শিক্ষাকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। রাজধানী থেকে শুরু করে মফস্বলের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধেও বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের বিষয় আমলে নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, অভিযোগের ধরন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণির কর্মকর্তা অভিযুক্তদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে অবৈধভাবে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া তেজগাঁও মডেল হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক কাজী একেএম শাহজান অভিযোগ করেছেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিধিবহির্ভূতভাবে তাকে পদাবনতি করেছেন।
রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবুল হোসেন ও সহকারী অধ্যাপক আসিফ রহমানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। তারা ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ একাধিক অভিযোগ করা হয়েছে অধ্যক্ষ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে।
যদিও অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করতে রাজি নন অধ্যক্ষ আবুল হোসেন। তিনি ‘জাগো নিউজ’কে বলেন, ‘একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের স্কুলের ইমেজ নষ্ট করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিভিন্ন মহলে তারা অভিযোগ দিচ্ছে।’
এছাড়া স্কুলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার কালিয়াকৈর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তারা স্কুলের জমিতে মার্কেট নির্মাণ এবং মার্কেটের দোকান বরাদ্দ বাবদ লাখ লাখ টাকা তুলে স্কুলের তহবিলে জমা দেননি। রাজৈর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মরিয়ম মুজাহিদা রাষ্ট্রপতির আদেশ অমান্য করে আর্থিক দুর্নীতি, জালিয়াতি ও স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার শাহজাদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে। ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে অনিয়ম দুর্নীতি চলছে রংপুরের কালুপাড়া মহদীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার উদায়ন বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী শহীদ জিয়া গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটি ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। মতিঝিল মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সেলিনা শামসী ও গভর্নিং বডির সভাপতি আওলাদ হোসেন নানা অনিয়মে জড়িত। শরীয়তপুর জেলার গোসাইহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন এবং কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এসব অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. ওয়াহেদুজামান ‘জাগো নিউজ’কে বলেন, ‘বেশ কয়েকটি স্কুলের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে। অনেক স্কুলের অনিয়মের বিষয়ে আমরা আগে থেকেই অবগত।’
তিনি আরো বলেন, ‘অভিযোগগুলো তদন্তপূর্বক এর প্রতিবেদন আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। সেখান থেকে যে নির্দেশনা আসবে আমরা সে মেতাবেক ব্যবস্থা নেব।’
শুধু অনিয়ম ও দুর্নীতি নয়, শিক্ষার পরিবেশ ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ নষ্টেরও অভিযোগ রয়েছে। বগুড়া পৌরসভার ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি একাডেমিক ভবন ভেঙে মার্কেট নির্মাণ করেছে। ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সিংরইল উচ্চ বিদ্যালয়ের বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক মো. আক্তার হোসেন তথ্য বিভ্রাট ঘটিয়ে স্কুল পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করছেন। নরসিংদী বিয়াম স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির কারণে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট এবং সেখানে অব্যবস্থাপনা চলছে। ময়মনসিংহের সিংরইল উচ্চ বিদ্যালয়ের বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক মো. আক্তার হোসেন অবৈধভাবে সিল ও প্যাড ব্যবহার করে স্কুল পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করছেন।
রাজধানীর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২০১৭ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি, মাসিক বেতন, কোচিংসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাড়তি ফি নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সালমা জাহান বলেন, সম্প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনিয়ম বেড়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর শিক্ষা দেয়া সম্ভব হবে না। তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে মাউশিকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপরাধ অনুযায়ী পাঠদান বাতিলসহ জরিমানা ও বিভিন্ন শাস্তি প্রদান করা হবে।
সূত্র: জাগোনিউজ।