অনিশ্চিত হয়ে পড়া রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৬ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে আজ। শিক্ষা বোর্ড বিশেষ বিবেচনায় তাদেরকে পরীক্ষা প্রদানের অনুমিত দিয়েছে বলে জানান, ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ।
প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারির অবহেলার কারণে রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ৪৫ জন ছাত্রছাত্রীর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন অনিশ্চিতার মধ্যে পড়ে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিক্ষোভ করে। এ বিষয়ে রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভুল বুঝানো হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনী পরীক্ষায় ১৪৭ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশ নেয়। নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১১৭ জনই এসএসসি পরীক্ষা ফরম ফিলাপ করে। পরবর্তীতে ছাত্র-ছাত্রীদের অনুরোধে শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সুপারিশ ক্রমে বিশেষ বিবেচনায় ১৬ জন ছাত্র-ছাত্রীকে ফরম ফিলাপের সুযোগ দেয়া হয়। ওই ১৬ জনের ফরম ফিলাপের কাগজপত্র শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হয়। একমাস পরে শিক্ষা বোর্ড থেকে জানানো হয়, ওই সব শিক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপ হবে না। এ বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জানায় বিদ্যালয়েরই কতিপয় শিক্ষক। ওই শিক্ষকরাই পরিস্থিতিকে জটিল করে, প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারির বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের খেপিয়ে তোলেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ আরও বলেন, গত শুক্রবার রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইউএনও ফাহমিদা মুস্তফা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ, রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সাথে নিয়ে উপজেলা পরিষদে বৈঠক করেন। ওই বৈঠক থেকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইউএনও ফাহমিদা মুস্তফা চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন এবং বোর্ড কর্তৃপক্ষ ফরম ফিলাপ করা ওই ১৬ জন ছাত্র-ছাত্রীকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের অনুমিত দেন। তিনি আরও বলেন, ফরম ফিলাপে বোর্ড নির্ধারিত ফি’র বেশি টাকা নেয়া হয় নি। অতিরিক্ত টাকা যদি নেয়া হয়ও, তা হলে শ্রেণী শিক্ষক এর জন্য দায়ী।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, সঠিক সময়ে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাফেলতির কারণে ফরম পূরণে ব্যাপক অনিয়ম, রেজিষ্ট্রশনে ভুলের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি স্বয়ং ইউএনও। তিনি যদি সঠিক সময়ে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতেন, তাহলে পরীক্ষার বিষয়ে এ জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।
কয়েকজন অভিভাবক জানান, রামুতে পরীক্ষার একদিন আগে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিক্ষোভ না করলে, হয়ত এ সমস্যার সমধান হতো না। তারপরও তাদের ছেলেমেয়েরা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে, এতেই তারা খুশি।
এদিকে ক্ষুব্দ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্কুল প্রাঙ্গন ও রামু চৌমুহনী ষ্টেশনে সড়ক অবরোধ করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারির শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় দীর্ঘ যানজন সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। এসময় ওসি বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যায় ইউএনও সহ বৈঠক করে সমাধানের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা সড়ক থেকে সরে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান,রামু খিজারী সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে দলাদলী, বিভিন্ন কমিটি-উপ-কমিটির নাম দিয়ে অর্থ লোপাড সহ নানান অসঙ্গতি রয়েছে। এদিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুর আহমদকে বেকায়দায় ফেলতে এবং তাকে পদ থেকে আপসারন করতে শিক্ষকদের মধ্যে একটি সিন্ডিকেট নানা ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনি ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেনির ভর্তির প্রায় কয়েক লক্ষাধিক টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে সেই টাকাও শিক্ষকদের পকেটে পকেটে থেকে গেছে বলে জানান এক শিক্ষক।
রামু খিজারী সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে অনিয়ম স্বজনপ্রীতি ও গ্রুপিং বেড়েই চলেছে। এই ধরনের কার্যক্রম চলমান থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান ঠিকে থাকা কষ্টকর বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফাহমিদা মুস্তফা আমাদের রামু ডটকম কে জানিয়েছেন- বিষয়টি সমাধানের জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠক করা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষাবোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধান হয়েছে এবং ১৬ জন শিক্ষার্থী তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারবেন। ইতিমধ্যে তাদের এডমিট কার্ড আমাদের হাতে চলে এসেছে। শীঘ্রই এই স্কুলের নানান অসংগতি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।