বিবিসি বাংলা:
রাঙামাটি জেলার লংগদুতে নুরুল ইসলাম নয়ন নামে একজন বাঙালীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে উত্তেজনা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সরকারি হিসেবেই শুক্রবার হামলায় লংগদু উপজেলায় চাকমাদের তিনটি গ্রামে ২১২টি বসতবাড়ি আর নয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে।
১৯৮৯ সালের পর লংগদুতে পাহাড়ি বসতভিটায় এটি সবচেয়ে বড় হামলা।
ঘটনার পাঁচদিন পর তিনটিলা গ্রামে ঢুকে বসতভিটায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি চোখে পড়ে।
কিছু দূর পর পর চাকমাদের ঘরগুলো জ্বলে পুড়ে ছারখার।
হঠাৎ করে এমন পরিস্থিতি হবে কখনো ভাবতেই পারেননি।
তিনটিলার প্রেমরঞ্জন চাকমার দাবি, নতুন ঘর তুলে এক সপ্তাহ বসবাস করতে পারেনি তার পরিবার।
ঋণ নিয়ে ঘর তুলে এখন তিনি নিঃস্ব।
তিনি বলছিলেন, “এই অবস্থা কেন? আমরা কী দোষ করলাম? কী খাব, কোথায় থাকবো আমরা, কোথায় যাব?
গ্রামের নিন্টু বিকাশ চাকমা বলছিলেন, হামলায় তারা সবাই সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন।
পাহাড়ে এমন হামলার পেছনে কী কাজ করছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আসল সমস্যাই তো পাহাড়ি বাঙালী রেষারেষি। বাঙালী একজন মারা গেলে তাহলে মনে করা হয় পাহাড়িরা মারছে। তাহলে পাহাড়িদের বাড়ীতে আগুন লাগাও। পাহাড়ি মারো। কে বা কারা মারছে তার কোনও বিচার আচার নাই।”
লংগদুর হামলার ঘটনার পর পাহাড়িরা যেমন আতঙ্কিত তেমনি উৎকণ্ঠায় রয়েছে স্থানীয় বাঙালীরাও।
তেইশ বছর ধরে লংগদু উপজেলা চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন। ১৯৭৯ সালে তিনি পাহাড়ে বসবাস শুরু করেন।
তিনি মনে করেন পাহাড়ে চাঁদাবাজি এবং অস্ত্রধারী সংগঠনগুলোর কারণে ক্ষোভ থেকেই উত্তেজন এতটা প্রকট হয়।
“বাঙালীরা যতটা না জিম্মি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের কাছে পাহাড়িরা তার চেয়ে বেশি জিম্মি। প্রত্যেকটা জিনিস, একছড়া কলা বাজারে বিক্রি করলেও পাহাড়িদের চাঁদা দিয়ে আসতে হয়। একমাত্র অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর কারণেই। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা যদি নয়নকে হত্যা না করতো তাহলে এ ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দিত না কেউ, এরকম হতো না।”
স্থানীয় থানার ওসি মমিনুল ইসলাম বলেন, “একটা মটর সাইকেল চালক সে রাজনৈতিক কর্মী হলেও সে যে খুব বড় মাপের নেতা এটাও তো না। খুব ছোট একটা পোস্ট ক্যারি করছে। তাকে নিয়ে এত বিশৃঙ্খলা হবে এটা ভাবতেও পারি নাই।”
“আমি নিজেও তো চিন্তা করতে পারি নাই যে শতাধিক ঘরবাড়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমিতো মনে করছিলাম ১০-১২টা ঘর হবে।”
লংগদু উপজেলার পাহাড়ি বাঙালী উভয়ই জানান, দীর্ঘদিন তারা শান্তিপূর্ণভাবেই বসবাস করে আসছেন।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য এবং লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানে আলম বলেন এটা ষড়যন্ত্র।
তার ভাষায়, “এই ঘটনা পাহাড়ি বাঙালীদের মধ্যে একটা দূরত্ব এসেছে। আমরা মোটামুটি একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থায় এখানে বসবাস করছিলাম। দীর্ঘ বিশ বছর কোনও সংঘাত এ উপজেলায় হয় নাই।”
“এই সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এই ষড়যন্ত্র হয়েছে। এ আঞ্চলিক সংগঠন তারাই এ ঘটনাগুলো করে আমাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করছে।”
মঙ্গলবার রাঙামাটি থেকে নাগরিক কমিটির পক্ষ হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন বিজয় কেতন চাকমা।
তিনি বলেন, “শান্তি নেই পাহাড়ে। রাস্তার কাছে একটা দোকান দেখছেন যেখানে বাঙালীদের ফার্নিচার ছিল। ওই ফার্নিচারগুলো সুন্দর করে বের করে রেখেছে, ঘরটা পুড়িয়ে দিয়েছে। ফার্নিচারগুলো বাঙালীদের। বুঝুন। এখানে জামাত, বিএনপি এখানে অন্যদল ভাগ নেই। এখানে শুধু পাহাড়ি আর বাঙালী।”