রাঙামাটির লংগদুতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদেরকে শনিবার (২৪ জুন) থেকে ত্রাণ সহায়তাসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা। তিনি বলেন, ‘পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে রাঙামাটি জেলা পরিষদের মাধ্যমে এ ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।’ শুক্রবার (২৩ জুন) ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘যদি পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পুনর্বাসন ও ত্রাণ সহায়তা করে তাহলে তারা সেটা গ্রহণ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি পরিবারের জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে মোট ১১ লাখ, ৩ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার কাপড়, ২৫ মে. টন খাদ্য শস্য দেওয়া হবে। তারা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে তা ভাগ করে নেবেন।’
বৃষ কেতু চাকমা বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন বাড়ি নির্মাণের ব্যাপারে কিছু দাবি জানিয়েছেন, আমি সেটা পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে জানাবো। পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে যেভাবে বলা হবে তাদের জন্য সেভাবেই কাজ করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।’
প্রসঙ্গত, লংগদুতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি পরিবারগুলো এর আগে সরকারি কোনও ত্রাণ সহায়তা গ্রহণ করেনি। গত ২ জুন অগ্নিকাণ্ডের পরপরই প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিলো। অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রায় ২০ দিন পর সরকারি এসব ত্রাণ গ্রহণ করেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। তবে অস্থায়ী পুনর্বাসন কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ আশ্রয় গ্রহণ করেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্তরা এসব পাহাড়ি লোকজন মানিকজোড়ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটিলা বনবিহার ও আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। তারা এতদিন সরকারি ত্রাণ সহায়তা গ্রহণ না করলেও বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করেছে।
লংগদু থানার ওসি মো. মুমিনুল হক বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নিরাপত্তার জন্য এখনও অস্থায়ী তিনটি ক্যাম্প রয়েছে। আর পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর টিম টহলে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে।’
এদিকে ত্রাণ নিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ করে জেএসএস’র সাধারণ সম্পাদক মনিশংকর চাকমা বলেন, ‘লংগদুতে নতুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসার পর তিনি আমাদের ডাকেন। আমরাও তার ডাকে সাড়া দিয়ে কিছু ত্রাণ নেই। কিন্তু আমাদের কোনও কম্বল না দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সেটা প্রচার করছে। তাই আমরা এসব ফেরত দেওয়ার জন্য নির্বাহী অফিসারে সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। আজ (২৩ জুন) শুক্রবার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। যদি পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের থেকে আমাদের জন্য সহযোগিতা করা হয় আমরা সেটি গ্রহণ করবো।’
লংগদু সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুলিন মিত্র আদু বলেন, ‘প্রতি পরিবারকে এক হাজার টাকা করে দুই শতাধিক পরিবারের জন্য যে টাকার প্রয়োজন, তা দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র ২০ হাজার টাকা। আর কম্বল দেওয়া হয়েছে আজ সকালে। ত্রাণ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। চালের বস্তা থাকলেও আমরা সেগুলো এখনও হাত দেইনি ‘
এর আগে বৃহস্পতিবার (২২ জুন) তিনটিলা বনবিহারে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নগদ এক হাজার টাকা, ২০ কেজি চাল ও একটি করে কম্বল বিতরণ করা হয়। সরকারি এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাদ্দেক মেহেদী ইমাম।
লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাদ্দেক মেহেদী ইমামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১ জুন) লংগদু উপজেলার সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মোটরসাইলেক চালক নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ দীঘিনালার চারমাইল এলাকায় পাওয়া যায়। ২ জুন সকালে প্রতিবাদ মিছিল থেকে স্থানীয় পাহাড়িদের দোকান, বসত ঘরসহ চারটি গ্রামের দুই শতাধিক বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়।
এদিকে, শুক্রবার (৯ জুন) খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলে তারা নয়ন হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেয় বলে জানায় পুলিশ। নয়নের মোটরসাইকেলটিও দীঘিনালার মাইনী নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার দুই ব্যক্তি রমেল চাকমা ও জুনেল চাকমা পুলিশকে জানিয়েছে, মোটরসাইকেল ছিনতাই করার জন্যই তারা নয়নকে হত্যা করে। তবে নয়ন হত্যাকান্ডে পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মোটরসাইকেলটি কোথাও নিয়ে যেতে পারেনি হত্যাকারীরা। সেটি বিক্রি করতে না পেরে তা মাইনী নদীতে ফেলে দেয় তারা।
রিপোর্ট বাংলা ট্রিবিউনের।