প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষুঃ
খাগড়াছড়ি জেলার উল্টাছড়ি শীলানন্দ কুঠিরের অধ্যক্ষ, ধূতাঙ্গ ভান্তে খ্যাত, দেশ-বিদেশে বহুল পরিচিত সাংঘিক ব্যক্তিত্ব ভদন্ত শীলানন্দ থের বলেছেন- যার মন যত বেশি পবিত্র তিনি তত বেশি সুখী। সংসারে কেউ কেউ মনে করেন যিনি যত উচুঁ তলায় থাকেন তিনি তত বেশি সুখী ব্যক্তি। কিন্তু বাস্তবতায় তা নয়। আসলে যার মন যত বেশি পবিত্র তিনি তত বেশি সুখী। সুখ থাকে নিজের মনের মধ্যে। নিজের কায় বিশুদ্ধি, বাক্য বিশুদ্ধি না থাকলে চিত্ত বিশুদ্ধি লাভ করা যায় না। আবার চিত্ত বিশুদ্ধি অর্জন করতে না পারলে সুখী হওয়া যায় না।
তিনি আরো বলেন-কাউকে দুঃখ দিয়ে, আঘাত করে এবং কারো ক্ষতি করে সুখ লাভ করা যায় না। প্রকৃত সুখ লাভ করতে হলে পরের সুখে সুখী এবং পরের দুঃখে দুঃখী হতে হবে। আবার যে কেউ মহান গুণ অর্জন করতে পারে না। শক্ত মাটি নরম করতে হলে যেমন পানি দরকার, তেমনি মনের পবিত্রতা এবং উদারতা গুণ অর্জন করতে হলে নিজের মধ্যে চারটি গুণ অর্জন করতে হবে- মৈত্রী, করুণা, মুদিতা এবং উপেক্ষা। এই চারটি গুণ অর্জন করতে পারলে লোভ, দ্বেষ এবং মোহ মুক্ত হওয়া যায়। এই রিপু গুলো জয় করতে পারলে মনে সুখ চলে আসতে বাধ্য।
স্বর্গের বিষয়ে তিনি বলেন- মানুষকে বিমুক্ত হতে হলে আসক্তি মুক্ত হতে হবে। আসক্তি মানে কামনা। এটা চাই, ওটা চাই এটা কামনারই অন্তর্গত। মানুষ স্বর্গসুখ কামনা করে। কিন্তু সেই স্বর্গ রচনা করার দায়িত্ব মানুষের উপর বর্তায়। স্বর্গ-নরক মানুষ নিজেই রচনা করে। জীবনে ভাল কাজ করলে পরকালে তিনি স্বর্গ লাভ করতে পারে। আর যদি পাপকর্ম করে তাহলে সে দুগর্তিতে পতিত হতে পারে। তবে মানুষ যদি শমথ এবং বিদর্শন ভাবনার মাধ্যমে বিমুক্তি লাভ করতে পারেন, তখন তিনি আর কর্ম করেন না। তিনি পাপ-পুণ্যের উর্ধ্বে চলে যান।
পালি গাথার উপমা টেনে তিনি বলেন- অজ্ঞানী, পাপাচারী, দুরাচারী, অত্যাচারী, নীতিভ্রষ্ট মানুষের সাহচর্য্যে থেকে কখনো সুখী হওয়া যায় না। জ্ঞানী, গুণী, পন্ডিত, শীলবান, প্রজ্ঞাবান, নীতিবান ব্যক্তিত্বের সাহচর্য্যে থাকা উত্তম মঙ্গল।
দীর্ঘ এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে তিনি বৌদ্ধধর্মের আলোকে বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করে উপস্থিত শ্রোতা বৃন্দের উদ্দেশে হিতোপদেশ দান করেন।
এসময় রামুসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য নর-নারী উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে সবাই নিরবে তাঁর ধর্মদেশনা শ্রবণ করেন।
এর আগে রামুবাসির পক্ষ থেকে তাঁকে ফুলেল শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বরণ করে নেওয়া হয়। এরপর রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ, একুশে পদকে ভূষিত, উপসংঘরাজ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের উপস্থিত সবার উদ্দেশে কিছুক্ষণ হিতোপদেশ দান করেন।
এদিকে ধর্মদেশনা শেষে বিকেল ৩টার দিকে ভদন্ত শীলানন্দ থের রামু ত্যাগ করেন।