রামুর ঐতিহাসিক রামকুট তীর্থধামে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী শিবদর্শন ও মহারাম নবমী মেলা। শ্রী শ্রী রামচন্দ্রের জন্মোৎসব উপলক্ষে রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের রামকুট তীর্থধামে প্রতি বছর সনাতন ধর্মাবলম্বী আয়োজনে এ অনুষ্ঠিত হয়। ২৭-৩১ মার্চ পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবে রয়েছে বাসন্তীদেবীর পূজা, ধর্মসভা, চব্বিশ প্রহর ব্যাপী তারকাব্রহ্ম মহানামযজ্ঞ, শ্রীশ্রী রাম নবমীব্রত, শিবদর্শন ও মহারাম নবমীমেলা সহ বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান।
সোমবার (২৭ মার্চ) রাত ৮ টায় পাঁচ দিনব্যাপী শিবদর্শন ও মহারাম নবমী মেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার-৩ (সদর-পৌরসভা-রামু-ঈদগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ট্রাস্টী বাবুল শর্মা।
শ্রীশ্রী রামকুট রামনবমী মেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নিপেন্দ্র ধর রবি‘র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন, রাংকোট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ কে. শ্রী. জ্যোতিসেন থের।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি বলেন, যারা সম্প্রীতির বিপক্ষে কাজ করবে, আমরা তাদের কখনও ক্ষমা করব না। যেকোনো মূল্যে আমাদের সম্প্রীতি ধরে রাখতে হবে। ধর্ম নিয়ে কোন প্রকার বিতর্ক করা যাবেনা। প্রত্যেক ধর্মে শান্তির কথা বলা হয়েছে। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারি বা সম্প্রীতি বিনষ্টকারীকে ছাড় দেয়া হবে না। সকল প্রকার অনিয়ম দূর করতে, সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকলেই ধর্ম ও সমাজের উন্নতি হবে।
এমপি কমল রামকুট তীর্থধামের উন্নয়নে অনুদান প্রদানের ঘোষণা দিয়ে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এতদঞ্চলে প্রথম সম্প্রীতির কথা বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নত, সমৃদ্ধ ও সম্প্রীতির দেশ। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আগামীতেও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রের ক্ষমতায় রাখতে নৌকায় ভোট দেয়ার আহবান জানান তিনি।
উদ্বোধনী দিনে প্রধান ধর্মীয় আলোচক ছিলেন, চট্টগ্রাম শ্রী পুন্ডরীক ধাম ইসকন চট্টগ্রাম ডিভিশনের সেক্রেটারি শ্রীপাদ চিন্ময় দাশ ব্রহ্মচারী, ধর্মীয় বক্তা ছিলেন, উখিয়া ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ অজিত দাশ। প্রদীপ প্রজ্জ্বলক ছিলেন, শ্রীশ্রী রামকুট তীর্থধাম আদিকথার গ্রন্থকার এডভোকেট দীলিপ ধর।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান মুফিজ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কক্সবাজার জেলার সভাপতি এডভোকেট দীপংকর বড়ুয়া পিন্টু, রামু প্রেস ক্লাবের সভাপতি নীতিশ বড়ুয়া, রামকুট তীর্থধাম পরিচালনা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ সিকদার, হিন্দু মহাজোট কক্সবাজার জেলার সভাপতি মিটন দাশ মিন্টু, কক্সবাজার জেলা জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডা. পরিমল দাশ, রামকুট তীর্থধাম নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ডা. উল্লাস ধর, রামু প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি খালেদ হোসেন টাপু, হিন্দু মহাজোট রামুর সাধারণ সম্পাদক বিবেকানন্দ শর্মা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শ্রীশ্রী রামকুট রামনবমী মেলা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী।
উদযাপন পরিষদের সভাপতি নিপেন্দ্র ধর রবি জানান, উদ্বোধনী থেকে সমাপনী দিন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন দল নামসূধা পরিবেশন করবেন। পাঁচ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় জনগনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এদিকে শিবদর্শণ ও মহারাম নবমী মেলায় এ বছরও হরেক রকমের পশরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। মেলার দর্শনার্থীরা জানান, সনাতন ধর্ম মতে দেশের দক্ষিণ প্রান্তে রামু রাজারকুলের পাহাড়ের শীর্ষে প্রতিষ্ঠিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূণ্যোজ্জ্বল রামকুট তীর্থধাম। এখানে রাম ও সীতা দেবীর মত মহাপুরুষের বিদর্ভকালের বিচরণ ছিলো। দুর্জন ক্লিষ্ট ধরা ও বিপর্যস্থ মানবকুলকে বিপন্ন জীবন থেকে পরিত্রাণের অভিপ্রায়ে শ্রীশ্রী ভগবান কর্তৃক প্রেরিত সপ্তমাবতার শ্রীশ্রী রামচন্দ্র পিতৃসত্য পালনার্থে বনবাসকালে অপহৃত সীতা দেবী তৎভ্রাতা লক্ষন ও বীর শিষ্য হনুমান সমভিব্যবহারে অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তনের পথে রম্যভূমি রামুর এই স্থানটিতে অবস্থান করেছিলেন। যার পূণ্যপদভারে বিশেষত্ব ও অমরত্ব লাভ করেছে গিরিময় এ স্থানটি। পূণ্যময় এস্মৃতিকে ধারণ করে পঞ্চবটীবন আজকের শ্রীশ্রীরামকুট তীর্থধামে সনাতন ধর্মালম্বীরা প্রতিবছর এ তিথিতে রামচন্দ্রের জন্মোৎব উদযাপন উপলক্ষে মেলার আয়োজন করে আসছে।