প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু:
কক্সবাজারের রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড়ের নাম লট উখিয়ার ঘোনা। গ্রামটি শত শত বছর ধরে বড়ুয়া অধ্যুষিত বলে এটা বড়ুয়াপাড়া নামে পরিচিত। অফিসিয়াল ভাবেও এর ব্যবহার আছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত গ্রামে বড়ুয়াপাড়া নামে কোন সাইন বোর্ড টাঙ্গানো বা দাঁড় করানো হয়নি। বিগত কয়েক বছর আগে উখিয়ারয়োনা বড়ুয়াপাড়ায় বসতি স্থাপন করেন মো: নুরুল ইসলাম। তার দাবি ২০১০ সালে থেকে তিনি এখানে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। কিন্তু নিজে থাকতেন না। তার দুই স্ত্রীর মধ্যে এক স্ত্রী থাকেন। সাথে উপযুক্ত ছেলেমেয়েরাও থাকেন। নুরুল ইসলাম সম্প্রতি এখানে ফিরেছেন। এলাকাবাসির দাবি, তিনি আসার পর থেকে একের পর এক অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। তার উৎপাতের কারণে আশেপাশের কেউ ভাল থাকতে পারছেন না। নির্যাতন, ভূমি দস্যুতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি সহ ’৭১ আলবদর বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ততার গুরুতর অভিযোগ সহ নানা অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
নুরুল ইসলামের খবর আমরা জানতে পারি গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে। কয়েক পুরুষ ধরে গ্রামের বড়ুয়াদের সাথে মিলে মিশে বসবাস করে আসছেন নূর কাদের। অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির লোক। নুর কাদেরের দাবি নুরুল ইসলাম জোর করে তার বসতভিটার একাংশ দখল করেন। এই নিয়ে একাধিকবার বাক-বিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে গত বছর ৩০ জুন সকালে নুরুল ইসলাম এবং তার পরিবারবর্গ মিলে নূর কাদেরকে টেনে হিঁচড়ে তাদের বাড়িতে নিয়ে যান। তারপর ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে নূর কাদেরের উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন চালানো হয়। নূর কাদেরের শোর আর্ত চিৎকারে শত শত মানুষ জমে যায়। কিন্তু কেউ তাকে উদ্ধার করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত পুলিশের সহায়তায় রক্তাক্ত এবং অজ্ঞান অবস্থায় নূর কাদেরকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করে নুরকে রামু হাসপাতালে নেয়া হলে সেখান থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। নূর কাদের প্রাণে বেঁচে গেলেও কোন ক্ষতিপূরণ এবং বিচার পায়নি।
আমি বিষয়টি জানতে পারি ৫ জুলাই। এমন অবিচার কেন ? আমরা ঘটনাস্থলে গেলাম। নূর কাদেরের বৃদ্ধ বাবা অবুঝ শিশু এবং স্ত্রীর সাথে কথা বললাম। এরপর নুরুল ইসলামের বাড়ি গেলাম। নুরুল ইসলাম বাড়িতে নেই। তার স্ত্রী রহিমা বেগম বাড়িতে ছিলেন। তিনি প্রথমে আমাদের সাথে কথা বলতে না চাইলেও পরে কথা বলেন। কিন্তু দিবালোকে প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে নূর কাদেরের উপর করা অবিচারের জন্য এতটুকুও অনুতপ্ত হলেন না। বরং একের পর এক মিথ্যা বলে যাচ্ছিলেন রহিমা বেগম। আমরা ধৈর্য্য ধরে সব কথা হজম করলাম। বুঝতে পারলাম তারা আলাপ আলোচনা এবং সামাজিকতার ধার ধারেন না।
আমরা সন্ধ্যার সময় ফিরে আসলাম। পরের দিন পুলিশ নুরুল ইসলামকে ধরতে যায়। সকালে আবারও শত শত মানুষ জমে যায়। নুরুল ইসলাম পালিয়ে যান।
নুরুল ইসলামকে পুলিশ ধরতে যাওয়ায় স্থানীয় মেম্বার এবং চেয়ারম্যানসহ থানায় আপস করতে যান। স্ট্যাম্প চুক্তি হল নুরুল ইসলাম নূর কাদেরের যাবতীয় চিকিৎসা খরচ বাবদ পচিঁশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিবেন। কিন্তু চেয়ারম্যান এবং পুুুলিশ কেউ টাকা আদায় করতে পারেনি কিংবা আদায় করার জন্য যথেষ্ট আন্তরিক ছিলেন না।
পরের বার নুরুল ইসলামকে না পেয়ে পুলিশ তার বিদেশী গরু জব্দ করে স্থানীয় চেয়ারম্যানের জিম্মায় দেয়। গরু জব্দ করেও টাকা আদায় করা যায়নি। কয়েক দিন পর নুরুল ইসলাম তার গরু অনায়াসে ফেরত পেয়ে যান। নুরুল ইসলামের স্ত্রীর কথাই সত্যি হল। তিনি বলেছিলন গরু যেভাবে নিচ্ছে সেভাবে ঘরে এনে দিতে হবে।
এদিকে নুর কাদেরের চিকিৎসা চলে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে বেড ছাড়ার নির্দেশ দেন । নুর কাদেরের একটি গরু ছিল। চিকিৎসা খরচ যোগাতে সেটা বিক্রি করতে বাধ্য হন নুর কাদেরের পরিার। গরু বিক্রির টাকা দিয়ে থানায় মামলা এবং চিকিৎসার আংশিক খরচ নির্বাহ করেন।
কোন ধরনের বিচারের সম্মুখীন না হওয়া নুরুল ইসলাম টাকার জোরে তখন রীতিমত আইন নিয়ে খেলেছেন। নুর কাদেরের করা মামলায় নুরুল ইসলাম ধরা ছোয়ার বাইরে ছিলেন। অবিশ্বাস্য এবং হাস্যকর হল পরে তিনিও থানায় মামলা করতে যান। থানা যেহেতু প্রকৃত ঘটনাটি জানত, তাই থানা তার মামলা প্রথমে গ্রহন করেনি ।
অবশেষে নুরুল ইসলাম ১৪/৭/২০১৫ ইংরেজী তারিখে মামলা দায়ের করার জন্য কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে লিখিত অভিযোগ করেন। আদালত মামলা গ্রহণ এবং তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য রামু থানাকে আদেশ করেন। থানা মামলা রুজু করে এবং তদন্ত পূর্বক ২৯/২/২০১৬ ইংরেজী আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।
প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে এবং আসামীগণ আদালতে হাজির না হওয়ায় আদালত আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেন।
নুরুল ইসলাম মামলায় ৫ জন কে আসামী করেন। মামরায় (১) নুর কাদের (২) মোস্তফা কামাল (৩) নুর কাদেরের ভাই সামশুল আলম (৪) বাদশা মিয়া (৫) নুর কাদেরের অপর ভাই আবদুল কাদেরকে আসামী করা হয়। আসামীদের মধ্যে নুর কাদের এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন, বৃদ্ধ বাদশা মিয়া লাঠিতে ভর দিয়ে হাটা চলাচল করেন, মোস্তফা কামাল বাক প্রতিবন্ধী।
ঘটনা এখানে শেষ নয় । নুরুল ইসলাম কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল থেকে জখমী সনদ নিয়েছেন। কিভাবে সম্ভব হল ? নুরুল ইসলাম মামলার এজাহারে লিখেছেন ‘৩০/০৬/২০১৫ ইং সকাল আনুমানিক ৮ ঘটিকার সময় আসামীগণ পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ধারালো লম্বা, কিরিচ, দা, লাঠি, লোহার রড ইত্যাদি মারাত্নক অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত হইয়া অধীনের বসত বাড়ীর উঠানে অনধিকার প্রবেশ করিয়া অধীনের স্ত্রী রহিমা বেগমকে বিনা কারণে গালিগালাজ করিতে থাকলে অধীনের স্ত্রী রহিমা বেগম তাদের এই গর্হিত কাজে নিষেধ করায় ১ নং আসামী (নির্যাতনের শিকার নুর কাদের) তাহার হাতে থাকা কিরিচ দ্বারা অধীনের উদ্দেশে মাথা লক্ষ্য করিয়া স্বজোরে কোপ মারিলে উক্ত কোপ তাহার মাথার বামপার্শ্বে লাগিয়া গুরুতরভাবে হাড়কাটা জঘম হয়। সাথে সাথে ২নং আসামী (ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং প্রতিবাদকারী মোস্তফা কামাল) খুন করার উদ্দেশ্যে অধীনের স্ত্রী রহিমা বেগমকে লোহার রড দিয়া মাথায় স্বজোরে আঘাত করিলে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে রহিমা বেগমের বাম পাশের পাঁজরে লাগিয়া বাম পাজরের তিনটি হাড় ভাঙ্গিয়া দ্বিখন্ডিত হইয়া গুরুতর জখম হয়। অধীনের ছেলে সাইফুল ইসলাম তার মাকে উদ্ধারের জন্য আগাইয়া আসলে ৩নং আসামী (বাক-প্রতিবন্ধী শামশুল আলম) তাহার হাতে থাকা ধারালো কিরিচ দ্বারা হত্যার উদ্দেশ্যে মাথা লক্ষ্য করিয়া স্বজোরে কোপ মারিলে উক্ত কোপ জখমী সাইফুল ইসলামের মাথার মাঝখানে লাগিয়া গুরুতর রক্তাক্ত হাড়কাটা জখম হয়। ৪নং আসামী (বয়োবৃদ্ধ বাদশা মিয়া) অধীনের স্ত্রী রহিমা বেগমের পরিহিত কাপড় চোপড় টানা হেচড়া করিয়া শালীনতা হানি করে। ৫নং আসামী ( নুর কাদেরের অপর ভাই আবদুল কাদের) অধীনের স্ত্রী রহিমা বেগমকে হত্যার উদ্দেশ্যে স্বজোরে লাথি মারিলে আঘাতের ফলে অধীনের ছেলে সাইফুল ইসলাম মাটিতে লুটাইয়া পড়িলে আসামীগণ তাহাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাহাদের হাতে থাকা লাঠি দ্বারা এলোপাতাড়ী আঘাত করে। মারিয়া সর্ব শরীরে মারাত্মক জখম করে’।
মামলায় আসামীগণের বিরুদ্ধে ভাংচুর করে ১ লক্ষ টাকা এবং লুটপাট করে ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি করার অভিযোগও আনা হয়।
আহতদের প্রথমে রামু হাসপাতালে এবং পরে সেখান থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে বলে উল্লেখ আছে। অথচ ঘটনার পরদিন আমরা যখন ঘটনাস্থলে যাই তখন বাড়ির পুরুষ সদস্যরা পলাতক থাকলেও কথিত জখমী রহিমা বেগম আমাদের সাথে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করেন। তাকে আমরা পুরোপুরি সুস্থ অবস্থায় দেখেছি। তিনি আমাদের সাথে রীতিমত উত্তেজিত হয়ে কথাও বলেন। তাছাড়া সেদিন সন্ধ্যায় উখিয়ারঘোনা থেকে ফিরে আমি এবং সাংবাদিক একে এম আতিকুজ্জামান নির্যাতিত নুর কাদেরকে দেখার জন্য সোজা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে যাই। সেখানে কথিত আহত নুরুল ইসলামদের খোঁজাখুজিঁ করি কিন্তু কোথাও তাদের পাওয়া যায়নি। অবশেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে হাসপাতালের রেকর্ডেও তাদের পাওয়া যায়নি।
