আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে পুলিশি অভিযানে হয়রানির অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারা।
বুধবার বিকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যা ও জঙ্গিবাদ নিয়ে উৎকণ্ঠা দূরে করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় করে ১৪ দল।
সেখানে বক্তব্যে বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি অসীম রঞ্জন বড়ুয়া বলেন, “এখানে অনেকে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। আমি বলব, আমরা আসলেই ভীত। সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যায় যেমন আমরা ভীত, তেমনি সাঁড়াশি অভিযানের নামে পুলিশের নির্যাতনেও আমরা ভীত।”
গত দেড় বছরে দেশে ধারাবাহিকভাবে মুক্তমনা লেখক, অধ্যাপক, ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, হিন্দু পুরোহিত, বৌদ্ধ ভিক্ষু, খ্রিস্টান যাজক ও ভিন্ন মতাবলম্বী মুসলিম খুন হওয়ার প্রেক্ষাপটে জঙ্গি দমনে এক সপ্তাহের ‘সাঁড়াশি’ অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। চলতি মাসে ওই অভিযানের প্রথম চার দিনে ১১ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তারের কথা জানালেও পুরো অভিযানে কতোজনকে ধরা হয়েছে তা প্রকাশ করেনি পুলিশ।
এই সময়ে তাদের দুই জনকে গ্রেপ্তারের পর মুক্তির জন্য টাকা দাবি করা হয় বলে অভিযোগ করেন অসীম রঞ্জন বড়ুয়া।
তিনি বলেন, “কয়েক দিন আগে আমাদের সংগঠনের দুই জনকে পুলিশ ধরে নিয়ে এক লক্ষ টাকা দাবি করে। পরে সংগঠনের নেতারা ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের ছাড়িয়ে এনেছে।”
পুলিশি ‘হয়রানি’ বন্ধে ১৪ দল নেতাদের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের বলছি, পুলিশকে থামান।”
তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, “সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিন, আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির এই সদস্য বলেন, “এ দেশ, মাটি আপনার আমার, আমারা এদেশে জন্মগ্রহণ করেছি, তাহলে কেন ভয় পাবেন?
“আঘাত করে মানুষকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। ভয়কে জয় করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন।”
বক্তব্যে গুপ্তহত্যার জন্য একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও তাদের অনুসারীদের দায়ী করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, “একাত্তরের পরাজিত শক্তি, যাদের বিচার হচ্ছে, এই বিচারকাজ ব্যাহত করতে এই হত্যাকাণ্ড হচ্ছে।”
হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপির দিকেও অভিযোগের আঙুল তোলেন হানিফ।
পুলিশের ‘সাঁড়াশি’ অভিযানে ‘অনেক’ জঙ্গি ধরা পড়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “বিএনপি বুঝতে পেরেছে গুপ্তহত্যার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই তারা এখন জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছেন।”
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাসদের একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় পার্টির (জেপির) প্রেসিডিয়াম সদস্য সালাহ উদ্দিন, গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের হিওবাট গোমেজ,বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অশোক বড়ুয়া ও খ্রিষ্টান সোসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রলয় বাপ্পী বক্তব্য রাখেন।
[বিডিনিউজ]