অনলাইন ডেস্কঃ
বান্দরবানের ঘুমধুম হয়ে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডরে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দোহাজারী-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম ধাপে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে রেলওয়ে করিডরে যুক্ত হওয়ার পথে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। এদিকে উখিয়া টিভি স্টেশনের পর থেকে ঘুনঘুম-মিয়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজও এখন শেষের পথে। ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম দোহাজারী-রামু রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু হয় গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে, আর দ্বিতীয় লটে রামু-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে মার্চের প্রথম সপ্তাহে। এরই মধ্যে কাজ এগিয়েছে যথাক্রমে ১৫ ও ১৭ শতাংশ। এডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুনধুম পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেলপথের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। রেলপথ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে যৌথভাবে চীনের দুটি এবং বাংলাদেশের দুটি প্রতিষ্ঠান। সরকারের পক্ষ থেকে তিন বছরের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার নির্দেশনা রয়েছে। এদিকে কক্সবাজার থেকে বান্দরবানের ঘুমঘুম সীমান্ত পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ কাজও শুরুর প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মফিজুর রহমান। প্রথম লটে দোহাজারী-রামু রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক সুকুমার ভৌমিক জানান, কাজ মাত্র শুরু হলেও অগ্রগতি সন্তোষজনক।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম-দোহাজারী ভায়া ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পটির উদ্বোধন করেছিলেন। বহুল প্রত্যাশিত রেলপথ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হবে চার হাজার ৯১৯ কোটি সাত লাখ টাকা এবং এডিবির ঋণ ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের ১৯ এপ্রিল একনেকের সভায় চট্টগ্রাম-দোহাজারী ভায়া ঘুনধুম রেলওয়ে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। চট্টগ্রাম-দোহাজারী ভায়া ঘুনধুম রেললাইন প্রকল্পে রয়েছে ৯টি নতুন রেলওয়ে স্টেশন, চারটি বড় ও ৪৭টি ছোট ব্রিজ, ১৪৯টি কংক্রিট বক্স কালভার্ট, ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট (পাইপ কালভার্ট), ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন রেললাইনে অত্যাধুনিক অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা সংযোজন এবং কক্সবাজার সৈকতে ঝিনুকের আদলে তৈরি করা হবে অত্যাধুনিক রেলস্টেশন। নতুন এই রেলপথটি তৈরি করতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উভয়দিকে প্রায় এক হাজার ৪০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ। অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যে কক্সবাজার জেলার এক হাজার একর এবং চট্টগ্রাম জেলার ৪০০ একর রয়েছে।
প্রকল্পের পরিচালক আরও জানান, কাজের অগ্রগতিও সন্তোষজনক। তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
এদিকে প্রকল্পটি ঘিরে দোহাজারী, কক্সবাজার ও বান্দরবানের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। ঘুনধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আলম বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের যেমন যোগাযোগ বাড়বে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হবে এই অঞ্চলের মানুষ।