মামলার ৪ নং আসামী বাদশা মিয়া। তাঁর বয়স এখন প্রায় ৭০ বছর। লাঠিতে ভর দিয়ে চলাফেরা করেন। তিনিই রহিমা বেগমকে শালীনতাহানি করলেন! নূর কাদেরের উপর নির্যাতন করার ঘটনায় নুরুল ইসলাম গ্রেপ্তার বা বিচারের সম্মূখীন না হলেও পরবর্তীতে নুরুল ইসলামের করা সাজানো মামলায় আজকে প্রায় ১ বছর নূর কাদের এবং মামলার অপর আসামীরা বিনা অপরাধে পুলিশ আতংকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় পুলিশ তাদেরকে একাধিকবার গ্রেপ্তার করার জন্য অভিযান চালিয়েছেন। গ্রেপ্তার হবার ভয়ে প্রায় রাতে তারা নিজের ঘরে থাকেননা। এভাবেই চলছে তাদের জীবন।

মাঝখানে নুর কাদেরের সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়নি। তাই এসব খবরও আমরা জানতাম না। গত ৮ মে আমি অন্য একটা কারণে উখিয়ারঘোনা গেলে নূর কাদেরের খবর নেয়ার জন্য আমি তার বাড়িতে যাই। তখন উঠে আসে আরেক অমানবিক খবর। খবরটা হল ৭ মে রাতে নূর কাদেরের নির্যাতনকারী এবং মামলার বাদী এবং আসামী নুরুল ইসলামের বাড়িতে রাতে একটা সমঝোতা বৈঠক হয়েছিল। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় আগামী ১২ মে বৃহস্পতিবার নূর কাদের তার বাড়ি ভিটে নুরুল ইসলামকে দিয়ে ছেড়ে চলে যাবেন। তার বিনিময়ে নুরুল ইসলাম নূর কাদের এবং মামলার অপর আসামীদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিবেন। নুরুল ইসলাম এসপিকে বলে দেবেন তাদেরকে ধরার জন্য আর যেন পুলিশ না পাঠান। আর যদি নূর কাদের নিজের ইচ্ছায় বাড়ি ভিটে ছেড়ে চলে না যান তাহলে মামলার অপর আসামীদের নূর কাদেরের বাড়ি ভেঙ্গে ভিটে মাটির দখল নুরুল ইসলামকে বুঝিয়ে দিতে হবে। আসামীগণ নিজেরা হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য নুরুল ইসলামের এই অমানবিক প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন।
নুরুল ইসলাম সেদিন বর্বর হামলা চালিয়ে যেটা করতে পারেননি, সেটা করার জন্য নূর কাদেরের বাবা, ভাই এবং মামলার অপর আসামীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শতাধিক বছরের পুরানো বাড়ি ভিটে ছেড়ে চলে যেতে হবে একথা ভেবে নূর কাদের চোখের জলে বুক ভাসান। নুর কাদের চান বৃহস্পতিবার যেন সহসা না আসে।
এই লেখাটি লিখতে গিয়ে আমাকে বার বার চোখের জল মুছতে হয়েছে। ‘মগের মুল্লুক’ একটা প্রবাদ ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। পরে এর মানে জানলাম ‘অরাজকতা’ বুঝাতে মগের মুল্লুুক কথাটি ব্যবহৃত হয়। আমাদের চারপাশে চলা এই অরাজকতা কি চলতেই থাকবে। নূর কাদেররা কি চিরকালই নির্যাতিত হতে থাকবে মানবিক এই সমাজে ? কেউ কি তাদের পাশে দাঁড়াবেননা ?
রামুতে ইসলামাবাদ! কে এই নুরুল ইসলাম ?
