নীতি-আদর্শের প্রশ্নে সাংবাদিক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আবীর বড়ুয়া একজন আপসহীন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন মানবিক মানুষ। তিনি ভালো কাজকে প্রাধান্য দিতেন।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) রাত ৮টায় রামু উপজেলা অফিসার্স ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় বিশিষ্টজনেরা এ কথা বলেন। সভায় সাংবাদিক আবীর বড়ুয়া স্মৃতি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনে কথা জানানো হয়। সভায় আবীর বড়ুয়ার পরকালীন শান্তি কামনায় ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়।
রামু প্রেসক্লাব সভাপতি নীতিশ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সোয়েব সাঈদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়, রামু প্রেসক্লাবের প্রয়াত নির্বাহী সদস্য আবীর বড়ুয়ার ১৩তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা।
এ স্মরণ সভায় অতিথি ছিলেন, রামু উপজেলা প্রকৌশলী মঞ্জুর হাছান ভূঁইয়া, সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজন’ রামু উপজেলার সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ আলম, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা সাধারণ সম্পাদক সুবীর বড়ুয়া বুলু, বাংলাদেশ বেতারের সংগীত প্রযোজক বশিরুল ইসলাম, রামু প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি দর্পণ বড়ুয়া ও খালেদ শহীদ, জ্ঞানান্নেষণ পাঠাগারের সভাপতি আবদুল মান্নান প্রমুখ।
স্মৃতিচারণে আবেগাপ্লুত কন্ঠে প্রয়াত সাংবাদিক আবীর বড়ুয়ার বড় ভাই সুবীর বড়ুয়া বুলু বলেন, আমাদের মধ্যে বয়সের ব্যবধান থাকলেও আমরা দুইভাই একসাথে চলতাম, ফুটবল খেলতাম। এখনও তাকে অনেক মিস করি। আবীরের জন্য স্মরণ সভা আয়োজন করায়, আমার পরিবারের পক্ষ থেকে রামু প্রেসক্লাবকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
নাট্যব্যক্তিত্ব মাস্টার মোহাম্মদ আলম বলেন, রামুর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আবীর বড়ুয়ার অনেক অবদান রয়েছে। আশি-নব্বই দশকে সাড়াজাগানো ‘দুর্বার’ শিল্পী গোষ্ঠীর প্রাণপুরুষ ছিলেন আবীর বড়ুয়া। তিনি দরিদ্র মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন।
সংগীত প্রযোজক বশিরুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিশিষ্ট গণসংগীত শিল্পী সাংবাদিক আবীর বড়ুয়া আপোষহীন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ও মানবিক মানুষ ছিলেন। আবীর বড়ুয়ার স্মরণ সভা আয়োজনে সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাংবাদিক সমাজকে সম্মান জানানো হয়েছে।
রামু প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি দর্পণ বড়ুয়া বলেন, আমাদের দায়িত্ব আজকের প্রজন্মের কাছে সাংবাদিক আবীর বড়ুয়ার পরিচিতি তুলে আনা। তিনি সাংবাদিকতা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। সাংবাদিক আবীর বড়ুয়াকে স্মরণ রাখলে, রামুর সাংবাদিকরা উপকৃত হবেন।
রামু প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি খালেদ শহীদ বলেন, সাংবাদিক আবীর বড়ুয়া রামু প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা নিয়ে ভাবতেন, পরামর্শ দিতেন। বয়োজ্যেষ্ঠ হয়েও তিনি কখনো পদ-পদবী নিয়ে চিন্তা করতেন না। প্রেসক্লাবকে এগিয়ে নিতে অনুজ সাংবাদিকদের উৎসাহ যোগাতেন তিনি।
সাংবাদিক আবীর বড়ুয়ার কর্মতৎপরতা আমাদের অনুসরণ করা জরুরি।
স্মরণ সভায় আরও স্মৃতিচারণ করেন, রামু প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি এস এম জাফর, এম আবদুল্লাহ আল মামুন, খালেদ হোসেন টাপু, যুগ্ম-সম্পাদক আল মাহমুদ ভূট্টো, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাছির উদ্দিন, অর্থ সম্পাদক ওবাইদুল হক নোমান, দপ্তর সম্পাদক হাসান তারেক মুকিম, প্রচার সম্পাদক হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর, সহ-প্রচার সম্পাদক আবুল কাশেম সাগর, কার্যকরী সদস্য কফিল উদ্দিন, সদস্য আহম্মদ ছৈয়দ ফরমান, কামাল হোসেন, শিপ্ত বড়ুয়া, সুজন চক্রবর্তী, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ প্রমুখ।
আবীর বড়ুয়া ১৯৬২ খৃষ্টাব্দের ৩০মে কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মেরংলোয়া বড়ুয়া পাড়ার সম্ভ্রান্ত বৌদ্ধ পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা প্রয়াত উমেশ চন্দ্র বড়ুয়া প্রকাশ উমেশ মহাজন। মাতা প্রয়াত চারুবালা বড়ুয়া। ছয় ভাই দুই বোনের মাঝে আবীর বড়ুয়া সবার ছোট। তিনি রামু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হন রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৭৮ খৃষ্ঠাব্দে এস.এস.সি. এবং ১৯৮০ সালে কক্সবাজার সরকারী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেন। ছোট কাল থেকেই ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আবীর বড়ুয়ার বিচরণ শুরু হয়। খেলাধুলা, নাচ-গান ও নাটকের মোহে বার বার তিনি নিজেকে জড়িয়েছেন।
১৯৯৫-৯৬ সালের দিকে কক্সবাজারের স্থানীয় কাগজ দৈনিক সৈকত দিয়ে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন পরে আজকের দেশ বিদেশ পত্রিকায় কাজ করেন। এরপর দৈনিক পূর্বকোণ এর নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি রামু প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য, দৈনিক সৈকত এর ষ্টাফ রিপোর্টার এবং দৈনিক পূর্বকোণ এর রামুর নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়াও আবীর বড়ুয়া রামুর দুর্বার শিল্পী গোষ্ঠি, শব্দায়ন আবৃত্তি একাডেমী, গণমুখ থিয়েটার সহ বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ২০১০ খৃষ্টাব্দের ২১ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টা ৫৫ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে তিনি মারা যান । তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৯ বছর।