অজিত কুমার দাশ হিমু, কক্সবাজার:
কক্সবাজারের একসময়ের স্রোতস্বীনি বাঁকখালী নদী দখলদারদের কবলে চলে গেছে। এখানে প্রতিনিয়ত উপেক্ষিত হচ্ছে উচ্চ আদালতের আদেশ নিষেধ। ফলে তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে প্রমোত্তা এ নদী। বর্তমানে বাঁকখালীর দুই পাড়ে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠায় এবং পৌর কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত ট্রাকভর্তি ময়লা আবর্জনা ফেলা অব্যাহত রাখায় দিন দিন সরু ও ভরাট হয়ে রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রবাহমান এই নদীটির গতিপথ। তাই বাঁকখালী নদীকে দ্রুত দখলমুক্ত করে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন মৎস্য ব্যবসায়ী ও পরিবেশবাদী সহ স্থানীয় অধিবাসীরা। অবশ্য, অবৈধ এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীটি রক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন।
সরেজমিনে জানা যায়, এক সময় বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে উৎপত্তি হয়ে কক্সবাজার জেলা শহরকে প্রানবন্ত করে রেখেছিল এই বাঁকখালী নদী। বর্তমানে ভরাট-দখলে সংকূচিত হয়ে পড়েছে কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী এ নদীটি। জেলার প্রধান এ নদী তীর দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য স্থাপনা। এতে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংসের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ। স্থানীয় ভূমিদস্যূরা পৌর কর্তৃপক্ষ ও ট্রাকের চালক হেলপারদের অবৈধ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ নদীটি ভরাট করার জন্য প্রতিদিন ২০-৩০ ট্রাক পৌর এলাকার ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নির্ধিদায়।
এছাড়াও নদীটির দৈর্ঘ্য কয়েক কিলোমিটার হলেও অবৈধ দখল প্রক্রিয়া চলছে কস্তুরা ঘাট, গুদাম ঘাট, ফিশারী ঘাট, মাঝির ঘাট এলাকার মধ্যে। নদীর চর ও তীর দখল করে ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে মৎস্য ঘের, নৌযান মেরামতের কারখানা (ডক ইয়ার্ড) ও বরফ কলসহ অসংখ্য বসতবাড়ি। অনেকে নদীর তীরে শহরের বর্জ্য ও পাহাড়ের কাটা মাটি দিয়ে ভরাট করে তৈরি করছেন বসত বাড়ি ও শুঁটকি মহাল। ফলে ৮শ’ থেকে হাজার ফুট প্রস্থ এই নদী এখন অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। এতে নদীর গতিপথ সরু হয়ে যাওয়ায় শুধু শুষ্ক মৌসুমেও নয়, ভরা বর্ষা মৌসুমেও জেলার কুতুবদিয়া-মহেশখালীসহ অভ্যন্তরীণ নৌরুটে নৌ-চলাচল ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে।
এ অবস্থায়, বাঁকখালী নদীর গতি প্রবাহ এবং ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীসহ পরিবেশবিদরা।
এ ব্যাপারে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক প্রিয়তোষ পাল পিন্টু বলেন, শৈশব থেকে ২৫ বছর আগেও দেখেছি বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় যাত্রীবাহি বড় বড় লঞ্চ-স্টীমার ভীড় করতে। জোয়ারের সময় পানি শহরের বাজারঘাটায় ঢুকে পড়ত। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার নৌ-পথে প্রতিদিনই যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযানের যাতায়ত ছিল লক্ষনীয়। এ নদীকে কেন্দ্র করে একসময় গড়ে উঠেছিল বানিজ্যিক কেন্দ্র। কিন্তু ভরাট ও অবৈধ দখলদারের কবলে পড়ে স্রোতস্বিনী এ বাঁকখালী নদী আজ হারিয়েছে তার পুরনো ঐতিহ্য আর নাব্যতা।
বিভিন্ন সময়ে বাঁকখালী নদীর তীরের সংরক্ষিত শত শত একর জায়গা অবৈধভাবে দখল করে তৈরী করা হয়েছে মৎস্য ঘের। কিছু কিছু স্থানে খোদ পৌর কর্তৃপক্ষ ময়লা আবর্জনা ফেলে নদীটি ভরাটের প্রতিযোগীতায় নেমেছে বলে জানান স্থানীয় অধিবাসীরা।
এদিকে, অবৈধভাবে নদীটি দখল হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।শিগগিরই এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে বলে জানালেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শেখ ফরিদ আহমদ।