নুরুল ইসলাম থেমে নেই, থেমে নেই তার জবর দখল এবং হুমকি-ধমকি। তিনি একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছেন। শত বছরেরও অধিক সময় ধরে বসবাসকারী তার আশপাশের অনেক পরিবার বর্তমানে উচ্ছেদ আতংকে আছেন। কখন নুরুল ইসলাম তাদের তাড়িয়ে দেয়। কারণ তিনি যেকোন উপায়ে তার আশপাশের ভিটে, জমি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তবে প্রথমে তিনি এলাকার নাম পাল্টাতে চান। তিনি বড়ুয়াপাড়া বাদ দিয়ে ইসলামাবাদ নামকরণ করতে চান ? পাকিস্তানের রাজধানী এবং সব থেকে বড় শহরের নাম ইসলামাবাদ। বাড়ির নামকরণ করতে চাইলে ইসলাম ভবন বা ভিলা এ জাতীয় নামকরণ হতে পারত। তার মাথায় ইসলামাবাদ আসল কেন ? আমার জানার আগ্রহ বেড়ে গেল।
এলাকার বয়স্ক অনেকের মতে, দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নুরুল ইসলাম আলবদর বাহিনীর হয়ে কাজ করতেন। এলাকার ছৈয়দুজ্জামান (৭৫) জানান, ‘৭১ এ নুরুল ইসলামকে তিনি আলবদর বাহিনীর পোশাক পরিহিত সশস্ত্র অবস্থায় দেখেছেন। নুরুল ইসলাম তখন কক্সবাজার বিমান বন্দরে থাকতেন। এলাকায় এসে গুলি ছুড়ে মানুষকে ভয় ভীতি দেখাতেন। অনেকের বাড়িতে ডাকাতিও করতেন। এলাকায় বেশিরভাগ মানুষ নুরু রাজারকার হিসেবে জানেন। কক্সবাজার বিমান বন্দরে যখন বোমা পড়ে তখন নুরুল ইসলাম রামুতে চলে আসেন এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে রামু খিজারী হাইস্কুলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। পরে সেখান থেকে সরে পড়েন। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর এলাকা ছেড়ে চলে যান’।
জানা যায়, এত দীর্ঘ সময় ধরে তিনি কুমিল্লাতে ছিলেন। এখন আবার নতুন করে রামুতে শেকড় বিস্তারের চেষ্টা করছেন। টাকা আছে বলে অনেকের কাছ থেকে সহযোগীতাও পাচ্ছেন। সময়ে হয়তো এভাবে তিনি এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। এখন জোর চেষ্টায় আছেন মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র আদায় করার জন্য। নুরুল ইসলাম এখন নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করা শুরু করেছেন। অনেকে তার সাথে গলাও মেলাচ্ছেন। কিন্তু কোন সেক্টরে, কার অধীনে, কোথায়, কখন যুদ্ধ করেছেন তা বলতে পারেননা।
নুরুল ইসলাম প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছেন। তিনি বিভিন্ন কাগজপত্রে উখিয়ারঘোনা বড়ুয়াপাড়ার পরিবর্তে ইসলামাবাদ লেখা শুরু করেছেন। এমনকি ৪ নং কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে নেওয়া জাতীয়তা সনদপত্রেও ইসলামাবাদ উল্লেখ করে নুরুল ইসলামকে জাতীয়তা সনদপত্র দিয়েছেন (অবশ্যই মামলার এজাহারে বড়ুয়াপাড়া উল্লেখ করেছেন)। অথচ এলাকার চেয়ারম্যান নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা। শত শত বছর ধরে যে পাড়া বা এলাকার নাম বড়ুয়া হিসেবে পরিচিত এবং সর্বজন বিদিত, সেই এলাকার নাম বিকৃত করে জাতীয়তা সনদপত্র দেওয়া কতটা যুক্তিক।
বড়ুয়াপাড়া নামটির পরিবর্তন কি বেশি জরুরী হয়ে পড়েছে ? তাও আবার ইসলামাবাদ! এখন ইসলামাবাদ নাম দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছেন। এই বিষয়ে এলাকার কেউ কেউ জানার জন্য তার বাড়িতে গেলে গত ৭ মে নুরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন। এখন এই নিয়ে গ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনা বেশিদূর না গড়ানোর আগে বিষয়টি সমাধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাই।