বিশেষ প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের রামু উপজেলার বহুল আলোচিত ভূমিদস্যু, মামলাবাজ ও রাজাকার কমান্ডার মোজাফ্ফর আহমদ প্রকাশ বকলম মোজাফ্ফরের বিরুদ্ধে ভূয়া দলিল ও খতিয়ান সৃজন করে জমি দখলের অভিযোগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩ পরিবার সংবাদ সম্মেলন করেছে।
রবিবার (২৩ এপ্রিল) বিকালে রামু চৌমুহনীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা মোজাফ্ফর আহমদের বিরুদ্ধে জমির দলিল জালিয়াতিসহ নানা চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে এসব পরিবারের পক্ষে লিখিত অভিযোগ পড়েন, দর্শক বড়ুয়া, ব্যোমকেশ বড়ুয়া ও তরুপ বড়ুয়া। এসময় এ তিন পরিবারের সদস্য ও তাদের নিকটাত্মীয়রাও উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে দর্শক বড়ুয়া জানান, তাদের নামে খতিয়ানভুক্ত ১ একর সাড়ে ৮ শতক জমি জবর দখলের উদ্দেশ্য রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের সাতঘরিয়াপাড়ার মৃত গোলাম কবিরের ছেলে রাজাকার মোজাফ্ফর আহমদ রেজিস্ট্রিবিহীন দলিল সৃজন ও ওয়ারিশদের দস্তখত জাল করে সোলেহনামা তৈরী করে। এরই প্রেক্ষিতে সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে দায়ের করা মামলায় বিবাদিদের নোটিশ গোপন করে মামলা নিজের পক্ষে ডিক্রি নেন। এ ডিক্রিমূলে ফের বিবাদিদের নোটিশ গোপন করে নামজারি মামলা (নং ৮৭৪/২০১৫-১৬) এর মাধ্যমে ভূয়া বিএস খতিয়ান সৃজন করে। এমনকি বিতশোক বড়ুয়া ও অশোক বড়ুয়া এসব জমির মালিক না হলেও তাদেরকে এসব মামলায় জমির মালিক ও বিবাদী সাজিয়ে আদালতে সত্যপাঠ করিয়ে ডিক্রি নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, জমির মালিক পরিমল বড়ুয়া ২০০৭ সালে এবং প্রান্তিক বড়ুয়া ২০১০ সালে মারা যান। কিন্তু বহলম মোজাফ্ফর আহমদ ২০১৪ সালের সৃষ্টি করা ভূয়া সোলেহনামায় ওই দুই মৃত ব্যক্তিরও স্বাক্ষর রয়েছে। জমি নিয়ে তার জালিয়াতির এটি একটি উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।
তাছাড়া বহলম মোজাফ্ফরের সৃজিত খতিয়ানের বিরুদ্ধে তারা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর কাছে এবং অবৈধভাবে নেয়া ডিক্রির বিরুদ্ধে সহকারি জজ আদালতে মামলা করেছেন। যা বর্তমানে বিচারাধিন রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আসা অপর পরিবারের পক্ষে মেরংলোয়া গ্রামের মৃত নির্মল বড়ুয়ার ছেলে ব্যোমকেশ বড়ুয়া জানান, চিহ্নিত রাজাকার মোজাফ্ফর আহমদ তাদের নামীয় ৬১ শতক জমি জবর দখলের উদ্দেশ্যে জনৈক তাপ্রু বড়ুয়া প্রকাশ আপ্রু বড়ুয়া ও অন্যান্য বিবাদির নাম উল্লেখ করে একটি রেজিষ্টিবিহীন সোলেহনামা সাজিয়ে উদ্দেশ্যমূলক মামলা (৩৭৮/২০১৩) করেন। অথচ তাপ্রু বড়ুয়া প্রকাশ আপ্রু বড়ুয়া নামে রামু উপজেলায় কোন ব্যক্তি-ই নাই।
সংবাদ সম্মেলনে আসা তৃতীয় পরিবারের পক্ষে একই এলাকার তরুপ বড়ুয়া জানান, তাদের স্বত্ত্ব দখলীয় ৫ একর ৬৮ শতক জমি প্রতিপক্ষ ভূমিদস্যু ও রাজাকার মোজাফ্ফর আহমদ মামলায় (নং ১০৫/২০১১) ডিক্রি পাওয়ার অজুহাত দেখিয় সাম্প্রতিক সময়ে জবর দখলের চেষ্টা চালায়। অথচ জমির মালিকরা বিগত ১৯৩১ সালের পর থেকে কারো কাছে কোন অংশ বিক্রি করেনি।
মূলত মামলাবাজ ও লোভী বকলম মোজাফ্ফর আহমদ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে রেজিস্ট্রিবিহীন দলিল সৃজন করে আদালত থেকে কৌশলে এ ভূয়া ডিক্রি নিয়েছে। এছাড়া আদালতের কোন নোটিশ তারা পাননি এবং একারণে তারা কেউ আদালতে হাজির বা স্বাক্ষ্যও দেননি। এনিয়ে তারা সকল ওয়ারিশগন ভূমিদস্যু মোজাফ্ফর আহমদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা (নং ৩৩৬/১৬ ও ১৮০/১৬) দায়ের করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এ তিন পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন বহুল আলোচিত ভূমিদস্যু, মামলাবাজ ও রাজাকার কমান্ডার মোজাফ্ফর আহমদ প্রকাশ বকলম মোজাফ্ফর তাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। জমি দখলের বাধা দিলে তাদের হত্যা করা হবে বলেও হুমকী দেয়া হচ্ছে। একারণে তারা বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এজন্য তারা প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা দাবি করেন এবং প্রতারক বকলম মোজাফ্ফরের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।
তারা আরো জানান, শুধু তারা তিন পরিবার নয়, বকলম মোজাফ্ফরের ভূমিদস্যুতা ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছে এলাকার আরো অসংখ্য পরিবার। প্রশাসনের নীরবতায় বকলম মোজাফ্ফরের এসব অপকর্ম থামছেনা বলেও তারা অভিযোগ করেন। একজন চিহ্নিত রাজাকার কমান্ডারের এমন অপকর্ম ও অত্যাচারে জনমনে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী তিন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মৃত কালি কুমার বড়ুয়ার ছেলে নিমাংশু বড়ুয়া, মৃত নির্মল বড়ুয়ার ছেলে ব্যোমকেশ বড়ুয়া, মৃত জ্ঞানেন্দ্র বড়ুয়ার ছেলে কল্লোল বড়ুয়া, মৃত উমেশ বড়ুয়ার ছেলে সুবির বড়ুয়া, মৃত সারদা চরন বড়ুয়ার ছেলে রনধীর বড়ুয়া, মৃত সুধীর বড়ুয়ার ছেলে সংগীত বড়ুয়া, মৃত সুমল বড়ুয়ার ছেলে মানস বড়ুয়া, মৃত ক্ষেমেশ বড়ুয়ার ছেলে তরুপ বড়ুয়া, অমল বড়ুয়ার ছেলে সুজিব বড়ুয়া, মৃত সন্তোষ বড়ুয়ার ছেলে সাংবাদিক ও ছড়াকার দর্পন বড়য়া সহ এলাকার অসংখ্য নারী-পুরুষ এবং গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।