দারুণ এক অঘটনের মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের বোলাররা। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা পারলেন না সেই মঞ্চে আলো ছড়াতে। ১৪ রানের জয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা ধরে রাখার অভিযান শুরু করল শ্রীলঙ্কা।
এশিয়া কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে মিরপুরে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১২৯ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা আমিরাত ৯ উইকেটে করতে পারে ১১৫।
আগের দিনের মতো এদিনও শের-ই-বাংলার উইকেট ছিল সবুজাভ। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের মতো ঘাসে ভরা উইকেট না হলেও ছিল ঘাসের ছোঁয়া। তবে এই উইকেটেও ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে বেশ ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন দিনেশ চান্দিমাল ও তিলকরত্নে দিলশান। কিন্তু আমিরাতের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পথ হারায় লঙ্কান ইনিংস। পরে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা দারুণ ভাবে পুষিয়ে দেন লঙ্কান বোলাররা।
২৫ রানে ৪ উইকেটে নিয়ে লঙ্কানদের জয়ের নায়ক চোট কাটিয়ে ফেরা অধিনায়ক লাসিথ মালিঙ্গা। ৪ ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন চোট কাটিয়ে ফেরা আরেক পেসার নুয়ান কুলাসেকেরা।
শুরুটা করেছিলেন মালিঙ্গা। অঘটেনর শঙ্কা প্রথম ওভারেই অনেকটা দূরে ঠেলে দেন লঙ্কান অধিনায়ক। মাঠে ফিরে প্রথম বলেই উইকেট। সুইঙ্গিং ফুল লেংথ বলের জবাব ছিল না আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমিরাতের জয়ের নায়ক রোহান মুস্তাফার।
প্রথম ওভারেই মালিঙ্গা নেন আরও একটি উইকেট। এবার স্লোয়ারে বিভ্রান্ত মোহাম্মদ শাহজাদ (১)। শুরুর ধাক্কায় হতভম্ব হয়েই কিনা, একের পর একে বাজে শটের মহড়ায় নামে আমিরাতের ব্যাটসম্যানরা। দ্রুতই তাই সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
মালিঙ্গার পর জোড়া ধাক্কা দেন কুলাসেকারাও। এক ওভারেই বাজে দুটি শটে আউট হন মুহাম্মদ কালিম (৭) ও বাছাইপর্বে আমিরাতের সেরা ব্যাটসম্যান মুহাম্মদ উসমান (৬)।
১৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন কাঁপছে আমিরাত। দারুণ দুটি বাউন্ডারি মারার পর ফিরে যান অভিজ্ঞ শাইমান আনোয়ারও (১৩)।
সপ্তম উইকেটে ৩৮ রানের জুটিতে ম্যাচ কিছুটা জমিয়ে তুলেছিলেন স্বপ্নিল পাতিল ও আমজাদ জাভেদ। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে প্রথম ওভারেই জুটি ভেঙে দেন মালিঙ্গা। স্লোয়ারে বিভ্রান্ত করে ফিরতি ক্যাচে ফেরান পাতিলকে (৩৭)। কুলাসেকারা নিজের শেষ ওভারে ফেরান আমিরাত অধিনায়ক জাভেদকে (১৩)।
শেষ ওভারে দুটি বিমার মেরে বোলিং থেকে সরতে বাধ্য হন দুশমন্থ চামিরা। তবে জয় তার আগেই আমিরাতের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
চ্যালেঞ্জিং উইকেটে ব্যাটিংয়ের শুরুটাও ভালো করেছিল শ্রীলঙ্কা। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ওপেন করতে নেমে দারুণ এক অর্ধশতক করেন দিনেশ চান্দিমাল। স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটাতে না পারলেও চান্দিমালকে সঙ্গ দেন তিলকরত্নে দিলশান।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে চান্দিমাল ও দিলশান তোলেন ৪৯ রান। দুজনের উদ্বোধনী জুটি ছিল ৯ ওভারে ৬৮ রানের। এরপরই ধীরে ধীরে পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। দিলশানকে (২৮ বলে ২৭) ফিরিয়ে আমিরাতকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন জাভেদ। পরের ওভারে ফিরিয়ে দেন ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া মিলিন্দা সিরিবর্ধনাকেও (৬)।
আমজাদের বলে ২ রান নিয়ে চান্দিমাল স্পর্শ করেন অর্ধশতক, ৩৮ বলে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যেটি তার মাত্র দ্বিতীয় অর্ধশতক। কিন্তু সম্ভাবনাময় ইনিংসটি থমকে গেল ওখানেই। পরের বলেই পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন মিড উইকেটে।
দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর সেই ফাঁস আর আলগা করতে পারেনি লঙ্কানরা। বরং দুই প্রান্ত থেকেই দুর্দান্ত বোলিংয়ে আরও চেপে ধরে আমিরাত। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে দুটি উইকেট নেন আমিরাতের মূল স্ট্রাইক বোলার নাভিদ। প্রথম স্পেলে ২ ওভারে ২১ রান দিলেও শেষে ফিরে দুটি উইকেট নিয়েছেন মিডিয়াম পেসার শাহজাদ। ২৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার আমজাদ।
পেস সহায়ক উইকেটেও দারুণ বোলিং করেছেন আমিরাতের দুই স্পিনার। উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার আহমেদ রাজা। ৩ ওভারে ১৭ রান দিয়ে একটি উইকেট নিয়েছেন অফ স্পিনার রোহান মুস্তাফা।
৬৮ রানের উদ্বোধনী জুটির পর শ্রীলঙ্কা বাকি সব জুটি মিলে তুলেছে আর মাত্র ৬১! প্রথম ইনিংস শেষে তাই মিরপুরের বাতাসে ছিল অঘটনের গন্ধ।
সেই হাওয়া পাল্টে দিল মালিঙ্গা-কুলাসেকেরার বোলিং। স্বস্তির জয়ের শুরু হলো শ্রীলঙ্কার।
বিডিনিউজ থেকে নেয়া