বাংলাদেশ তথা বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উপর অবদান রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য গবেষক পদক পেয়েছেন কক্সবাজারের রামুর কৃতি সন্তান ড. নাছির উদ্দীন। দেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা ও সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের জন্য ড. নাছির উদ্দীনকে এ সম্মাননা পদকে ভুষিত করা হয়।
বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের ৮ম বার্ষিক সম্মেলনে এ সম্মাননা প্রদান করেন বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার এমপি এবং বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবির বিন আনোয়ার। কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ২১ জানুয়ারি এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে- ড. নাছির ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশর বন, পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি তার কর্মজীবনের শুরুতে বাঘ মানুষের ধন্দ নিরসনে ওয়াইল্ড টিম ও ইউএসএইড এর বিভিন্ন প্রকল্পে সুন্দরবন ও পার্শ্ববর্তী এলাকা গুলোতে কাজ করেন। পরবর্তীতে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের অর্থায়নে ২০১৫ সালে সুন্দরবনের পশ্চিম অভয়ারণ্যে স্মার্ট পেট্রোল নামক আধুনিক টহল ব্যবস্থাপনা চালু করতে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন। সুন্দরবনের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য যেমন খাদিম নগর জাতীয় উদ্যান, রাতারগুল বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা, রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান এবং ফাঁসিয়াখালী জাতীয় উদ্যানে স্মার্ট পেট্রোল কার্যক্রমের বিস্তারে মাঠ পর্যায়ে বন বিভাগকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। একই সাথে ড. নাছির ভারতের মানাস ন্যাশনাল পার্কে, ভারতীয় সুন্দরবনে এবং ইন্দোনেশিয়ার কেরিঞ্চি সাব্লাট ন্যশনাল পার্কে এবং তামান ন্যাশনাল সিবেরোতে স্মার্ট টহল ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করতে ভারত সরকার ও ইন্দোনেশিয়া সরকারকে সহযোগিতা করেন। স্মার্ট পেট্রোল এর পাশাপাশি ড. নাছির বাংলাদেশের হাতি সংরক্ষণে আইইউসিএন এশিয়ানের হাতি বিশেষজ্ঞ টিমের বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ ও হাতি সম্বলিত এশিয়া মহাদেশের আরো ১২ দেশের সরকারকে সহ্যোগিতা করছেন।
ড. নাছির ২০২২ সালে ইউনিভার্সিটি অব চাইনিজ একাডেমি অব সাইন্স থেকে বন্যপ্রাণী অপরাধ ও যোনোটিক ডিজিজের উপর পি এইচ ডি শেষ করেন। ইতিমধ্যে ড. নাছিরের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর প্রকাশিত বিভিন্ন নিবন্ধ অসফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিক্যাল রিভিউ জার্নাল, কঞ্জার্ভেশন বায়োলজি জার্নাল সহ আরো অনেক নামকরা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
তাছাড়া ড. নাছির রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আগমন, হাতি মানুষের দন্দ্ব এবং মানব জীবনে তার প্রভাব নিয়েও গবেষণা করেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আগমন ও হাতি চলাচলের রাস্তায় রিফোজি ক্যম্প করার কারণে কক্সবাজার অঞ্চলে হাতি চলাচলের সমস্যা এবং হাতি মানুষের দন্দ্ব নিরসনের উপায় নিয়ে তার পরিচালিত গবেষণা দেশে বিদেশে বেশ প্রশংসিত হয়েছে।
ড. নাছির উদ্দিন কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ হাকিম রকিমা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি, এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে ডক্টর অব ভেটেরিনারী মেডিসিন ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর মাদ্রাজ ভেটেরিনারি কলেজ এবং নামাক্কল ভেটেরিনারি কলেজ থেকে প্রাণী চিকিৎসার উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। তিনি থাইল্যান্ড থেকে বন্যপ্রাণী অবশকরন ও চিকিৎসার উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। একই সাথে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিআইএস এবং রিমোট সেন্সিং এর উপরে বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করেন এবং নেদারল্যান্ডের ভিরাজ ইউনিভার্সিটি থেকে পরিবেশ অপরাধ বিজ্ঞানের উপর পোস্ট গ্রেজুয়েট কোর্স সম্পন্ন করেন।
গবেষণার পাশাপাশি ডক্টর নাছির উদ্দিন ওইয়াল্ড টীম, মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন, আইসিডিডিআরবি এবং প্যন্থেরা নামক আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক অর্গানাইজেশনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কর্মরত ছিলেন। এর পাশাপাশি ড. নাছির সোসাইটি ফর কনজারভেশন বায়োলজির কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং আইইউসিএন এর এশিয়ান হাতি বিশেষজ্ঞ টিমের একজন বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একই সাথে রেঞ্জার্স ফেডারেশন এশিয়া এর একজন নির্বাহি সদস্যও।
ইতিমধ্যে ড. নাছির উদ্দিনের প্রায় ১৬ টি বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণাপত্র বিভিন্ন স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ড. নাছির উদ্দিন রাষ্ট্রীয় ও বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ কাজে যোগদানের জন্য ইতিমধ্যে ৩০ টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন।
ড. নাছির উদ্দিন কক্সবাজারের রামু কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের বিশিষ্ট ব্যবসায়ি এবং রাজনীতিবিদ মরহুম মালেকুজ্জামানের কনিষ্ঠ সন্তান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম গোলাম কাদেরের ছোট ভাই। বর্তমানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ অপরাধ প্রতিরোধ টিমের কোর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এইদিকে ড. নাছির উদ্দিনের ” জীববৈচিত্র্য গবেষক ২০২২ পদক প্রাপ্তিতে কক্সবাজারসহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিজ্ঞানি, শিক্ষক, পেশাজীবি, উন্নয়ন কর্মি রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন শুভানুধ্যায়িরা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।