাপা গরু ৩৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিলামে বিক্রি হয়।
বাংলা গরু কেন বলা হয়, এমন প্রশ্নের উত্তরে এক বাসিন্দা জানান, এই গুলো বার্মার প্রজাতি গরু। তবে এই সব গরু মায়ানমার সীমান্তবর্তী পোযামুহুরী, কুরুখপাতা পাহাড়ে উপজাতিরা লালন পালন করেন। প্রশাসন কর্তৃক নিলামে বিক্রির সাথে সত্যেকারে যদি দেশীয় গরু নিলামে বিক্রি হযে যায়, সেটা হবে অত্যান্ত দু:খজনক। কারণ দেশি গরু রশিদমূলে বেছাবিক্রি হওয়া ও এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় যাওয়ার বিষয়টি আইন সম্মত। বিদেশী গরু অবৈধ পন্থায় দেশে ঢুকলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্টা নিতে হবে। সরকারি ব্যবস্থনায় কোনো অনিয়ম অবহেলার দায়ভার প্রজা সাধারণের উপর বর্তানো মোটেও কাম্য হতে পারেনা।
এ ব্যপারে জানতে, গত দু’দিন ধরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কয়েক দফা মুঠো ফোনে কল করা হয়। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপে কল করেও কোনো রেসপন্স পাওয়া যায়নি, ফলে বক্তব্যও নেয়া সম্ভব হয়নি।