অনলাইন ডেস্কঃ
গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনকে ‘সংবিধান প্রণেতা’ না বলার পক্ষে মত দিয়েছেন ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্বে থাকা বর্ষীয়ান রাজনীতিক ফজলে রাব্বী মিয়া।
রোববার সংসদ অধিবেশনে তিনি বলেন, “ড. কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর অনুকম্পায় সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সভাপতি হয়েছিলেন। সংবিধান প্রণয়নে তার মতো কমিটির অন্য সদস্যদেরও ভূমিকা রয়েছে।”
জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকীর এক অনির্ধারিত আলোচনার সূত্র ধরে সংসদে সভাপতির দায়িত্বে থাকা ফজলে রাব্বী একথা বলেন।
বিষয়টি সংসদে রেকর্ড রাখতে চান বলেও উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় পার্টিতে গিয়ে ফের আওয়ামী লীগে ফিরে আসা ফজলে রাব্বী।
তিনি বলেন, “আপনারা অনেকেই যাকে (ড. কামালকে) সংবিধানের রচয়িতা বলে থাকেন। সেই বিষয়ে আজকে একটি রিপোর্ট পড়েছি। সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদে ৩৪ সদস্যের একটি কমিটি হয়েছিল। জাতির জনক শেখ মুজিব ড. কামালকে সেই ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির চেয়ারম্যান বানিয়েছিলেন।
“সুতরাং ড. কামাল যদি নিজে বলেন বা কেউ যদি তাকে বলার চেষ্টা করেন- ‘যে তিনি সংবিধানের প্রণেতা‘। নো! আই ডোন্ট অ্যাকসেপ্ট ইট। দ্য পিপল শুড নট অ্যাকসেপ্ট ইট, দিজ পার্লামেন্ট শুড নট অ্যাকসেপ্ট ইট। সি ওয়াজ অনলি দ্য চেয়ারম্যান।
“সেখানে আরও ৩৪ জন লোক ছিলেন। তারা মেম্বর ছিলেন। তাদেরও সেখানে অবদান আছে। তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুর অনুকম্পার কারণেই সেই কমিটির চেয়ারম্যান হতে পেরেছিলেন। চেয়ারম্যান অন্য কোনো ব্যারিস্টারও হতে পারতেন। অন্য কোনো মাননীয় সংসদ সদস্যও হতে পারতেন।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সংবিধান প্রণয়নে গঠিত কমিটির চেয়ারম্যান কামাল বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন।
প্রায় দুই যুগ আগে আওয়ামী লীগ ছেড়ে গণফোরাম গঠনকারী কামাল সম্প্রতি বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে জোট গড়েছেন। এই জোটের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাকে ‘সংবিধান প্রণেতা’ হিসেবে পরিচেয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সংসদ ভেঙে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই জোটে বিএনপিও রয়েছে।
ফজলে রাব্বী বলেন, “ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে যে সমস্ত কথাবার্তা বলছেন। এটা বাংলার মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি ইতোমধ্যে নিন্দিত হয়েছেন।”
এর আগে অনির্ধারিত আলোচনায় তাহজীব বলেন, “ঐক্যফ্রন্টের নামে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ হয়েছে। তারা কেবল বিভ্রান্তিই ছড়াচ্ছে না, বরং তাদের কারণে দেশের রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে একটি বিরূপ ও নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছে।”
কামাল হোসেনকে ইঙ্গিত করে স্বতন্ত্র এই সংসদ সদস্য বলেন, “একজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব যিনি সংবিধানের অন্যতম প্রণেতাও বটে। উনার সারা জীবনের লালিত প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও উদারপন্থি রাজনৈতিক আদর্শ পরিত্যাগ করে ডানপন্থি মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক চেতনা লালনকারীদের সাথে জোট বেঁধেছেন।”
আ স ম আবদুর রবের প্রতি ইঙ্গিত করে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নূর ই আলম সিদ্দিকীর ছেলে তাহজীব বলেন, “নৈরাশ্যজনক হলো স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য, যিনি একদিন সারা বাংলার তরুণ সমাজকে উদ্বেলিত ও উজ্জীবিত করেছিলেন স্বাধীনতা লাভের অদম্য নেশায়, তিনি স্বাধীনতাবিরোধীদের ব্যবহার করছেন ক্ষমতায় যাওয়ার সিড়ি হিসেবে। জানি না উনি বিবেকের দংশন অনুভব করছেন কি না? ৩০ লাখ শহীদের আত্মা তাকে কোনোবে প্রভাবিত করছে কি না? একজন রাজনীতিবিদ কীভাবে একটা বিবেকহীন, আদর্শহীন, হতে পারে বোধগম্য নয়।”
ঐক্যফ্রন্টে সক্রিয় মইনুল হোসেনের খন্দকার মোশতাক আহমেদের দল ডেমোক্রেটিক লীগে এবং সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে থাকার বিষয়টি তুলে তাহজীব বলেন, “তিনি এখন সংসদীয় গণতন্ত্রের সবক দিচ্ছেন। তিনি এখন ঐক্যফ্রন্টেরও অন্যতম চালিকা শক্তি। তাহলে প্রশ্ন জাগে ঐক্যফ্রন্টের আসল উদ্দেশ্য কী?”
সূত্রঃ বিডিনিউজ