জেষ্ট্য প্রতিবেদক,আমাদের রামু:
পঞ্চমধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রামুর উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতে আওয়ামীলীগ প্রার্থীরা হেরেছে দলটির বিদ্রোহীর কাছে। অপর একটি ইউনিয়নে জয় পেয়েছে বিএনপি’র প্রার্থী।
এদিকে নৌকার ভরাডুবির কারণ হিসাবে দলীয় কোন্দল এবং প্রার্থী নির্বাচন সঠিক না হওয়াকে দায়ী করছেন খোদ দলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, রামুর আওয়ামী রাজনীতিতে দুইভাইয়ের কোন্দল এবং তৃণমূলে প্রার্থীর যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা যাচাই-বাছাই না করে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে। যে কারণে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে।
রামু উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, গত ২৮ মে অনুষ্ঠিত পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে গর্জনিয়ায় আনারস প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ নজরুল ইসলাম,কাউয়ারখোপে ঘোড়া প্রতীকের মোস্তাক আহম্মদ,রশিদ নগরে আনারস প্রতীকের এম ডি শাহা আলম,ঈদগড়ে আনারস প্রতীকের ফিরোজ আহম্মদ ভুট্টো ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আবু ঈসমাইল মো.নোমান বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
রামু উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা মো.সালাহ উদ্দিন জানান, রামুতে নৌকা হেরেছে ঠিক। কিন্তু আওয়ামীলীগ তো জিতেছে। আওয়ামীগ জিতলেও দলীয় প্রার্থী তো জিতেনি ? এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুলত দলীয় কোন্দল এবং প্রার্থী নির্বাচন সঠিক না হওয়ায় এ ভরাডুবি।
রামু উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইউনুচ রানা চৌধুরী বলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগ নয়,তৃণমূলে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বা ইউনিয়নে যারা প্রার্থী নির্বাচন করেছে তা সঠিক হয়নি। এছাড়াও দলের একটি বিশেষ গৌষ্ঠী দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের নানা ভাবে সহযোগিতা করায় নৌকা পরাজিত হয়েছে।
রামু উপজেলা আওয়ামীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম মন্ডল বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের বিরোধিতার কারণে বর্তমানে রামুতে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক অবস্থাও নড়বড়ে হয়ে গেছে। আওয়ামীলীগ থেকে যেসব প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের বিরোধিতা অন্যদিকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় এমপি। যে কারণে নৌকা প্রতীকের এ অবস্থা।
কিন্তু লোকজন বলছে এমপি তো এ নির্বাচনে মাঠে ছিলেন না, অন্যদিকে নির্বাচনও সুষ্ঠু,নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ হয়েছে,তাহলে তিনি (এমপি) কিভাবে প্রভাব বিস্তার করলেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এটা ঠিক কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য মোবাইলে নানাভাবে এলাকায় প্রভাব খাটিয়েছেন তাই নৌকা হেরেছে।
তবে এ ধরনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে রামু উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়া বললেন ভিন্ন কথা। তাঁর মতে, এলাকায় এবার যাদেরকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে,এরা সবাই জনবিচ্ছিন্ন। এলাকার ভোটারদের কাছে তারা কেউ গ্রহনযোগ্য ব্যাক্তি নন,জনপ্রিয়তাও নেই। এমনকি এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকায় ,যাদের কাছ থেকে এলাকাবাসী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে,এমন প্রার্থীদের নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে।
তিনি দাবি করেন,স্থানীয় সংসদ সদস্য,উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে যারা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামীলীগের হয়ে এলাকার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন,সেসব ত্যাগী এবং দলের জন্য নিবেদিত প্রাণকর্মীদের বঞ্চিত করে তৃণমূলে ভোটাভুটির নাম দিয়ে জনবিচ্ছিন্ন লোকজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে,যে কারণে পাঁচটির মধ্যে পাঁচটিতে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কাউয়ারখোপে যাকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে শফিউল আলম তিনি কোনোদিন আওয়ামীলীগ করেননি। সারাজীবন করেছেন জাতীয় পার্টি। গর্জনীয়ার নৌকার প্রার্থী তৈয়বুল্লাহ চৌধুরী দিনে করেন জাসদ আর রাতে বিএনপি। ঈদগড়ের প্রার্থী নুরুল ইসলাম বাঙ্গালী একজন সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধা হলেও চেয়ারম্যান থাকাকালে তিনি নানা অপকর্মের জন্ম দিয়েছেন,অনেক নিরীহ মানুষকে মামলায় জড়ানোর কারণে এলাকায় তাকে মামলাবাজ হিসেবে চেনেন। এলাকার মানুষ তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও রশিদ নগরসহ অন্য ইউনিয়নগুলোতে দেখা যাবে একই চিত্র।
তবে উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্রসঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, তাদের নিজের দোষ ঢাকার জন্য তারা এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্ঠা। জনগণের কাছে গ্রহনযোগ্য,দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ তারা এমন প্রার্থীকে বাদ দিয়ে জনবিচ্ছিন্ন মানুষকে নৌকার মনোনয়নের জন্য পাঠিয়েছেন। তারা নৌকা প্রতীক পেয়েছেনও। আমি কেন বলবো,ভোটাররাই বুঝিয়ে দিয়েছেন তাদের প্রার্থী নির্বাচন সঠিক হয়নি এবং এমন অভিযোগও আছে প্রার্থীর কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে তারা (উপজেলা আওয়ামীলীগ) মনোনয়নের জন্য পাঠিয়েছেন।
অন্যদিকে রামু উপজেলা নির্বার্হী অফিসার সেলিনা কাজী বলেন, এ নির্বাচনকে শতভাগ সুষ্ঠু,নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রাণপন চেষ্ঠা ছিল এবং আমরা সফল হয়েছি। সবাই তা দেখেছে। আমি বলতে পারি কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া আমরা শতভাগ সফল। সম্পূর্ণ দলীয় প্রভাবমুক্ত এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আমরা করতে পেরেছি।