সোয়েব সাঈদঃ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃংখলা বাহিনীসহ সহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কর্মব্যস্ততার সুযোগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে সরকারি বনাঞ্চল ও ব্যক্তি মালিকানাধিন বাগান থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন এবং পাচারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে প্রভাবশালী চক্র। সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাহান মার্মা এ সিন্ডিকেটের মূল হোতা। পাথর উত্তোলনের ঘটনায় ওই চেয়ারম্যানের ছেলে মং নাইচউ সহ এলাকার আরো একাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি জব্দ করা বিপুল পাথর পাচারের চেষ্টার এ খবরে এলাকায় জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ নভেম্বও কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সাইফুল আশ্রাব এর নেতৃত্বে একটি দল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ২৬৯ নং মৌজার মাছকুম ঝিরিতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪০ ট্রাক পাথর জব্দ করে। পরদিন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন কচি ওই এলাকায় গিয়ে পাথর উত্তোলনের সত্যতা পান। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, চেয়ারম্যান বাহান মার্মা ২৭২ নং জারুলিয়াছড়ি মৌজার ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলনের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি ২৬৯ নং মৌজার মাছকুম ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলন করছেন। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারিদের ছাড় দেয়া হবে না।
তবে নির্বাচনের আগমুহুর্তে পাথর পাচারের চেষ্টার বিষয়ে জানার জন্য গতকাল মঙ্গলবার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন কচি’র বক্তব্য নেয়ার একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সাইফুল আশ্রাব জানান, পাথর উত্তোলনের এ পরিবেশ বিধ্বংসী কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এরআগেও (৬ মার্চ) কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সাইফুল আশ্রাব সোনাইছড়ি ইউনিয়নের মাছকুম নামক ঝিরি ও ব্যক্তি মালিকানাধিন বাগানে সরেজমিন গিয়ে পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলনের দৃশ্য দেখতে পান। এসময় তিনি শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন। পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করেন। শ্রমিকরা পাথর উত্তোলনের কোন অনুমতি না থাকার কথা স্বীকার করেন। এসময় তিনি পাথর উত্তোলন না করার জন্য কর্মরত শ্রমিকদের নির্দেশ দেন। কিন্তু পরবর্তীতে পাহাড় উত্তোলন অব্যাহত ছিলো।
স্থানীয় এক বাগান মালিক জানান, মাটি খোদাই ও পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলনের কারনে তার কষ্টে গড়া ফলজ-বনজ গাছের বাগানটি এখন হুমকীর মুখে পড়েছে। যে কোন সময় পাহাড়ধ্বস সহ পরিবেশের অপূরনীয় ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া পাথর উত্তোলন অবৈধ এবং সরকারি সম্পদ আত্মসাতের শামিল।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন সোনাইছড়ি ইউনিয়ন ও পাশর্^বর্তী এলাকার ঝিরি, ছড়া ও পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন করছে চেয়ারম্যান বাহান মার্মার সিন্ডিকেট। অবৈধভাবে তোলা এসব পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পাথর উত্তোলন ও পাচারের ঘটনায় অভিযুক্ত সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহান মার্মা’র মুঠোফোনে (নং ০১৮২৪-৯৩০৯৫১) একাধিকবার কল করে সংযোগ বন্ধ পাওয়া গেছে। এছাড়া বাহান মার্মা’র ছেলে মং নাইচউ এর মুঠোফোনে (নং ০১৬২৮-৭০৮০৬৬) একাধিকবার কল করলেও তিনি কল ধরনেনি। ফলে তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
সোনাইছড়ি মৌজা হেডম্যান অং চিং থোয়ে জানান, ইউপি চেয়ারম্যান বাহান মার্মা ও তার ছেলের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন বিভিন্ন ঝিরি ও পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এভাবে নির্বিচারে পাথর উত্তোলনের কারনে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা করছেন তিনি।
জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়িসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অবৈধভবে পাহাড় কেটে ও মাটি খুঁড়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রভাবশালীরা পাহাড়ি অঞ্চলের বনজসম্পদ ধ্বংস করে লাখ লাখ টাকার পাথর উত্তোলন করছে। এতে পাহাড়ের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে পরিবেশ। অন্যদিকে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে এমন প্রমান এলাকাবাসীর কাছে নেই।
সরেজমিন দেখা গেছে, সোনাইছড়ি ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় কতিপয় বাহান মার্মার নেতৃত্বে স্থানীয় লোকজন দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে ঝিরি-পাহাড় কেটে ও মাটি খুঁড়ে পাথর উত্তোলন করছে। দীর্ঘদিন এভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে ঐসব পাহাড় ঝুঁকির মুখে পড়েছে। পাহাড় ধ্বসে ছড়া ও ঝিরিগুলো বন্ধ হওয়ার আশংকা রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাহাড়ের আনাচে-কানাচে, গভীর জঙ্গলে টিলা খুঁড়ে অথবা পাহাড়ের উপত্যকায় সমতল মাটিতে গভীর গর্ত খুঁড়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলিত বড় পাথরগুলো সেখানে ভাঙা হচ্ছে এবং ছোটগুলো ট্রাক-পিকআপ করে বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হবে। পাথর উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় লোকজন কোনো ধরনের প্রতিবাদ করতে পারেন না।