টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে, সেখানে রাস্তা থেকে পাহাড়ের মাটি সরাতে গিয়ে ফের ধসে নিহত হয়েছেন চার সেনা সদস্য।
ঘরের উপর আকস্মিক পাহাড়ের মাটি পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন আরও অনেকে।
মঙ্গলবার এই পাহাড় ধসে রাঙামাটি সদর উপজেলা, কাউখালী, কাপ্তাই, জোড়াছড়ি ও বিলাইছড়িতে ৮৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী জানান।
তিনি রাত পৌনে ১০টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সদরে ৪৫ জন,কাউখালীতে ২৩ জন, কাপ্তাইয়ে ১৬ জন, জোড়াছড়িতে দুইজন এবং বিলাইছড়িতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
সকালে মানিকছড়িতে একটি সেনা ক্যাম্পের কাছে পাহাড় ধসের ঘটনায় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে ফের ধসে নিহত হন দুই কর্মকর্তাসহ চার সেনা সদস্য।
ওই ঘটনার বিবরণ দিয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের (মানিকছড়ি) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু মুসা বলেন, “পাহাড় ধসের ফলে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের উপর মাটি উঠে এসেছিল। খবর পেয়ে আমি কয়েকজন শ্রমিককে নিয়ে মাটি সরানোর কাজ শুরু করি।
“এক পর্যায়ে আমাদের সঙ্গে সেনা সদস্যরা এ কাজে যোগ দেন। আমার শ্রমিকরা পাহাড় থেকে একটু দূরে আসা মাত্রই পুরো পাহাড় ভেঙে সেনা সদস্যদের ওপর পড়ল। ঘটনাস্থলে চারজনের মৃত্যু হয়।”
সেখানে আরও দশজন আহত হয়েছেন এবং একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে আইএসপিআরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান জানিয়েছেন।
পাহাড় ধসে মৃত্যু হয়েছে সদরের রাঙাপানি এলাকার মেলি চাকমা (৫০) ও তার মেয়ে ফেন্সী (৭) চাকমার।
ওই ঘটনার প্রাণে বেঁচে যাওয়া মেলি চাকমার বোন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “সকালে রান্না করছিল মেলি। পাশের ঘরে ছিল তার মেয়ে ফেন্সী। বিকট শব্দ হয়ে মাটি চাপা পড়ল ঘরে। আমি কোনো মতে দৌঁড়ে পালিয়ে বাঁচলাম।”
তিনি বলেন, “সকালে এখানকার বেশিরভাগ লোকজন ঘরের ভেতর কাজে ব্যস্ত ছিল, তাই বেশিরভাগের প্রাণহানি হয়েছে।”
বাড়িঘর হারিয়ে এখন স্থানীয় আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন এই নারী।
কাজের জন্য বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রাঙামাটি শহরের ভেদভেদি এলাকার কালোমনি চাকমা। সে সময় পাহাড় ধসে তার ঘরের উপর মাটি স্তূপ পড়ে বলে জানান।
“বিকট শব্দ হয়ে মাটি চাপা পড়ে আমার বাড়িঘর শেষ। এখন কী হবে আমার? ইশ্বরকে ধন্যবাদ, প্রাণে রক্ষা পেলাম। সরকার তো এখন আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। কাল কী হবে জানি না।”
শহরের ভেদভেদির যুব উন্নয়ন বোর্ড এলাকার পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে মারা গেছেন সোনালী চাকমা ও তার তিন বছরের ছেলে আমিয় চাকমা।
তার এক আত্মীয় বলেন, “এলাকার এতগুলো লোকের প্রাণ গেল, কী হবে আমাদের?”
রাতে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি লাশ ও স্বজনদের কান্না।
সদর উপজেলার চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শহরের ভেদভেদি, মোনতলা, রাঙ্গাপানি, শিমুলতলি এবং সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে।
পাহাড় ধসের কারণে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে সোমবার রাত থেকে। রাঙামাটি শহরের অধিকাংশ স্থানে ভোর থেকে বিদ্যুৎ নেই।
রাঙামাটি আবহওয়া অফিসের কর্মকর্তা সুচরিতা চাকমা জানান, রোববার গভীর রাত থেকে রাঙামাটি জেলায় ভারি বৃষ্টি শুরু হয়ে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল।
মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাঙামাটিতে দেশের সর্বোচ্চ ৩৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকেও নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
রিপোর্ট বিডিনিউজের।