খালেদ শহীদ:
রামুতে বিকেএসপি’র অধিগ্রহণকৃত জায়গা পরিমাপে বাধা দিয়েছেন জমির মালিকরা। এ নিয়ে রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। দেশের বিকেএসপি’র দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণে জন্য কক্সবাজারের রামু উপজেলা জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের নোনাছড়ি মৌজায় প্রায় ২৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সকাল ১১টায় রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পশ্চিম পাশে অধিগ্রহণকৃত জমি পরিমাপ করতে যান, রামু উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. নিকারুজ্জামান সহ বিকেএসপি’র প্রকৌশলী, জেলা প্রশাসন, ভূমি অফিস ও রামু থানার কর্মকর্তারা।
এ সময় পরিমাপ কাজে জমির মালিকসহ শতাধিক জনতা বাধা দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
তাদের দাবি বিকেএসপি’র অধিগ্রহনের জমির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। জমির মালিকরা মৌজা দরের তিনগুন মূল্য দাবি জানান। জমির মালিকদের দাবি যৌত্তিক বলে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করেন, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. নিকারুজ্জামান ও জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল শামশুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স।
সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. নিকারুজ্জামান আমাদের রামু ডটকমকে বলেন, রামুর জোয়ারিয়ানালায় প্রায় ২৯ একর জমিতে ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিকেএসপি’র ক্যাম্পাস নিমার্ণ করা হবে। আজ (বৃহস্পতিবার) অধিগ্রহণকৃত জমি পরিমাপ করে প্রাথমিক ভাবে বিকেএসপি’র কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। কৃষকের যেন ক্ষতি না হয়, সেদিক লক্ষ্য রেখে চাষাবাদের ধান কেটে নেয়ার পর পুরোপুরি জমি বিকেএসপি কর্তৃপক্ষকে অধিগ্রহণকৃত জমি বুঝিয়ে দেয়া হবে। তিনি বলেন, জমির ন্যায্য মূল্য পাওয়া জনগণের যৌত্তিক দাবি।
এদিকে জমির ন্যায্য মূল্য দাবির পাশাপাশি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনগন।
তাদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে জানানো হবে। তিনি বলেন, যেটি আইন সংগত হয় সেদিক বিবেচনা অবশ্যই করা হবে।
অধিগ্রহণকৃত জমির মালিক গোলাম কবির সওদাগর, শফিকুর রহমান, হালিম রায়হান, ছৈয়দ মিয়া জানান, রামুর জোয়ারিয়ানালায় বিকেএসপি’র ক্যাম্পাস নির্মাণ হচ্ছে, এতে আমরা আনন্দিত। কিন্তু অধিগ্রহণকৃত জমির ন্যায্য মূল্য আমরা পাচ্ছিনা। নোনাছড়ি মৌজার এসব জমির প্রতিএকর মৌজা মূল্য ২০ লাখ টাকা। সম্প্রতি জমির মালিকদের দেয়া ৭ ধারার নোটিশ মতে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে মৌজা মূল্যের দেড়গুন, যা পার্শ্ববর্তী মৌজা উত্তর মিঠাছড়ি ও জোয়ারিয়ানালা মৌজা মূল্যের অর্ধেক। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায়ী মৌজা মূল্যের তিনগুন টাকা দাবি করেন। একই সাথে অনেক মালিক জমি হারিয়ে নিশ্বঃহয়ে পড়বে। সেই সব জমির মালিকদের পূর্ণবাসনেরও দাবি করেন তারা।
একই কথা বলেন অধিগ্রহনকৃত জমির মালিক রফিক আহমদ, আবদু শুক্কুর, জাবেরুল কালাম আজাদ সহ অনেকে। তাদের দাবি, সরকারিভাবে যে মূল্য দেয়া হচ্ছে, তা অধিগ্রহনের আওতায় পড়া শত শত জমি মালিকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। ৩ ফসলা এসব জমির ন্যায্য মূল্য চায় তারা।
স্থানীয় কৃষক আবু তাহের, রশিদ আহমদ, মোহাম্মদ কালু, এজাহার মিয়া জানান, এসব জমি অধিগ্রহনের পর তাদের মতো অনেক কৃষক পরিবারকে জীবিকার প্রধান উৎস হারাতে হবে।
স্থানীয় জনগণ জানায়, বিকেএসপি নির্মাণের খবরে জোয়ারিয়ানালা সহ রামুবাসী আনন্দিত। কিন্তু মূল্যবান জমি কমদামে অধিগ্রহনের খবরে এলাকায় সেই আনন্দ এখন আর নেই। দুবছর পূর্বে এখানকার জমি একর প্রতি ৪০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন সেই দাম আরো অনেক বেড়েছে। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী মৌজায় জমির মূল্য এর দ্বিগুণ। মূল্য এত ব্যবধানে জমির মালিকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। মালিকদের স্বার্থ বিবেচনায় জমির মৌজা মূল্যের তিনগুন মূল্য প্রদানের জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সহ সরকারের প্রতি দাবি জানান তারা।
স্থানীয় জমির মালিকরা আরো বলেন, বিকেএসপি’র ক্যাম্পাস নিমার্ণের সময় পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা রাখতে হবে। এ এলাকার পূর্ব অংশ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পূর্ব দিক থেকে বর্ষায় পাহাড়ি পানি নেমে আসে। সেই পানি যদি নামতে না পারে, তাহলে জোয়ারিয়নালা ইউনিয়নের নয়াপাড়া, মৌলবী পাড়া, সওদাগর পাড়া, হালদার পাড়া, পূর্ব নোনাছড়ি, ইলিশিয়া পাড়া ও পশ্চিম জোয়ারিয়ানালায় বিপর্যয় নেমে আসবে। ক্ষতিগ্রস্থ হবে ওই সব এলাকার প্রায় আট হাজার পরিবার। একই কথা বলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানও।
জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল শামশুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স বলেন, দেশের দ্বিতীয় বিকেএসপি ক্যাম্পাস জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নে হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’কে জোয়ারিয়ানালাবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। একই সাথে স্থানীয় জনগণ ও জমির মালিকদের দাবী বিবেচনার আবেদন জানাচ্ছি। বিকেএসপি’র প্ল্যানে যেন পানি নিষ্কাশন সুব্যবস্থা থাকে এবং ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক ও স্থানীয় জনগণকে অগ্রাধিকার ভাবে বিকেএসপিতে যেন চাকুরির সুযোগ দেয়া হয়।