ক্রীড়া ডেস্কঃ
আসলে ঘরোয়া খেলাধুলা বিশেষ করে ঢাকার ক্লাব ক্রীড়াঙ্গন দর্শক হারিয়েছে আগেই। শুধু ফুটবলে নয় ঢাকার হকি আর ক্রিকেট লিগ দেখতে দর্শক হয়না বেশ কয়েক বছর। অথচ এক সময় একটা গুরুত্বহীন ম্যাচেও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্যালারির একাংশ ভরে যেত। আর আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ হলে তো কথাই ছিল না। একবারে টান টান উত্তেজনা।
হোক তা ফুটবল, হকি কিংবা ক্রিকেট- মোহামেডান আর আবাহনী দ্বৈরথ মানেই ছিল বাড়তি আকর্ষণ। টান টান উত্তেজনা। অন্যরকম প্রতিদ্বন্দ্বীতা। ঐতিহ্য আর মর্যাদার লড়াই। গ্যালারিতে দু’দলের সমর্থকদের ঢল।
সাদা-কালো আর আকাশী-হলুদ জার্সির লড়াইয়ের ক’দিন আগে থেকেই উত্তেজনার পারদ ছড়াতো চারিদিকে। ভক্ত-সমর্থকরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তেন। নানা গুঞ্জন আর নানা জল্পনা-কল্পনায় মেতে উঠতো ক্লাব পাড়া।
আজ সে সবের ছিটেফোটাও নেই। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এখন আর ঢাকাই ক্লাব ফুটবল, ক্রিকেট আর হকিরই তেমন কোন আবেদন, গুরুত্ব নেই। মোহামেডান-আবাহনী দ্বৈরথতো বহুদুরে। ঐ ঐতিহ্য আর মর্যাদার লড়াই এখন এ যেন কল্পলোকের কাহিনী হয়ে পড়েছে। সেই দাদা-দাদি, নানা-নানির কাছ থেকে শোনা গল্পের মত।
এবারের প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের আগে আজ দু’দলের অনুশীলন আর ম্যাচের আগে মিডিয়ার সাথে দুই শিবিরের আনুষ্ঠানিক কথাবার্তায়ও ঘুরে ফিরে উঠলো সেই সোনালী দিনের প্রসঙ্গ। আবাহনী অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও বলেছেন, সব সময়ই শুনে আসছি আবাহনী-মোহামেডান অনেক প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ম্যাচ হয়।’
মাঠ দর্শকে ঠাসা না হোক, বাড়তি উত্তেজনা আর আকর্ষণ নাই থাক- মোহামেডান আর আবাহনী ম্যাচটির রয়েছে অন্যরকম গুরুত্ব। প্রিমিয়ার লিগে ষষ্ঠ রাউন্ডে আগামীকাল সোমবার শেরে বাংলায় আকাশী হলুদ ও সাদা কালোর লড়াইটি দুই দলের জন্যই সমান গুরুত্বপূর্ণ। আবাহনীর জন্য এটা শীর্ষস্থান ধরে রাখার ম্যাচ। আর মোহামেডানের জন্য কালকের ম্যাচ অবস্থান উন্নত করার ম্যাচ, সেরা ছয়ে থাকার লড়াই।
টানা চার ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলে এককভাবে সবার ওপরে থাকা আবাহনী পঞ্চম পর্বে প্রাইম ব্যাংকের কাছে হেরে শুধু অপরাজিত থাকার গৌরবটাই হারায়নি, পয়েন্ট টেবিলে অবস্থানও নড়বড়ে হয়েছে খানিকটা। এখন পয়েন্ট তালিকায় প্রাইম ব্যাংক, লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ ও প্রাইম দোলেশ্বর আবাহনীর সাথে সমান সমানে উঠে এসেছে।
এখন যৌথভাবে পয়েন্ট টেবিলে ওপরে থাকতে হলেও সোমবার আবাহনীর জয়ছাড়া পথ নেই। মোহামেডানকে হারাতে না পারলে ঐ তিন দলের যে কারো চেয়ে পিছিয়ে পড়বে মোসাদ্দেক, মাশরাফি সাব্বির সৌম্য, শান্তদের।
