তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক:
ফেসবুকে পোস্ট করা ছবিতে বেশি ‘লাইক’ না পড়ায় মুখ ভার হয়েছিল এক কিশোরীর। নিজেকে বাইরের জগৎ থেকে গুটিয়ে নিয়ে স্কুলে যাওয়া কার্যত বন্ধ করে দিয়েছিল কলকাতার একটি স্কুলের ওই ছাত্রী। এর পরে লাইক পাওয়ার জন্য বিভিন্ন পোশাকে, বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি পোস্ট করতে থাকে সে। উদ্দেশ্য একটাই, অন্য বন্ধুদের থেকে লাইক-এর সংখ্যা বাড়াতে হবে।
ওই ছাত্রীই শুধু নয়। একই পথের পথিক বহু কিশোরও। শুধু তা-ই নয়, অচেনা কাউকে ফেসবুকে বন্ধু বানিয়ে ব্যক্তিগত কথা ভাগ করা বা কোনও সহপাঠীর ছবি পোস্ট করে ব্যঙ্গ করার ঘটনা ঘটে চলেছে ভূরি ভূরি। ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি এই সব নেতিবাচক দিক কার্যত গ্রাস করছে স্কুলপড়ুয়াদের। এই কুপ্রভাব থেকে তাদের বাঁচাতে উদ্যোগী হল রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর এবং ইউনিসেফ। সম্প্রতি এক বৈঠকে ঠিক হয়েছে, শহরের স্কুলগুলিতে অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এর জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে শহরের ৩০টি স্কুলকে।
ইউনিসেফের তরফে মৌমিতা দস্তিদার জানান, ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়ার বহু ইতিবাচক দিক আছে ঠিকই। কিন্তু এর পাশাপাশি রয়েছে নেতিবাচক বেশ কিছু দিকও। স্কুলে স্কুলে সচেতনতা-প্রচার শুরু করলে এখনকার তরুণ প্রজন্মকে ওই কুপ্রভাব থেকে রক্ষা করা যাবে। সে কারণেই এমন উদ্যোগ।
মৌমিতা জানান, এখন অনেক কম বয়সেই পড়ুয়াদের হাতে এসে যাচ্ছে স্মার্টফোন। সেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারা নিজেদের অজান্তেই খারাপ দিকগুলির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। নিজেদের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য পোস্ট করছে হরেক রকমের ছবি। বন্ধুর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অচেনা ব্যক্তিদেরও বন্ধুর তালিকায় ঠাঁই দিচ্ছে তারা। মৌমিতার মতে, ব্যক্তিগত জীবনের নানা সমস্যাও তারা অকপটে পোস্ট করে দিচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ফলে বাড়ছে ভুল পথে চালিত হওয়ার ঝুঁকি। অপ্রয়োজনীয় চ্যাটিং, ছবি হ্যাক করে ভুয়ো প্রোফাইল তৈরি করা, হোয়াটসঅ্যাপে সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকায় সমাজ থেকেও দূরে সরে যাচ্ছে এমন পড়ুয়ারা। এদেরই বাঁচাতে পদক্ষেপ করতে চায় স্কুলশিক্ষা দফতর।
কী ভাবে হবে প্রশিক্ষণ?
দফতরের এক কর্তা জানান, কলকাতার ৩০টি স্কুলের তালিকা দেওয়া হবে ইউনিসেফকে। তারা ওই স্কুলগুলিতে গিয়ে কর্মশালার মাধ্যমে শিক্ষক ও পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেবেন। তার পরে প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে স্কুলে আলোচনাচক্রের আয়োজন করবে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা। আলোচ্য বিষয়, ইন্টারনেট ব্যবহারের কুফল। তাতে অংশগ্রহণ করবে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির পড়ুয়ারা। ধাপে ধাপে কলকাতার সব স্কুলকেই এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। সর্বশিক্ষা মিশনের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ মতো এই প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।’’
স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা আরও জানিয়েছেন, শিক্ষকেরা এই প্রশিক্ষণ পর্বে শুধু নজরদারি করবেন। হাতেকলমে সব কিছু করানো হবে পড়ুয়াদের দিয়েই। ফলে তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে।
পাশাপাশি অভিভাবকদেরও বলা হবে, তাঁরা যেন সন্তানকে সময় দেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ব্যক্তিগত সমস্যা ভাগ না করে যেন পড়ুয়ারা সেগুলি তাঁদের কাছে খোলাখুলি বলতে পারে।
হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক তুষারকান্তি সামন্ত বলেন, ‘‘গোটা রাজ্যে এ ভাবে অভিভাবকদের সচেতন করতে পারলে আশা করি সুফল পাওয়া যাবে।’’ মনোরোগের চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বলেন, ‘‘ইন্টারনেটের কুফল থেকে পড়ুয়াদের বাঁচাতে বিকল্প হিসেবে খেলাধুলো বা পরিবারের লোকের সাহচর্য একান্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি, অভিভাবকদেরও বুঝতে হবে, সন্তানেরা তাঁদেরকেও কাছে পেতে চায়।’’
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা