কক্সবাজারে গ্রেফতার হওয়া ভুয়া মেজর আনোয়ার পাশাকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। গত ৬ জুলাই তাকে গ্রেফতার করে রামু থানার পুলিশ। বর্তমানে তিনি কক্সবাজার কারাগারে রয়েছেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল জানান, আনোয়ারের প্রতারণা ও কুকীর্তির সব তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ।তবে তদন্তের স্বার্থে সেসব প্রকাশ করা যাবে না বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘আনোয়ার পাশা ময়মনসিংহের গফুরগাঁও উপজেলার শহীদনগর এলাকার নাজিম উদ্দিনের ছেলে। থাকেন ঢাকার দক্ষিণ বনশ্রী মেইন রোডের কে-ব্লকের ৭৪ নম্বর বাড়িতে। অল্প শিক্ষিত হলেও কথাবার্তায় খুবই চটপটে তিনি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেকে কখনও গোয়েন্দা সংস্থা ‘এনএসআই’, ‘ডিজিএফআই’ ‘ডিজি’র স্টাফ অফিসার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, আবার কখনও সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখার মেজর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিসহ নানাজনের কাছ থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনৈতিকভাবে সুবিধা আদায় করেছেন। মাসখানেক আগে একবার র্যাবের হাতে আটক হন আনোয়ার পাশা। ওই সময় ঢাকার খিলগাঁও থানার মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হলেও তিনি জামিনে বেরিয়ে যান।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আনোয়ার পাশা একজন বড় মাপের প্রতারক। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বড় কর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে স্থানীয় রাজনীতিবিদ, সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এরপর থেকে এই প্রতারককে ধরতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নামে। সর্বশেষ গত ২ জুলাই আনোয়ার পাশা কক্সবাজারে এসে কলাতলীতে প্রাইম পার্ক নামের একটি হোটেলে অবস্থান নেন। সেখান থেকে কক্সবাজারের স্থানীয় রাজনীতিবিদ, সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিকে ফোন করে সেনাবাহিনীর মেজর এবং গোয়েন্দা সংস্থা ‘ডিজিএফআই’র বড় কর্মকর্তা পরিচয় দেন।’ এএসপি টুটুল বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের ফোন করে আনোয়ার পাশা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুকদের ডাটা সংগ্রহ করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসেছেন তিনি। এই তথ্য
পাওয়ার পর তাকে গ্রেফতারের জন্য জাল বিস্তার করে পুলিশ।’
রামু থানার ওসি একেএম লিয়াকত আলী বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তার অবস্থান শনাক্ত করে রামু থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।’
রামু থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ কবির বলেন, ‘গত ৬ জুলাই আনোয়ার পাশাকে গ্রেফতারের পর আদালতে তুলে রিমান্ড আবেদন করা হলে তাকে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। তাকে যেকোনও দিন রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার বিরুদ্ধে রামু থানায় দু’টি মামলা করা হয়েছে।’
গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্বদানকারী রামু থানা পুলিশের এসআই আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রামু উপজেলার রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে থেকে আনোয়ার পাশাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে পাঁচটি মোবাইল সেট, পাঁচটি সিম কার্ড, চার হাজার টাকা ও ৩০ ইউএস ড্লার উদ্ধার করা হয়।’
এদিকে, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির প্রতিনিধি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে গোয়েন্দা সংস্থার মেজর পরিচয় দিয়ে সংসদ সদস্য বদিকে মোবাইল ফোনে কল করেন আনোয়ার পাশা। ফোনে তিনি জানান যে,আগামী নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এসেছেন। সম্ভব হলে তার জন্য ৫০ থেকে ১ লাখ টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠানোর কথাও বলা হয়। এতে এমপি আব্দুর রহমান বদির সন্দেহ হয়। এমপি তখন ঢাকায় অবস্থান করার কারণে আনোয়ার পাশাকে পরে দেখা করার কথা বলেন।’
জানা যায়, আনোয়ার পাশা কক্সবাজারে একইভাবে ফোন দিয়েছেন রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইমুম সরওয়ার কাজলকেও। তবে সাইমুম সরওয়ার কাজল এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি। এছাড়াও মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকছুদ মিয়া, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গেও একই কায়দায় কথা বলেন ওই প্রতারক। বিষয়টি জানার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতারক আনোয়ার পাশা গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অনেক কিছু স্বীকার করেছেন। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনে মনোয়নপ্রত্যাশী যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তাদের নামও বলেছেন। কিন্তু, লোকলজ্জার ভয়ে এসব জনপ্রতিনিধি তা অস্বীকার করছেন।
রিপোর্ট বাংলা ট্রিবিউনের।