অনলাইন ডেস্কঃ
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধের বিচার চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার থাকলেও এই জোটের প্রধান দল বিএনপির ইশতেহারে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার ঘোষণার এক দিন বাদে মঙ্গলবার বিএনপি তাদের দলীয় ইশতেহার প্রকাশ করে।
কামাল হোসেনের উদ্যোগে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারের ৩৫ দফার মধ্যে ৩২তম দফায় ‘মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা’ অংশে বলা হয়েছিল, ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলমান থাকবে।
জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ভোট করার মধ্যে ইশতেহারে তাদের এই ঘোষণাকে ‘তামাশা’ আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, এটা ‘ভুতের মুখে রাম নাম’।
ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে থাকা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একদিন পর দলের যে ইশতেহার দিয়েছেন, তাতে জোটের ইশতেহারের সঙ্গে অনেক মিল পাওয়া গেলেও যুদ্ধাপরাধের চলমান বিচারের কোনো প্রসঙ্গ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় যাওয়ার পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করার পর তার বিরোধিতায় নামে বিএনপি।
ওই বিচারে বিএনপির সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, সাজা হয় আব্দুল আলীমসহ কয়েকজনের।
বিএনপির জোটসঙ্গী দল জামায়াতের শীর্ষনেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মো. মুজাহিদ, আব্দুল কাদের মোল্লা, মো. কামরুজ্জামান, মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। সাজা হয়েছে গোলাম আযম, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ কয়েকজনের।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের বেশ কয়েকজনের স্বজনদের প্রার্থী করেছে। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াত নিবন্ধন হারানোয় দলটির নেতাদের ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করার সুযোগও দিয়েছে।
বিএনপি নেতারা এতদিন বলে আসছিলেন, যুদ্ধাপরাধের চলমান বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তারা ক্ষমতায় গেলে ‘প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের’ বিচার করবেন।
কিন্তু ইশতেহারের যে অংশটি বিএনপি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সরবরাহ করে এবং মির্জা ফখরুল যতটুকু পড়েন, তাতে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি সম্পূর্ণ অনুপস্থিত ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে এনিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ফখরুল বলেন, “আমরা যা যা বলার এখানেই বলেছি। বাকিটা বিস্তারিতের মধ্য পাবেন। পুরো ইশতেহার আমাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে।”
বিকালে বিএনপির ওয়েবসাইট খুলে সেখানে ইশতেহার পাওয়া যায়নি। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, তাদের ওয়েবসাইট সরকার বন্ধ করে রেখেছে।
বিএনপির ইশতেহারে ‘মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা’ অংশে বলা হয়েছে, সকল মুক্তিযোদ্ধাকে ‘রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক’ ঘোষণা করা হবে এবং মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের নামে দুর্নীতির অবসান ঘটানো হবে।
মূল্যস্ফীতির নিরিখে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএনপি। দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা ও মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিত করে সেসব স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কথাও ইশতেহারে আছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি সঠিক তালিকা প্রণয়ন করা হবে এবং তাদের যথাযথ মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করা হবে।
বিএনপি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের কৃতিত্বের দাবি করে এলেও যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী করে তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়ার ঘটনাও তাদের আমলেই ঘটেছিল, যা শহীদদের প্রতি ‘চপেটাঘাত’ বলে যুদ্ধাপরাধের এক মামলার রায়ে বলা হয়েছিল।
সূত্রঃ বিডিনিউজ