রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ২১৩টি পরিবার ও আটটি দোকান পুড়ে ৬ কোটি ৬১ লাখ ৮৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১ জুন খাগড়াছড়ি সড়কের চারমাইল এলাকায় রাঙামাটির লংগদু ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ পাওয়া। তিনি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন। স্থানীয় বাঙালিরা এ ঘটনার জন্য পাহাড়ের আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে দায়ী করে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘লংগদু উপজেলায় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। তারা দুর্গম এলাকায় বনে পরিত্যাক্ত ঘর, গাছতলায় অবস্থান করছে। শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে পরিবারগুলো।’
এর আগে এ ঘটনায় বিচারিক তদন্ত চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। নোটিশে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতির নেতৃত্বে এই তদন্ত কমিটি করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করতে বলা হয়েছে।
এ সহিংস ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পাহাড়িদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে গত ১১ জুন আরেকটি মামলা হয়েছে। মামলায় ৯৮ জনের নাম উল্লেখ করে প্রায় ৩০০ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
লংগদু প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ কমিটির সদস্য মো. আবু তৈয়ব আলী বলেন, ‘আমরা তালিকা পাঠিয়েছি। অনুমোদন হয়ে আসলে কাজ শুরু করবো।’
প্রসঙ্গত, ১ জুন লংগদু উপজেলার সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মোটরসাইলেক চালক নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ দীঘিনালার চারমাইল এলাকায় পাওয়া যায়। স্থানীয় বাঙালিরা এই ঘটনার জন্য পাহাড়ের আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে দায়ী করে। এই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার লংগদুবাসীর ব্যানারে নয়নের লাশ নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা সদরে আসার পথে পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় শতাধিক বাড়ি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এদিকে, গত ৯ জুন খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলে তারা নয়ন হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেয় বলে জানায় পুলিশ। নয়নের মোটরসাইকেলটিও দীঘিনালার মাইনী নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার দুই ব্যক্তি রমেল চাকমা ও জুনেল চাকমা পুলিশকে জানিয়েছে, মোটরসাইকেল ছিনতাই করার জন্যই তারা নয়নকে হত্যা করে। তবে নয়ন হত্যাকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মোটরসাইকেলটি কোথাও নিয়ে যেতে পারেনি হত্যাকারীরা। পরে তারা মোটরসাইকেলটি মাইনী নদীতে ফেলে দেয়।
রিপোর্ট বাংলা ট্রিবিউনের।