অনলাইন ডেস্কঃ
সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত উচ্চপদস্থ কোনো কর্মকর্তার অবসরের দুই বছরের মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগদানে নিষেধাজ্ঞা আসছে। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের নিকটাত্মীয়রা ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো দরপত্র, নিয়োগ, ফার্মের কোনো কাজে অংশ নিতে পারবেন না। আত্মীয়দের মধ্যে তাদের ছেলেমেয়ে, ভাই ও স্ত্রী রয়েছেন। এমনকি বিচারপতি বাবা আইনজীবী সন্তানের মামলা শুনানি করতে পারবেন না। সচিবের স্ত্রীও স্বামীর অনুমোদনে পাওয়া কোনো কোম্পানির পরিচালক হতে পারবেন না। এমন বিধান রেখে ‘স্বার্থ সংঘাত প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১৮’-এর খসড়া প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন, ২০০৪ এর তফসিলভুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছে দুদক। আইনটি সম্পর্কে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত নেওয়া হচ্ছে। পরে তা অনুমোদনের জন্য নতুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
এ ব্যাপারে দুদকের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, নতুন আইনটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। দুর্নীতির বহুমাত্রিকতার সঙ্গে বিদ্যমান আইন সমান তালে চলছে না। যে কারণে অনেক ক্ষেত্রে অপরাধ করেও আইনে সুনির্দিষ্ট কিছু না থাকায় শাস্তির আওতায় আনা যাচ্ছে না। সে কারণেই নতুন আইন করা হচ্ছে। এটি দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তে ব্যবহার করা হবে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে- দুদকের উপপরিচালকের নিচে কোনো পদমর্যাদার ব্যক্তি এই আইনের অধীনে সংঘটিত দুর্নীতিগুলো তদন্ত করতে পারবেন না। সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত এ আইনের অধীন অপরাধের বিচার করতে পারবেন। কোনো ব্যক্তি ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনের জন্য এ আইন লঙ্ঘন করলে তাকে সর্বোচ্চ ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা অপরাধের গুরুত্ব অনুসারে উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর বিধানে যা-ই থাকুক না কেন, এ আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধগুলো আমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য হবে। আইনের ৪, ৫, ৬, ৮ ও ১০ ধারার যে কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে, লঙ্ঘনে সহায়তা করলে তাকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এ ছাড়া আইনের ১১, ১২, ১৩ ধারার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে, লঙ্ঘনের উদ্যোগ গ্রহণ করলে তাকে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এ আইনে শাস্তির কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই- এমন কোনো ধারা বা বিধান লঙ্ঘন করলে তাকে সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
প্রস্তাবিত খসড়া আইনে বলা হয়েছে- স্বার্থ সংঘাত বলতে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর নিয়োজিত পরামর্শক বা উপদেষ্টারা তাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনকালে অপর কোনো ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান ব্যক্তিস্বার্থ রয়েছে, যা ওইসব ব্যক্তি দায়িত্ব পালনকালে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করতে পারেন অথবা আস্থাহীনতা ঘটান অথবা অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের অবৈধ বা পরোক্ষ লাভের কারণ হন। এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- যদিও কোনো স্বার্থ সংঘাত থেকে কোনোরূপ অনৈতিক বা অন্যায় ফলাফল উদ্ভূত না হয়, এর পরও সেটি এ আইনের অধীন স্বার্থ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ‘ক’ একটি প্রকল্পে নিয়োজিত থাকাকালীন তার পুত্র ‘খ’ ওই প্রকল্পের টেন্ডারে অংশ নিয়েছেন। যদিও ‘খ’ টেন্ডারে অংশ নিয়ে কাজ পাননি। তার পরও ‘ক’-এর বিরুদ্ধে এই আইনের আওতায় স্বার্থ সংঘাতের অভিযোগ আনা যেতে পারে।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, ‘ক’ এনবিআরের চেয়ারম্যান থাকাকালীন বিভিন্ন এনজিওকে কর অবকাশ প্রদানের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করেন। তিনি অবসরে যাওয়ার ১৫ মাস পর একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন, যা তার পূর্বে প্রণীত নীতিমালায় কর অবকাশ পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে ‘ক’-এর ওই নিয়োগে স্বার্থ সংঘাত বিরাজ করবে। ব্যক্তিস্বার্থ বলতে কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি তার সঙ্গে সম্পর্কিত বা তার অধীনস্থ ছিল এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো স্বার্থ, যা ব্যক্তিগত আর্থিক, বাণিজ্যিক মুনাফা অথবা অন্য কোনো সুবিধা সম্পর্কিত, সম্পর্কযুক্ত কোনো ব্যক্তি বা করপোরেশন বা সংস্থাকে দেওয়া আর্থিক, বাণিজ্যিক অথবা অন্য কোনো সুবিধাকে বোঝাবে।
সূত্রঃ সমকাল