অনলাইন ডেস্কঃ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ের পর টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সোমবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ৩টায় এই নতুন মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু কারা থাকছেন এই মন্ত্রিসভায়, তা নিয়েই চলছে আলোচনা।
নতুন মন্ত্রিপরিষদে কারা স্থান পাচ্ছেন সে বিষয়ে বিভিন্ন মহলের গুঞ্জনের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, এবারের মন্ত্রিসভায় চমক আনবেন শেখ হাসিনা।
দলের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনিই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। আমাদের কারও মাথা ঘামানোর সুযোগ নাই।
তবে সূত্র আরও জানিয়েছে, টানা দুই মেয়াদে সফলভাবে দায়িত্ব পালনের পর তৃতীয়বারের মতো শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে চতুর্থবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়বেন তিনি। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার নতুন মন্ত্রিসভায় পরীক্ষিত সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি তরুণ কিছু মুখও আনতে চান।
তবে গণভবন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র যারা সরকারেও নাই, দলেও নাই কিন্তু শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ; এমন কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার উন্নয়নের পাশাপাশি অধিকতর সুশাসনের ওপর বেশি নজর দেবেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ের পর গঠিত বর্তমান সরকারের যে মন্ত্রীরা গত পাঁচ বছরে কিছু কাজের মাধ্যমে সরকারকে বিব্রত করেছেন, সমালোচনায় ফেলেছেন, তারা নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন না- এটি এক প্রকার চূড়ান্ত। আবার অনেকেই আছেন যাদের বয়স হয়ে গেছে কিন্তু মাটি ও মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং দলের জন্য নিবেদিত এমন কয়েকজন মন্ত্রীও নতুন করে আর সরকারের থাকছেন না।
আরও জানা গেছে, যারা নিজ মন্ত্রণালয়ের কিছু জটিল সমস্যা নিজেরা সুরাহা করতে পারেননি, এবারের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ছেন তারা। কাজেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ থেকে এমন কয়েকটি ক্যাটাগরিতে বাদ পড়ছেন কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। একই সঙ্গে এবারের সরকারে যুক্ত থাকছেন না মহাজেটভুক্ত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। তারা এবার সংসদে প্রধান বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করবেন। একারণেও বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাদ পড়ছেন জাতীয় পার্টির একজন মন্ত্রী ও দুজন প্রতিমন্ত্রী। তবে মহাজোটের শরিক দল হাসানুল হক ইনুর জাসদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি-জেপি ও রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধি হয়তো থাকছেন নতুন মন্ত্রিসভায়।
সূত্রটি জানিয়েছে, চতুর্থবারের মতো শপথ নিতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রিপরিষদে এবার নতুন যুক্ত হচ্ছেন তারা; যারা সৎ, সাহসী, দক্ষ ও পরীক্ষিত। একই সঙ্গে শিক্ষিত তরুণ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির, কোথাও কোনও বদনাম নাই। সংসদ সদস্য হিসেবেও যাদের কোনও দুর্নাম নাই। এমন কয়েকজন সংসদ সদস্য প্রথমবার নতুন মন্ত্রিসভায় যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে। আবার একই সঙ্গে যারা দলের জন্য বিভিন্ন সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন অথচ তারা সংসদ সদস্য নন, এমন নেতাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হিসেবে সভায় স্থান দিতে পারেন শেখ হাসিনা। মেধা ও দক্ষতার সংমিশ্রণে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করতে চান তিনি। মাঠ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নতুন সংসদ সদস্যও এবারের মন্ত্রিসভায় যুক্ত হবেন, যারা দলের ও সরকারের আগামী দিনের প্রতিনিধিত্ব করবেন। মোট কথা সরকারের দক্ষ মন্ত্রী ও দক্ষ নেতা হিসেবে এদের গড়ে তুলতে চান প্রধানমন্ত্রী। তবে দলের ত্যাগী ও নিবেদিত প্রাণ নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা এবার মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন, যা চূড়ান্ত।
সূত্রটি জানায়, এবারের মন্ত্রিসভার গঠন নিয়ে যারা ইতিবাচক আলোচনায় রয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, টাঙ্গাইল-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনি, চাঁদপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম আগেও মন্ত্রী ছিলেন।
একেবারেই নতুনদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন নেত্রকোনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য অসিম কুমার উকিল, চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মইনুদ্দিন খান বাদল, সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য একে আব্দুল মোমেন, পিরোজপুর-১ আসনের শ ম রেজাউল করিম, চাঁদপুর-৪ আসনের শফিকুল রহমান, দিনাজপুর-২ আসনের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শরীয়তপুর-২ আসনের এনামুল হক শামীম, রংপুর-৪ আসনের টিপু মুনশি, নাটোর-৪ আসনের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, ঠাকুরগাঁও-২ আসনের দবিরুল ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস।
নতুন মন্ত্রিপরিষদে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনায় আরও যাদের নাম ইতিবাচক তালিকায় রয়েছে বলে জানা গেছে তারা হলেন চট্টগ্রাম-৯ আসনে সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের হাবিবে মিল্লাত, নওগাঁ-৬ আসনের ইসরাফিল আলম, গাজীপুর-২ আসনের জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর-৪ আসনের সিমিন হোসেন রিমি।
তবে মন্ত্রিসভা গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপরই নির্ভর করছে বলেও জানা গেছে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবার চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে নির্বাচনে জিতে ১২ জানুয়ারি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা।
সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন