লামা উপজেলা সদর ইউনিয়নের মেউল্লারচর এর মার্মা পাড়ার বাসিন্দা কেলা প্রূ মার্মা। তার পরিবারে স্ত্রী,২ ছেলে ২মেয়ে নিয়ে দরিদ্র কৃষক পরিবার। বসবাস করত ছোট নিচে একটি ঝুপঁড়ি ঘরে। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ,কখনও অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করেন কোন রকমে সংসার চালান। কিন্তু একটি ভাল ঘর তৈরী করার সামর্থ্য তার ছিল না। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয় প্রকল্পের ২ এর অধীনে চতুর্থ ধাপে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য নতুন নকশা করা লামা উপজেলা প্রথম দফায় ১৫টি পাহাড়ি পরিবার এ রকম ঘর পাচ্ছেন ।
সরেজমিনে জানা যায়, লামা ২নং সদর ইউনিয়নে ৫ নং ওয়ার্ডের মৈউলারচর মার্মা পাড়ায় নবনির্মিত পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী নকশায় একটি নতুন ঘর নির্মাণ করা হয়। ঘরটির কাঠের মেঝে মাটি থেকে আনুমানিক তিন-চার ফুট উঁচু। উত্তরমুখী ঘরটির সামনের অংশে বারান্দা,২টি রুম ও পেছনে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে রান্না ঘর। বাঁশের বেড়া, কাঠের বাটামে বাঁধানো ছিমছাম ঘরটির টিনে ছাউনি।
সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানের ২৩০টি পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভূমিহীন পরিবার পাচ্ছেন স্বপ্নের মাচাংঘর। এলাকার ঐতিহ্য ও কৃষ্টির সাথে সঙ্গতি রেখে এসব মাচাংঘর নির্মিত হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প -২ অধীনে এর চতুর্থ ধাপে লামা উপজেলার লামা সদর ইউনিয়নে ৮টি,রুপসী পাড়াতে ৫টি, ফাঁসিয়াখালীতে ২টিসহ মোট ১৫ টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য বসবাসের উপযোগী এ ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ২ লক্ষ ৫৫ হাজার ৬৭০ টাকা।
এক্ষেত্রে বাড়িতে থাকা কেলা প্রু মার্মার স্ত্রী মে প্রু মার্মা বলেন, আমরা আগে নিচে ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করতাম। এখন প্রধানমন্ত্রী দেওয়া এ রকম একটি ঘর পাওয়ায় অনেক ভাল লাগছে আর উনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ইউপি মেম্বার মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, এলাকায় এরকম উপজাতিদের বসবাস উপযোগী মাচাংঘর সত্যই প্রশংসার দাবিদার।
তিনি বলেন, আমাদের ইউনিয়ন ৫নং ওয়ার্ড এ সর্বপ্রথম মডেল হিসেবে নির্মিত হচ্ছে মাচাংঘর।
উপজেলার রুপসী পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা জানান, প্রত্যন্ত এলাকার পাহাড়ি জনগণ সেমিপাকা ঘরের চেয়ে মাচাংঘরকে বেশি পছন্দ করছেন। এতে মাচাংয়ের নিচে গৃহপালিত পশু পালনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সারা বছর সংরক্ষণ করা যায়। পরিবেশবান্ধব এ মাচাংঘরে আলো-বাতাস চলাচলের অবারিত সুযোগ থাকে।
উপজোলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, এদিকে পাহাড়িদের জন্য সেমিপাকা গৃহের পরিবর্তে মাচাংঘর নির্মাণের উদ্যোগটি সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, জনগণের চাহিদার ভিত্তিতে সেমি-পাকাঘরের পরিবর্তে পার্বত্য এলাকার ঐতিহ্য ও কৃষ্টির সাথে সঙ্গতি রেখে তৈরি হচ্ছে মাচাংঘর।