অন্যদিকে প্রথম তিন ম্যাচ জেতার পর লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ আর শেখ জামালের কাছে পরপর দুটি ক্লোজ ম্যাচ হারের পর রীতিমত সংকটে মোহামেডান। সুপার লিগ খেলতে হলে মানে সেরা ছয় দলে থাকতে হলে বাকি ছয় ম্যাচে অন্তত তিন জয় খুব জরুরি।
এখন রকিবুল বাহিনী সে প্রয়োজনীয় কাজটি করতে পারবেক কি না, সেটাই দেখার। কারণ আবাহনীকে হারানো সহজ কর্ম নয়। দল হিসেবে আবাহনী অনেক শক্তিশালী। ব্যাটিং-বোলিং লাইনআপ অনেক সমৃদ্ধ ও ব্যালান্সড।
সৌম্য, মিঠুন, নাজমুল শান্ত, মোসাদ্দেক আর সাব্বির রহমানদের সাথে আছেন ভারতের অভিজ্ঞ যোদ্ধা ওয়াসিম জাফর। আবাহনীর হয়ে শুধু ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে (৮) রান পাননি, এ ছাড়া বাকি দুই ম্যাচেই ‘বিগ ফিফটি (শাইনপুকুরের সাথে ৭৬ আর প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে ৯৪) উপহার দিয়েছেন ৪০ পাড় করা মহারাস্ট্রের এ অভিজ্ঞ ব্যাটিং যোদ্ধা।
এমনিতেই আবাহনীর ব্যাটিং অনেক সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী, তারওপর ওয়াসিম জাফরের মত অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের অন্তর্ভুক্তিতে ব্যাটিং গভীরতা বেড়েছে বহুগুণে। পেস আক্রমণটাও বেশ ধারালো। মাশরাফি, রুবেল আর সাইফউদ্দীন আছেন। স্পিনর ডিপার্টমেন্টটাও সমৃদ্ধ। দুই বাঁ-হাতি সানজামুল আর নাজমুল অপু আছেন সেখানে। বিয়ের কারণে হয়ত কালকের ম্যাচ খেলবেন না অফস্পিনার মেহেদি মিরাজ। তাহলে বোলিংটা হয়ে উঠতো আরও শক্তিশালী, তীক্ষ্ণ।
মোটকথা, আবাহনীর যে লাইনআপ, তাতে ব্যাটসম্যান ও বোলাররা নিজেদের নামের সাথে মিল রেখে পারফরম করলে মোহামেডানের পেরে ওঠা খুব কঠিন হবে। দল হিসেবে মোহামেডানও হেলা ফেলার নয়। বেশ ক’জন নামি পারফরমার আছে সাদা কালো শিবিরেও।
কিন্তু সে অর্থে কেউই জ্বলে উঠতে পারছেন না। অধিনায়ক রকিবুল প্রথম তিন ম্যাচের দু’টিতে ম্যাচ জেতানো ব্যাটিং করলেও পরের তিন ম্যাচে আর কিছু করতে পারেননি। ওপেনার আব্দুল মজিদ একাই রান করছেন। তবে খুবই স্লথ গতিতে। তার ইনিংসগুলো সে অর্থে দলের উপকতারে আসছে না তেমন। এছাড়া ইরফান শুকুর, নাদিফ চৌধুরী এবং মোহাম্মদ আশরাফুলও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। স্ট্রাইকরেট যত কমই থাকুক না কেন , আগের বার লিগে পাঁচ পাঁচটি সেঞ্চুরি করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন আশরাফুল। এবার কোনই খবর নেই। আগের ম্যাচে অবশ্য ৪৪ রান করেছেন।
মোহামেডানের বোলিংটা দিনকে দিন দূর্বল মনে হচ্ছে। পেসার শফিউল ছাড়া আর কারো বলে ধার নেই। অফস্পিনার সোহাগ গাজী চেষ্টা করছেন বল ও ব্যাট হাতে কিছু করতে। কিন্তু আলাউদ্দীন বাবু আর সাকলাইন সজিব সে তুলনায় নিষ্প্রভ। মোটকথা,যাদের ওপর নির্ভর করছে মোহামেডান- তারা পারফরম করতে পারছেন না।
ঘুরিয়ে বললে জ্বলে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। আর সে কারণেই মোহামেডান দিনকে দিন ক্ষয়িষ্ণু দলে পরিণত হয়েছে। দেখা যাক নিউজিল্যান্ড থেকে ফিরে প্রথম খেলতে নেমে লিটন দাস মোহামেডান ব্যাটিংয়ের মলিন আর চেহারায় জৌলুস ফেরাতে পারেন কি না?