অনলাইন ডেস্কঃ
পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। পাইকারি বাজারে এ অভিযান শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য খুচরা বাজারে অভিযান চলবে।
অভিযানে প্রথমে পাইকারি ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হচ্ছে। নির্দেশনা না মানলে জেল-জরিমানাসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে।
অভিযানের নেতৃত্ব দেন অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। সঙ্গে ছিলেন অধিদফতরের ঢাকা জেলা অফিসের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ফাহমিনা আক্তার, রজবী নাহার রজনী ও জান্নাতুল ফেরদাউস। বাজার অভিযানের সার্বিক সহযোগিতা করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ১ ও ১১ এর সদস্যরা।
অভিযান প্রসঙ্গে অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জাগো নিউজকে বলেন, প্রতি বছরই রমজান মাসে চাহিদা বেশি থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এর মধ্যে অন্যতম ছোলা, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, চিনি ও খেঁজুরসহ কয়েকটি পণ্য। এসব পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার মিল, আড়ত ও পাইকারি খুচরা বাজারে অভিযান চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে অধিদফতর।
তিনি জানান, এসবের অংশ হিসেবে আজ রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে অভিযান চালানো হয়। বাজারে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে ভোক্তা আইন অনুযায়ী মূল্যতালিকা ছিল না। প্রথমদিন পাইকারি ব্যবসায়ী ও তাদের নেতাদের ডেকে সতর্ক করা হয়। তারা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করছে। এটি তাদের দেখিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের সংশোধনের জন্য আগামী এক সপ্তাহ (৯ এপ্রিল পর্যন্ত) সময় দিয়েছি। নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনে জেল-জরিমানাসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার বিধান রয়েছে।’
ভোক্তা অধিদফতরের এ কর্মকর্তা জানান, আজ থেকে অভিযান শুরু হয়েছে। প্রতিদিন পর্যায়ক্রমে রাজধানীর অন্যান্য পাইকারি, খুচরা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হবে।
রমজান মাস আসতে আরও এক মাসের বেশি বাকি। এত আগে অভিযান কেন জানতে চাইলে অধিদফতরের উপ-পরিচালক বলেন, ‘খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজার ও আড়ত থেকে পণ্য নিয়ে বিক্রি করে। এখন যদি পাইকারি বাজারে দাম বাড়ানোর কারসাজি বন্ধ করা যায় তাহলে খুচরা বাজারে দাম বাড়বে না। খুচরা বাজারে দাম না বাড়লে রমজান মাসে পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায় রাখা সম্ভব হবে। এক মাস আগেই অভিযান চালােো হচ্ছে।’
‘আমরা আশা করবো পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কাজ করে- এমন সংস্থা ও বাহিনীও এখন থেকেই অভিযান পরিচালনা করবে। আমরা যদি সবাই একসঙ্গে কাজ করি তাহলে অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিতে পারবে না।’
এদিকে আসন্ন রোজার মাসে নিত্যপণ্যের দাম না বাড়াতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এই আহ্বান জানান তিনি। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী রোজায় চিনি, ডাল, ছোলার সমস্যা যেন না হয়। রমজানে দাম যেন বৃদ্ধি না পায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।’
ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যাপ্ত সরবরাহ ও দাম কম থাকায় এবার রমজানে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যে সমস্য হবে না। দামও বাড়বে না।
এ বিষয়ে শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত বণিক সমিতির সভাপতি হাজি মো. সাঈদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার এখন পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম বাড়েনি। সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে। আশা করছি রমজানে পেঁয়াজ, আদা, রসুনে কোনো সমস্যা হবে না। তবে দুর্যোগ কাউকে বলে-কয়ে আসে না। যদি কোনো দুর্যোগ বা আমদানি সরবরাহতে সমস্যা না হয় আশা করছি পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।’
ভোক্তার অভিযান প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, ‘তারা বাজার তদারকি করছে। এখানে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে মূল্য তালিকা ছিল না বলে তারা অভিযোগ করেছে। আমরা তাদের আশ্বাস দিয়েছি সবাই মূল্য তালিকা রাখবে। এ বিষয়ে অধিদফতরের কর্মকর্তারা আগামী মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসবে।’
অন্যদিকে, সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক মাসে পেঁয়াজের দাম ১০ শতাংশ বাড়লেও আমদানি পেঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ৩ এপ্রিল প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের বিক্রি হচ্ছে ২২-৩০ টাকা ও আমদানি পেঁয়াজ ২২-২৫ টাকা। এক মাস আগে দাম ছিল দেশি পেঁয়াজ ২২-২৫ টাকা আর আমদানি পেঁয়াজের ২২-২৫ টাকা।
এ ছাড়া দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা ও আমদানি রসুন ১০০-১১০ টাকা। আর আদা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১২০ টাকা।
সূত্রঃ জাগোনিউজ