অনলাইন ডেস্কঃ
বাংলাদেশে এখনও যারা মনে করেন নারীদের ‘ক্লাস থ্রি-ফোরের বেশি’ পড়ানো উচিৎ নয়, এখনও যারা নারীদের কেবল ঘরের কাজে দেখতে চান, তাদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধে’ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘বেগম বদরুন্নেসা আহমেদ ট্রাস্ট নারী সম্মাননা’ প্রদান অনুষ্ঠানে তার এই আহ্বান আসে।
নারীর অগ্রগতিকে দেশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হিসেবে বর্ণনা করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “সেইখানে যারা মনে করেন নারীর স্থান গৃহকর্মে, তাদের সাথে যুদ্ধ এখনও বাকি রয়ে গেছে। এই যুদ্ধে আমাদের অগ্রসর হতে হবে।”
শিক্ষায় অবদানের জন্য একুশে পদক আর সাহিত্যে অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া আনিসুজ্জামান বাংলাদেশে নারীর অগ্রগতির চিত্রটি তার বক্তৃতায় তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের নারীরা তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিক থেকে শুরু করে বিমানের দক্ষ পাইলট হিসেবেও কাজ করছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বলা যেতে পারে স্বর্গ-মর্ত্য জুড়ে তারা আছেন।”
কিন্তু তারপরও এ দেশে নারীর পথ যে খুব সুগম হয়নি- সে কথাও তিনি মনে করিয়ে দেন হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “এখনও আমাদের দেশে নারী শিক্ষার বিরোধী মানুষ আছেন। যারা বলেন যে, মেয়েদেরকে ক্লাস থ্রি-ফোরের বেশি পড়ানো উচিৎ না, পড়ালে তারা স্বামীর অবাধ্য হয়ে যায়। ২০১৯ সালে এটা আমরা শুনছি, এটা আমাদের কাছে অবাকই লাগে।”
কওমি মাদ্রসার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান আহমদ শফী চলতি বছরের শুরুতে হাটহাজারিতে এক মাহফিলে মেয়েদের বেশি পড়ালেখা না করানোর ওয়াদা করান।
এ নিয়ে সমালোচনা হলে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, তার বক্তব্য ‘ভুলভাবে’ প্রচার করা হচ্ছে। তিনি নারী শিক্ষার বিরোধিতা করেননি, আপত্তি করছেন ছেলে-মেয়ের একসঙ্গে লেখাপড়া করা নিয়ে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের এ অনুষ্ঠানে দেশের প্রথম নারী সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, প্রথম নারী স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রথম নারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবং প্রথম নারী মেজর জেনারেল সুসানে গীতিকে ২০১৯ সালের ‘বেগম বদরুন্নেসা আহমেদ ট্রাস্ট নারী সম্মাননায়’ ভূষিত করা হয়।
তাদের হাতে সম্মাননা স্মারক ও বই তুলে দেওয়ার পর তাদের অভিনন্দন জানিয়ে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “আজকে যারা সম্মাননা লাভ করল, তাদের দৃষ্টান্ত অন্য নারীর জন্য অনুপ্রেরণামূলক হবে। তারা দেশ ও জাতির উন্নয়নে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীও বলেন, এ সম্মাননা নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।
সম্মাননা গ্রহণ করে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ বিশ্বের যে কোনো সমাজের মতোই বিদ্যামান। কিন্তু আমাদের দেশের নারীরা সাহসিকতার সাথে সেগুলোর উত্তরণ ঘটিয়ে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অবদান রেখে যাচ্ছে। সেজন্য সকল নারীকে আমি সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানাই।”
আগামী দিনে নারীর পথচলা আরও মধুর ও সুন্দর হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহারা খাতুন বলেন, “পুরুষের সমান যেন নারীরাও হতে পারি, সেইভাবে আমরা কাজ করে যেতে চাই, লড়াই করে যেতে চাই।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরিন আহমেদের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বেগম বদরুন্নেসা আহমেদ ট্রাস্টের ট্রাস্টি মাহফুজা খাতুন, বাংলা রেকর্ডসের চেয়ারম্যান ও সাবেক কারা মহাপরিদর্শক ইফতেখার উদ্দিন বক্তব্য দেন।
সূত্রঃ বিডিনিউজ