অনলাইন ডেস্কঃ
ভোটের এক দিন আগেও বিএনপি-জামায়াত জোটের ষড়যন্ত্রের শঙ্কার কথা জানাল আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার একাদশ সংসদের প্রচার শেষের পর সংবাদ সম্মেলন করে এই আশঙ্কার কথা জানায় ক্ষমতাসীন দলটি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “নৌকার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্ট নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।”
ষড়যন্ত্রের রকম ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ভুয়া ব্যালট ছাপিয়ে ভুয়া বুথে সিল মারার ভিডিও ইন্টারনেটে তুলে দেওয়া হতে পারে, আওয়ামী লীগের ব্যাজ-গেঞ্জি পরে অঘটন ঘটানো হতে পারে।
“এই ব্যাপারে আমরা সজাগ এবং দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি,” বলেন নানক।
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপি এবারের নির্বাচনে এলেও তাদের প্রার্থীদের প্রচারে কম নামাসহ নানা আচরণ দেখিয়ে ষড়যন্ত্রের সন্দেহের কথা বলে আসছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
তবে বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, তাদের প্রচারে নামতেই দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। তাদের উপর হামলার হচ্ছে, পুলিশ আবার তাদেরই গ্রেপ্তার করছে।
বিপরীতে সারাদেশে নৌকার প্রার্থীদের উপর হামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন নানক। বৃহস্পতিবার সিলেটে কাওসার আহমেদ নামে একজনকে পিটিয়ে হত্যা, আটটি আওয়ামী লীগ অফিসে ও গাড়িবহরে হামলা, দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল ইসলামকে কুপিয়ে জখম করার তথ্য জানান তিনি।
নানক বলেন, “এখন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা ছয়জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। তাদের হামলায় ৪৪৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে, ১৭৮টি আওয়ামী লীগ অফিস, গাড়ির বহর ও নির্বাচনী কেন্দ্র ভাংচুর হয়েছে, ৫৮টি বোমা হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, ৮৮টি অফিস ও যানবাহনে আগুন দিয়েছে।
সারাদেশে ৫৪টি জেলার ১৭০টি আসনে বিএনপি-জামায়াতের হাতে আওয়ামী লীগ আক্রান্ত হয়েছে বলে দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
নির্বাচন বানচালের জন্য নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টার পেছনে তারেক রহমানের হাত রয়েছে দাবি করে নানক বলেন, “তারা সংঘবদ্ধভাবে গেরিলা কায়দায় ভোট কেন্দ্র দখলের হুমকি দিয়েছে।
“পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ব্যাপক সহিংসতা, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটিয়ে ভীতি সঞ্চারের চক্রান্ত চালাচ্ছে। ভুয়া ব্যালট পেপার ছাপিয়ে ও নকল বুথ বানিয়ে সিল মারা নকল ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার গুজব ছড়ানোর নীলনকশা করছে।”
নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে বিএনপি-জামায়াতের ‘হাজার হাজার সদস্য’ নামানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খানের স্ত্রীর সংস্থা খান ফাউন্ডেশন, শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রহমানের ডেমোক্রেসি ওয়াচ, বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিষদ, বগুড়ার লাইটহাউসকে নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
সেনাবাহিনীকে নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে নানক বলেন, “সেনাবাহিনী মোতায়েন করায় বিএনপির নাশকতা পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় বিএনপি নেতারা এখন সেনাবাহিনীকে নিয়ে নানা ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্য করতে শুরু করেছে।”
ধানমণ্ডির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে নানকের সঙ্গে ছিলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক প্রমুখ।
এদিকে সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল ইসিতে গিয়ে অভিযোগ করেছে, বিএনপি-জামায়াত বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি করতে চাইছে।
প্রতিনিধি দলের প্রধান আকতারুজ্জামান নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য বিএনপি-জামায়াত চক্র নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য রয়েছে যে এই ষড়যন্ত্রে তাদের মূল সহযোগী হচ্ছে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই।”
নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি জোট সারাদেশে নৈরাজ্য, সন্ত্রাস ও সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে ইসিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
সেইসঙ্গে নিজেদের জয়ের আশাবাদ প্রকাশ করে আকতারুজ্জামান বলেন, “আমরা উদ্বিগ্ন, কিন্তু আমরা কনফিডেন্ট। এদেশের নিরঙ্কুশ জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন নিয়ে আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত।”
সূত্রঃ বিডিনিউজ