নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
আজ শুভ প্রবারণা। আজ (২৪ অক্টোবর) সারাদেশে শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত হবে। আষাঢ়ী পুর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পুর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাব্রত পালনের শেষ দিন এটি। প্রবারণা মানে ভুল-ত্রুটির নির্দেশ, আশার তৃপ্তি, অভিলাষ পূরণ ও ধ্যান শিক্ষা সমাপ্তি। সকল প্রকার ভেদাভেদ গ্লানি ভুলে গিয়ে কলুষমুক্ত হওয়ার জন্য ভিক্ষুসংঘ পবিত্র সীমা ঘরে সম্মিলিত হয়ে একে অপরের নিকট দোষ স্বীকার করেন।
আভিধানিক বিচারে প্রবারণার অর্থ হল বরণ করা। অর্থাৎ সকল প্রকার অকুশল বা পাপকর্ম বর্জন বা বারণ করে কুশল কর্ম বা পূণ্যকর্ম সম্পাদন বা বরণ করার শিক্ষা দেয় প্রবারণা।
প্রবারণা পুর্ণিমার পরদিন থেকে শুরু হয় মাসব্যাপী কঠিন চীবর দান। এ তিন মাস বৌদ্ধ ভিক্ষুরা নিরলসভাবে শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞার অনুশীলন করেন। বর্ষাব্রত বা বর্ষাবাস পালনের সময় (তিন মাস) প্রত্যেক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে এক জায়গায় বা বিহারে অবস্থান করতে হয়।
এ সময়ের মধ্যে বিশেষ কয়েকটি কারণ ছাড়া এক রাতের জন্যও নিজ নিজ বিহারের বাইরে থাকা যায় না। যদি কোন ভিক্ষু এ নিয়ম ভঙ্গ করেন তাহলে ওই ভিক্ষু কঠিন চীবর লাভ করতে পারেন না।
তিনমাস বর্ষাবাস শেষে নানা আনুষ্ঠানিকতায় দিবসটি পালন করা হলেও কক্সবাজারের রামু উপজেলায় বাঁকখালী নদীতে আয়োজন করা হয় জাহাজ ভাসা উৎসব।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) রামুর বাঁকখালী নদীতে অনুষ্ঠিত হবে এ উৎসব। এক সময় কক্সবাজারের চৌফলদন্ডী ও খুরুশকুলের রাখাইনরা এ উৎসবের আয়োজন করলেও কয়েক বছর ধরে শুধু রামুতেই এ উৎসব পালন করা হচ্ছে।
মহামতি বুদ্ধ রাজগৃহ থেকে বৈশালী যাওয়ার সময় নাগলোকের মহাঋদ্ধিমান (অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন) নাগেরা চিন্তা করলেন বুদ্ধপূজার এই দূর্লভ সুযোগ তারা হাত ছাড়া করবে না। সঙ্গে সঙ্গে নাগলোকের পাঁচশত নাগরাজ (জাহাজের মত), পাঁচশত ঋদ্ধিময় ফনা বুদ্ধপ্রমূখ, পাঁচশত ভিক্ষুসংঘের মাথার উপর বিস্তার করল।
এভাবে নাগদের পূজা করতে দেখে দেবলোকের দেবতারা, ব্রহ্মলোকের ব্রহ্মরা বুদ্ধকে পূজা করতে এসেছিলেন। সেই দিন মানুষ, দেবতা, ব্রহ্মা, নাগ সবাই শ্বেতছত্র ধারণ করে ধর্মীয় ধবজা উড্ডয়ন করে বুদ্ধকে পূজা করেছিলেন। বুদ্ধ সেই পূজা গ্রহণ করে পুনরায় রাজগৃহে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন তিনি। আর সেই শুভ সন্ধিক্ষণ ছিল শুভ প্রবারণা দিবস। মূলত এই হৃদয়ছোঁয়া চিরভাস্বর স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য বাংলাদেশের বৌদ্ধরা বিশেষ করে রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায় প্রবারণা দিবসে নিকটবর্তী র্বাঁকখালী নদীতে দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য খচিত কাগজী জাহাজ ভাসিয়ে প্রবারণা উৎযাপন করেন।
কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু জানান, সারাদেশের মত কক্সবাজার জেলাতেও ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীরে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত হচ্ছে।