অনলাইন ডেস্কঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তো পাস হয়ে গেছে। এ নিয়ে এখন মানববন্ধন করে কী লাভ হবে। পরেরবার ক্ষমতায় গেলে তখন পর্যালোচনা করে দেখা যাবে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের আপত্তি ও তা সংশোধনের দাবিতে মানববন্ধনের বিষয়টি আইনমন্ত্রী উত্থাপন করার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদে পাস হওয়ার পর আইনটি কার্যকর হয়ে গেছে। এ পর্যায়ে কিছু করার থাকে না। এখন সংশোধনী সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সেখানে এই আইন আরও কঠোর।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রচার আইনের বিভিন্ন দিক আলোচনার সময় আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাপারে সম্পাদক পরিষদের আপত্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। এরপর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তা নিয়ে কথা বলেন। সম্পাদক পরিষদকে দেওয়া তিন মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন তো জাতীয় সংসদে পাস হয়ে গেছে। এখনই এ বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনার কী আছে? আর এখন মানববন্ধন করে লাভ কী? পরেরবার ক্ষমতায় এলে দেখা যাবে।
আইনমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি পাস হয়েছে। কিন্তু আইনটির কিছু ধারায় পরিবর্তন চেয়ে সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিক নেতারা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। এরই অংশ হিসেবে আজ (গতকাল সোমবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে সম্পাদক পরিষদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পাদকরা তো বিভিন্ন সময় ভুল নিউজ ছেপে বলেন, সেটি তাদের নয়, একটি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার নিউজ। দুঃখ প্রকাশও করেন। তারা আমার বিরুদ্ধে লেখেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে তো কিছু লেখেন না।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের পিছু হটার পেছনে ড. মুহম্মদ ইউনূসের পাশাপাশি দেশের একজন সম্পাদকেরও ভূমিকা রয়েছে। একজন সম্পাদক তো আমার বিরুদ্ধে লেখার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকেন। পদ্মা সেতুর জন্য অর্থায়ন যাতে না হয়, সে জন্য ড. ইউনূসের সঙ্গে তিনিও বিশ্বব্যাংকে গিয়ে কথা বলেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সত্যানুসন্ধানী কিংবা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে চান, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে প্রতিবেদন করতে চান, তাদের কোনো সমস্যা নেই। শুধু দেশ কিংবা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অসৎ উদ্দেশ্যে সংবাদ প্রকাশ করলে তাদের কড়াভাবে দেখা হবে। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে এত উদ্বেগ কেন? ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থচিন্তা থেকে বিবেচনা করলে হবে না। সমগ্র রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিবেচনা করতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কোনো বাধা হবে না।
মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে বেরিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, সম্পাদক পরিষদের তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। তাদের যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আছে, সেগুলো মন্ত্রিসভা বৈঠকে উত্থাপন করা হবে। কিন্তু অমুক সভায় উত্থাপন করব, এটা বলা হয়নি। তবে আলোচনা চলবে।