ক্রীড়া ডেস্কঃ
চিকিৎসকরা মনে করছেন, চোট যথেষ্টই গুরুতর। তবে প্রায় দেড় যুগে অসংখ্য চোটের সঙ্গে লড়াই করে নিজের শরীর সম্পর্কে ভালো ধারণা হয়ে গেছে মাশরাফি বিন মুর্তজার। আঙুলের চোটকে ততটা বড় মনে করছেন না বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। চোট আছে তার উরুতেও। আপাতত খুব একটা গুরুতর মনে করা হচ্ছে না এটিকেও।
ডান হাতের কনিষ্ঠায় এই চোট মাশরাফি পেয়েছিলেন এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে। চোট নিয়ে সেদিনের ম্যাচে পরে বোলিং করেছেন। খেলেছেন ফাইনালও। দেশে ফেরার পর করানো হয়েছে স্ক্যান। তাতে চোটকে যথেষ্টই গুরুতর মনে করেছেন ডাক্তাররা। তবে বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীস চৌধুরী জানালেন, মাশরাফি নিজে চোটকে ততটা বড় মনে করছেন না।
“মাশরাফির কনিষ্ঠ আঙুলের আঘাতটা একটু গুরুতর। তবে আমরা যতটা বড় মনে করছি, মাশরাফি নিজে তা মনে করছে না। আমরা স্ক্যান রিপোর্ট যদি দেখি, তাহলে ব্যাপারটা এক রকম আর রোগীর দিক থেকে দেখলে আরেকরকম। আমরা রোগীর কথাকেই বেশি গুরুত্ব দেই।”
“মাশরাফি বলেছে, এই চোট নিয়ে দুটি ম্যাচ খেলেছে। খুব সমস্যা হবে না। যে আঙুলে চোট, বোলিংয়ে তা ততটা লাগে না। ব্যাটিংয়ে কাজে লাগে। সাধারণ দুই-তিন সপ্তোহের মধ্যেই এই ধরনের ইনজুরি ঠিক হয়। এক সপ্তাহ চলে গেছে। আশা করি, আর দুই সপ্তাহের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”
এশিয়া কাপ থেকে উরুর একটি চোট নিয়েও ফিরেছেন মাশরাফি। স্ক্যান করানোর পর অবস্থা পুরোপুরি বোঝা যাবে। তবে এটিকেও ততটা বড় মনে করছেন না দেবাশীস।
“ছোট একটা থাই ইনজুরি আছে ওর। একটা বল সরাসরি পায়ে লেগেছিল। এতে উরুতে রক্ত জমে যায়। একটা স্ক্যান করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। কালকে আরও একটি স্ক্যান করানো হবে সুনিশ্চিত হওয়ার জন্য। তার পর বোঝা যাবে যে রক্ত জমাট নাকি অন্য কিছু।”
“রক্ত জমাট না হলে দুটি উপায়ে এগোনো যেতে পারে। প্রথমত রক্ষণশীল উপায়। সাধারণত দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যেই শরীর এটি শুষে নেয়। আর সেটা না হলে অস্ত্রোপচার করতে হবে। তবে এই ধরনের চোটে সেটি খুবই বিরল।”
শুধু মাশরাফি নন, চোটের সঙ্গে লড়ছেন দলের আরও তিন সিনিয়র ক্রিকেটার। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও সাকিব আল হাসানের আঙুলের চোট নিয়ে উৎকণ্ঠা আছে যথেষ্টই। দেবাশীস চৌধুরী জানালেন, আপাতত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি দেশের বাইরে শল্যবিদদের সঙ্গে পরামর্শ করা হচ্ছে।
“দুই-চারদিনের ব্যবধানে সাকিবের আঙুল থেকে দুইবার লিকুইড সরানো হয়েছে। গতকাল শেষবারের মতো করা হয়েছে। অবস্থা উন্নতির দিকে। ব্যথা অনেকটাই কমে এসেছে। অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসার মধ্যে আছে। আরও সপ্তাহখানেক চলার পর ইনফেকশন কন্ট্রোলে আসবে।”
“একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় হাতের সার্জনের সঙ্গে সাকিবের সার্জারি নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেই সার্জনের কাছে ওকে পাঠানো হচ্ছে দুটি কারণে। সার্জারির প্রয়োজন আছে কিনা, আর সার্জারির প্রয়োজন হলে পরিকল্পনা কি। এসব রিভিউ করার জন্য সাকিবকে পাঠানো হচ্ছে। সার্জনের সঙ্গে যোগাযোগ সাপেক্ষে শুক্রবার হয়ত সাকিব অস্ট্রেলিয়া যাবে।”
পাঁজরে ব্যথা নিয়েই পুরো এশিয়া কাপ খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। ছিলেন দলের সেরা পারফরমারদের একজন। বিসিবির প্রধান চিকিৎসক জানালেন, আপাতত বিশ্রাম দিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে তাকে।
“মুশফিকের পাঁজরে চিড় আছে, ট্রমা আছে। যে কোনো ধরনের হাড়ে চিড় থাকলে সাধারণত চার থেকে ছয় সপ্তাহ লাগে সুস্থ হতে। কিন্তু পাঁজর যেহেতু বিশ্রাম পায় না, সবসময়ই নড়ে, পাঁজরের ইনজুরিতে তাই একটু বেশি সময় লাগে। আমরা ধারণা করছি, এক সপ্তাহ বেশি লাগতে পারে সময়।”
“মুশফিক এই সমস্যা নিয়েও ভালো পারফর্ম করেছে। আপাতত তাকে বিশ্রামে রাখা হয়েছে। এক সপ্তাহ ওকে আমরা পর্যবেক্ষণ করব। তার পর সমস্যা না হলে সে অনুশীলন করতে পারবে। সপ্তাহখানেক পরই ওর অবস্থা বুঝতে পারব।”
এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচেই আঙুলে চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। আপাতত তিনি পুনর্বাসনে আছেন। কদিন আগে ইংল্যান্ডে বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে এসেছেন। সেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শেই চলছে তামিমের পুনর্বাসন।
“তামিম ওর হাতের সমস্যা নিয়ে ইংল্যান্ডে হাতের সার্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ীই তামিমের রিহ্যাব প্ল্যান করা হয়েছে। চার থেকে পাঁচ সপ্তাহের রিহ্যাব প্রক্রিয়া এটি। এর মধ্যে কিছুদিন চলে গেছে। আরও সপ্তাহ তিনেক এভাবে চলবে।”
“২০-২৫ তারিখের দিকে আমরা তামিমের অবস্থা আবার পর্যালোচনা করব। তখন যদি দেখা যায় অবস্থা ভালোর দিকে, তাহলে হয়ত ক্রিকেট কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। তবে আশানুরূপ উন্নতি না হলে তখন পর্যালোচনা করে আবার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
বাংলাদেশের পরবর্তী সিরিজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২ টেস্ট ও ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলতে আগামী ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশে আসবে জিম্বাবুয়ে। ২১ অক্টোবর ওয়ানডে দিয়ে শুরু সিরিজ। সেই সিরিজে সাকিবকে পাওয়া যাবে না নিশ্চিতভাবেই। তামিম পারবেন না ওয়ানডে সিরিজে খেলতে, তবে টেস্টে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। মুশফিক ও মাশরাফির অবস্থা বোঝা যাবে সময়ে।