‘জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৭’ এর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার (১৯ জুন) জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। পরে বেলা ২টার দিকে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিক ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
শফিউল আলম বলেন, ‘নীতিমালায় বলা হয়েছে বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে প্রকাশিত ইন্টারনেটভিত্তিক রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র এবং এ জাতীয় অন্যকিছু অনলাইন গণমাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হবে। এ নীতিমালায় অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনার জন্য একটি গাইডলাইন থাকবে। এ জন্য নিবন্ধন লাগবে। সম্প্রচার কমিশন এ নিবন্ধন দেবে। অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধনের জন্য কমিশনের কাছে একটি নির্ধারিত ফি দিতে হবে।’
তথ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধন দিতে তিনিটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবেদন পাঠালে নীতিমালা অনুযায়ী নিবন্ধন দেওয়া হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘জাতীয় সম্প্রচার আইন নামে একটি আলাদা আইন তৈরির কাজ চলছে। সেই আইনে কমিশনের কাজ ও গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলা থাকবে। তবে ১৯৭৩ সালের ছাপাখানা আইন অনুযায়ী যেসব সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় তাদের অনলাইন ভার্সন থাকলে নিবন্ধন লাগবে না। পত্রিকা প্রকাশককে পত্রিকার অনলাইন ভার্সন সম্পর্কে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। অনলাইনগুলোর কোড অব গাইডেন্স কমিশন তৈরি করবে। এই গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, তথ্য, ছবিসহ যেকোনও বিষয়ে যদি কারও আপত্তি থাকে, কারও অধিকার ক্ষুণ্ন হয় তাহলে কমিশনের কাছে আবেদন করতে হবে। কমিশন ৩০ দিনের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করবে। নিষ্পত্তির বিষয়গুলো সম্প্রচার কমিশন আইনের বিধিমালায় উল্লেখ থাকবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার সঙ্গে অনলাইন নীতিমালার সামঞ্জস্য করা হবে। নিষ্পত্তিতে নির্দেশনা ও জরিমানার ব্যবস্থাও থাকবে।
কমিশন যেহেতু এখনও গঠন করা হয়নি, তাই বিদ্যমান অনলাইনগুলো চলবে কিনা- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশে বিদ্যমান অনলাইনের সংখ্যা ১৮শ’। এর তালিকা তৈরি করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব অনলাইন কাজ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ সংক্রান্ত সম্পূরক আইনগুলো অনলাইন নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত হবে।’
অনলাইন গণমাধ্যমের খসড়া নীতিমালায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ব্যক্তি, বিদেশি কূটনীতিক ও জাতীয় বীরদের অনলাইন গণমাধ্যমে প্রচারিত, প্রকাশিত পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। তবে গণসচেতনতা ও সমাজসংস্কারমূলক বিজ্ঞাপনে দেশের স্বনামধন্য নাগরিকদের সম্মতি নিয়ে বিজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ওয়েজ বোর্ডের নিয়ম-কানুন অনুসরণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীর বেতন-ভাতা দিতে হবে ব্যাংকের মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকা আবশ্যকীয়।
নীতিমালার তথ্য-উপাত্ত প্রচার, প্রকাশ ও সম্প্রচার সংক্রান্ত বিষয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে অনলাইন নীতিমালায়। সব ধর্মের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই সংবাদ পরিবেশন করার কথাও উল্লেখ রয়েছে এই নীতিমালায়।
আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার প্রসঙ্গে জানানো হয়েছে, আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করা যাবে। তবে কৌতুক বা পরিহাস করার জন্য আঞ্চলিকতা রাখা যাবে না। পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ধারাকে তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতিকেও তুলে ধরতে হবে সংবাদে।
অনলাইন গণমাধ্যমে প্রচারিত, প্রকাশিত বা সম্প্রচারে কোনও প্রকার অসঙ্গতিপূর্ণ, বিভ্রান্তিমূলক ও অসত্য তথ্য বা উপাত্ত দেওয়া যাবে না। সব তথ্য-উপাত্তে উভয় পক্ষের যুক্তি যথাযথভাবে উপস্থাপনের সুযোগ থাকতে হবে।
সরকার অনুমোদিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান, তথ্য-উপাত্ত স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে প্রচার বা প্রকাশ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সরকার প্রধানের ভাষণ, জরুরি আবহাওয়া বার্তা, স্বাস্থ্য বার্তা, গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা, সরকারের জারিকৃত প্রেসনোট, সরকার অনুমোদিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। রাষ্ট্রভাষাকে যোগ্য মর্যাদায় সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে তথ্য পাঠ, প্রচার, প্রকাশ ও সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই বাংলা প্রমিত বানান বা উচ্চারণের মান শিথিল করা যাবে না।
অনলাইন গণমাধ্যমে প্রচারিত, প্রকাশিত বা সম্প্রচারিত বিজ্ঞাপনের ভাষা, দৃশ্য কিংবা নির্দেশনা কোনও ধর্মীয় বা রাজনৈতিক অনুভূতির প্রতি পীড়াদায়ক হতে পারবে না। তবে ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করে না, এমন ধর্মীয় চিত্র প্রকাশ বা প্রদর্শন করা যেতে পারে।
সব তথ্য-উপাত্ত প্রচার, প্রকাশ ও সম্প্রচার করার ক্ষেত্রে দ্য সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্ট-১৯৬৩, তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০৬, কপিরাইট, ট্রেডমার্কস, প্যাটেন্টস-ডিজাইন ও জিআই আইনসহ অন্যান্য মেধাসম্পদ আইন বা দেশের প্রচলিত আইন ও তার অধীন বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে বা জাতীয় নীতিমালার পরিপন্থী কোনও তথ্য উপাত্ত প্রচার, প্রকাশ ও সম্প্রচার করা যাবে না।
নীতিমালায় অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধন সংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়েছে, সব অনলাইন গণমাধ্যমকে নিবন্ধিত হতে হবে। বিদ্যমান অনলাইন গণমাধ্যমগুলো শর্তপূরণ করে নিবন্ধিত হবে। অনলাইন গণমাধ্যম সংক্রান্ত আইন না হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এ দায়িত্ব শিগগিরই কমিশনের ওপর ন্যস্ত হবে। নিবন্ধন পাওয়া সব অনলাইন গণমাধ্যম সরকারের কাছে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হবে এবং শর্তপূরণ সাপেক্ষে ন্যয় ও সমতার ভিত্তিতে সরকারি সহায়তা পাবে।
প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী গঠিত জাতীয় সম্প্রচার কমিশনই অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা করবে। জারি করা বিধি-বিধান যথাযথভাবে মেনে চলছে কিনা তাও ধারাবাহিকভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এই কমিশন।
সব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সংবাদ ও প্রকাশিত বা প্রচারিত অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে ছয় মাস বা এক বছর পরপর প্রতিবেদন নেবে কমিশন। পরবর্তীতে তা পেশ করা হবে সরকারের কাছে। যেকোনও অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনও করবেন তারা।
নীতিমালা পরিপন্থী তথ্য প্রকাশ এবং দেশের বিদ্যমান আইন লঙ্ঘনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে পেলে সংশ্লিষ্ট অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেবে কমিশন। স্বপ্রণোদিতভাবেও তারা এই কাজ করতে পারবে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবে সরকারকে।
এছাড়া কমিশন আইনের বাস্তবায়ন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, বিধিবিধান প্রণয়নের জন্য অংশীজনদের পরামর্শ নেবে। অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের (সরকার) জন্য একটি অনুসরণীয় নিয়মকানুনও তৈরি করবে কমিশন।
তবে এর আগে কয়েক দফায় তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা দিতেই অনলাইন গণমাধ্যমের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হবে। এজন্যই অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা করা হচ্ছে।’
নীতিমালা অনুযায়ী গঠিত জাতীয় সম্প্রচার কমিশনই অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা করবে। জারি করা বিধি-বিধান যথাযথভাবে মেনে চলা হচ্ছে কিনা তাও ধারাবাহিকভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এই কমিশন।
সব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সংবাদ ও প্রকাশিত বা প্রচারিত অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে ছয় মাস বা এক বছর পরপর প্রতিবেদন নেবে কমিশন। পরবর্তীতে তা পেশ করা হবে সরকারের কাছে। যেকোনও অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনও করবেন তারা।
জানা গেছে, নীতিমালা পরিপন্থী তথ্য প্রকাশ এবং দেশের বিদ্যমান আইন লঙ্ঘনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে পেলে সংশ্লিষ্ট অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেবে কমিশন। স্বপ্রণোদিতভাবেও তারা এই কাজ করতে পারবে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবে সরকারকে।
এছাড়া কমিশন আইনের বাস্তবায়ন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, বিধিবিধান প্রণয়নের জন্য অংশীজনদের পরামর্শ নেবে। অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের (সরকার) জন্য একটি অনুসরণীয় নিয়মকানুনও তৈরি করবে কমিশন।
উল্লেখ্য, এর আগে রেওি ও টেলিভিশন সম্প্রচার কমিশনের আওতাধীন ছিল।
রিপোর্ট বাংলা ট্রিবিউনের।