তোফায়েল আহমদঃ
কক্সবাজারকে একটি ‘উন্নতমানের বিশেষ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং পরিপূর্ণ পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকারের আলাদা নজর রয়েছে। সরকারের ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কক্সবাজারে। গত দুই বছরে এখানে ২৫ মেগা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলেই বদলে যাবে কক্সবাজার।
‘সরকারের সাফল্য, অর্জন ও উন্নয়ন ভাবনা’ শিরোনামে এক মতবিনিময় সভায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন এ কথা বলেন। গত বুধবার তাঁর সম্মেলন কক্ষে ওই সভায় জেলা প্রশাসক জানান, স্বাধীনতার পর দেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প ‘মাতারবাড়ি তাপভিত্তিক কয়লা বিদ্যুেকন্দ্র’ কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদনের লক্ষ্যে ওই প্রকল্পের জন্য ১৪১৪ একর জমি ইতোমধ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। জাইকা ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে এতে খরচ করবে ৩৮ হাজার কোটি টাকা। অন্য মেগা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এলএনজি ও কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুেকন্দ্র, মাতারবাড়ীতে ৭০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্প, ইজিসিবি লিমিটেড কর্তৃক ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ, মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন, ধলঘাটা মৌজার ৬৭০ একর জায়গার ওপর অর্থনৈতিক জোন স্থাপন, ইন্টলেশন অব সিঙ্গেল মুরিং (এসপিএম) প্রকল্প, কক্সবাজার ফ্রি ট্রেড জোন, মহেশখালী অর্থনৈতিক জোন-১, মহেশখালী অর্থনৈতিক জোন-২ ও মহেশখালী অর্থনৈতিক জোন-৩। এছাড়া টেকনাফে বাস্তবায়িত হচ্ছে সাবরাং অর্থনৈতিক জোন ও জালিয়ারদ্বীপ অর্থনৈতিক জোন। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। আরো রয়েছে দোহাজারী থেকে ঘুনধুম রেললাইন প্রকল্প, মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণ, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, রামুতে দ্বিতীয় বিকেএসপি, সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্র, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণ, সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন, মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ, এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক নির্মাণ, পেকুয়া-বদরখালী-মহেশখালীর ইউনুচখালী-কোহেলিয়া নদীর পাড় হয়ে মাতারবাড়ীতে সংযোগ সড়ক নির্মাণ, চকরিয়া উপজেলায় বদরখালী সড়কের বাটাখালী ব্রিজের দুই কিলোমিটার এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ, খুরুশকুল-চৌফলদণ্ডী ঈদগাঁও সড়কের চৌফলদণ্ডী ব্রিজ এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ, এবিসি সড়ক ও পৌরসভা উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যানসহ ঘুনধুম সীমান্তে নির্মাণ করা হচ্ছে সীমান্ত সড়ক। আরো আছে ছোট-বড় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ।
জানা গেছে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর নেতৃত্বে ১২টি মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের একটি দল গত ২৮ জানুয়ারি কক্সবাজার সফর করেন। তাঁরা মহেশখালী দ্বীপ থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সরেজমিন লে-আউট প্ল্যান প্রণয়ন ছাড়াও স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তাঁরা মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ি, ধলঘাটা, উত্তর নলবিলা, ঘটিভাঙা এবং সোনাদিয়া দ্বীপসহ টেকনাফের সাবরাং ও জালিয়ারদিয়া পরিদর্শন করেন। সফরকালে দ্বীপে একের পর এক বড় শিল্প কারখানা স্থাপন প্রক্রিয়ায় ভূমি ব্যবহারের সম্ভাব্যতা নিয়ে তাঁরা কাজ করেন।