নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানায় নিহত পুরুষ জঙ্গি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোহেল বলে ধারণা করছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা। সিটিটিসি ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, প্রায় দুই বছর আগে সোহেল নাইক্ষ্যংছড়িতে যায়। সেখানে সে কিছুদিন রাবারের বাগানে কাজ করে। এরপর কাপড়ের ব্যবসাও করে। তবে সে মূলত নব্য জেএমবির সদস্য সংগ্রহ করতো। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
সিটিটিসি-র এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, নিহত পুরুষ জঙ্গি নাইক্ষ্যংছড়ির সোহেল। আঙ্গুলের ছাপ ও অন্যান্য প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তার পূর্ণাঙ্গ পরিচয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে।’
সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার চান্দিনায় পুলিশের ওপর হামলাকারী দুই জঙ্গি আহমেদ আজওয়াদ ইমতিয়াজ তালুকদার ওরফে অমি ও মাহমুদ হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সোহেলের নাম বেরিয়ে আসে। গত ১৫ মার্চ চট্টগ্রামের সাধন কুটির থেকে আটক রাজিয়া সুলতানা ওরফে আরজিনা ও জহিরুল হক ওরফে জসিমের কাছ থেকেও সোহেলের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যায়।
সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, সোহেল নব্য জেএমবির মধ্যমসারির নেতা। সে আসলে সদস্য সংগ্রহের কাজ করতো। নাইক্ষ্যংছড়িতে যারা নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়েছে তারা মূলত সোহেলের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে যুক্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়, সে তার পরিবারের সদস্যদেরও জঙ্গিবাদে যুক্ত করেছে। নাইক্ষ্যংছড়ির লোকজন তাকে গুরু বলে ডাকতো।
সিটিটিসি-র অপর এক কর্মকর্তা জানান, সোহেলের সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য তাদের হাতে নেই। তারা তার বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করছেন। তবে সে মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেছে এবং ইতোমধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ জনকে জঙ্গিবাদে ‘মোটিভেটেড’ করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে সাতটি লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে একজন পুরুষ, দুজন নারী এবং চারটি শিশু রয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) পলাশ রায় বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানান।
এরও আগে বৃহস্পতিবার বিকালে নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন হিট ব্যাক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, জঙ্গি আস্তানায় সাত থেকে আটটি লাশ রয়েছে। তবে সেগুলো ছিন্নভিন্ন ছিল বলে সঠিক সংখ্যা ওই সময় বলতে পারেননি তিনি।
উল্লেখ্য, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাত থেকে মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায় একটি বাড়ি এবং খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজার এলাকার নাসিরপুর গ্রামের একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়ে ঘিরে রাখে পুলিশ ও সিটিটিসি। বুধবার সন্ধ্যায় নাসিরপুরের আস্তানায় অভিযান শুরু করে সোয়াট। পরে আলোর স্বল্পতার কারণে রাতে অভিযান স্থগিত রাখা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পরে পুনরায় অভিযান শুরু করে সোয়াট। বিকালে অভিযান শেষ হয়। শহরের বড়হাট এলাকার জঙ্গি আস্তানাটি এখনও ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে, কুমিল্লার কোটবাড়ীতেও একটি জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রেখেছে পুলিশ। বড়হাট ও কোটবাড়ির আস্তানা দুইটিতে শুক্রবার সকাল থেকেই অভিযান শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
তথ্যসূত্র: বাংলাট্রিবিউন।