লাইফস্টাইল ডেস্কঃ
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার নিয়ে কত কথাই-তো প্রচলিত আছে। যা অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক না।
পুষ্টিবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে দুধ নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণার সঠিক দিকগুলো এখানে দেওয়া হল।
প্রচলিত ভুল:
সর তোলা দুধ স্বাস্থ্যোপকারী।
আসল বিষয় হল:
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যারা ‘ফুল ফ্যাট’ দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার সঙ্গে হৃদরোগ কিংবা ডায়াবেটিস হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
এমনকি পূর্ণ ননিযুক্ত দুধ অতিরিক্ত স্থূল হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারে। কারণ ননিযুক্ত দুধ খেলে পেট ভরা থাকে বেশিক্ষণ। ফলে অন্যান্য খাবার খাওয়া কম হয়। আবার স্বল্প ননিযুক্ত দুধ থেকে ভিটামিন ‘এ’, ‘ডি’ এবং ফ্যাটি অ্যাসিড শরীর সহজেই শোষণ করতে পারে।
তথ্যগুলো জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস লোওয়েল’এর নিউট্রিশনাল এপিডেমিওলজির অধ্যাপক ড. ক্যাথরিন টকার।
প্রচলিত ধারণা:
দুধ ঠাণ্ডা বাড়ায়।
আসল বিষয়:
সর্দি কাশিতে দুধ খেলে মোটেই ঠাণ্ডার প্রকোপ বাড়ায় না। এটা মানসিক ব্যাপার। যারা বিশ্বাস করেন দুধ থেকে ঠাণ্ডা লাগার পরিমাণ বাড়ে তাদেরই শ্লেষ্মা-কাশির পরিমাণ বাড়তে দেখা যায়। যারা দুধ খেয়ে অভ্যস্ত বা দৈনিক খাদ্যতালিকায় দুধ রয়েছে তারা এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ জানাননি। এরকমই তথ্য পাওয়া গিয়েছে সুইজারল্যান্ডের গবেষকদের গবেষণায়।
প্রচলিত ধারণা:
বেশি দুধ গ্রহণ মানে শক্ত হাড়।
আসল বিষয়:
দুধের সঙ্গে যখন হাড়ের বিষয় চলে আসে তখন মিশ্র ফলাফল পাওয়া যায়। কারণ ধারণা করা হয় দুধের ক্যালসিয়াম হাড়ের গড়ন মজবুত করে।
তবে বিএমজে মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় জানানো হয়, মধ্যবয়স্কদের মধ্যে যারা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেন বা যারা দৈনিক খাবার থেকে বেশি ক্যালসিয়াম পান তাদের সঙ্গে কম ক্যালসিয়াম যাদের রয়েছে তাদের হাড় ভাঙার হারের তেমন কোনো পার্থক্য নেই।
“হাড় ভাঙার ঝুঁকি কমানোর সঙ্গে দুগ্ধজাত খাবার থেকে পাওয়া ক্যালসিয়ামের কোনো সম্পর্ক নেই এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে দুগ্ধজাতীয় খাবার থেকে পাওয়া ক্যালসিয়াম গ্রহণের পরিমাণ বাড়িয়েও হাড় ভাঙার ঝুঁকি কমানো যায়নি।”
গবেষণায় আরও বলা হয়, “ক্যালসিয়াম গ্রহণের সঙ্গে হাড় ভাঙা রোধ করার বিষয়টা দুর্বল ও সামঞ্জস্যহীন।”
প্রচলিত ধারণা:
অধিকাংশ মানুষ ল্যাক্টোজ হজম করতে পারেন না।
আসল বিষয়:
যত গ্রহণ করবে তত বেশি দুধ সহ্য করবে দেহ। এমনকি যাদের ল্যাক্টোজ হজমে সমস্যা হয় বলে ধারণা করেন তাদের ক্ষেত্রেও খুব কমই দুগ্ধজাতীয় খাবার হজমে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
বিষয়টি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা’র পারডুয়ে ইউনিভার্সিটির পুষ্টিবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. ডেনিস সাভাইনো।
তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে ল্যাক্টোজ হজম বিষয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন।
তার কথায়, “দুধ কিংবা ল্যাক্টোজের সমস্যা আছে কিনা তো বোঝার জন্য এক কাপ দুধই যথেষ্ট। তবে বিষয় হচ্ছে দৈনিক দুধ গ্রহণের অভ্যাস করলে শরীর ল্যাক্টোজ হজমে অভ্যস্ত হতে থাকবে। তাই আপনি যদি ল্যাক্টোজ হজমের সমস্যায় ভোগার পরেও দুগ্ধজাতীয় খাবারের প্রতি আগ্রহী হন, তাহলে কোনো ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে এই ধরনের খাবার খাওয়ার সহ্যকর পরিমাপটা বের করে নিন।”
প্রচলিত ধারণা:
ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে ভালো উৎস দুধ।
আসল বিষয়:
এক কাপ দুধ থেকে দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদার ৩০ শতাংশ পূরণ করতে পারে। যদিও অন্যান্য খানিজ পাওয়া যায় দুধ থেকে। তবে শুধু মাত্র ক্যালসিয়ামের কথা ভাবলে আরও ভালো উৎস আছে।
যেমন- একটি কমলা থেকে দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদার ৩৫ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব কিংবা ৪৫ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব সয়া মিল্ক থেকে।
প্রচলিত ধারণা:
সব দুগ্ধজাত পণ্যই সমান ভিটামিন ও খনিজে পূর্ণ
আসল বিষয়:
পনির এবং ক্রিমের চাইতে দুধ ও দইতে পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে।
টকার বলেন, “ক্রিম এবং দুধের মাঝামাঝি জায়গায় রয়েছে পনির। এতে ক্রিমের থেকে বেশি খনিজ উপাদান থাকে। তবে দুধের সম-পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে না।”
পনির ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের ভালো উৎস। তবে এতে অত বেশি ভিটামিন ডি এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে না। কারণ চর্বি কাটিয়ে এটা তৈরি করা হয়।